somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কলকাতা দাঙ্গা এর ইতিহাস

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৪:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


'প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবসে'র দাঙ্গার পর কলকাতার রাজপথে ছড়িয়ে থাকা নিহতদের দেহ। স্বাধীনতার এক বছর পূর্বে ১৯৪৬ সালে কলকাতায় সংঘটিত এই দাঙ্গায় চার হাজারেরও বেশি নিরীহ হিন্দু এবং মুসলমান নিহত হয়েছিলেন।
কলকাতা দাঙ্গা বা প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবস ছিল ১৯৪৬ সালের ১৬ই অগস্ট তদনীন্তন ব্রিটিশ ভারতের বাংলা প্রদেশের রাজধানী কলকাতায় সংঘটিত একটি বহুবিস্তৃত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা এবং নরহত্যার ঘটনা। এই দিনটিই ছিল "দীর্ঘ ছুরিকার সপ্তাহ" ("The Week of the Long Knives") নামে পরিচিত কুখ্যাত সপ্তাহকালের প্রথম দিন।


১৯৪০ এর দশকে ভারতের গণপরিষদের দুটি বৃহত্তম রাজনৈতিক দল ছিল মুসলিম লিগ এবং ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস। ১৯৪৬ সালে ক্যাবিনেট মিশন ভারতীয় নেতৃবর্গের হাতে ব্রিটিশ ভারতের শাসনভার তুলে দেওয়ার প্রস্তাব রাখে। এই প্রস্তাবে একটি নতুন ভারত অধিরাজ্য এবং তার সরকার গঠনেরও প্রস্তাব জানানো হয়। এর অব্যবহিত পরে। একটি বিকল্প প্রস্তাবে হিন্দুপ্রধান ভারত এবং মুসলমানপ্রধান পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়। কংগ্রেস বিকল্প প্রস্তাবটি সম্পূর্ণত প্রত্যাখ্যান করে। এই প্রত্যাখ্যানের বিরুদ্ধে এবং একটি পৃথক মুসলিম রাষ্ট্র গঠনের দাবিতে মুসলিম লিগ ১৯৪৬ সালের ১৬ই অগস্ট একটি সাধারণ ধর্মঘটের হরতাল ডাক দেয়।
এ ইতিহাস থেকে বোঝা যায় মহাত্মা গান্ধী ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে প্রথম হরতাল শব্দটি ব্যবহার করেন।

এই প্রতিবাদ আন্দোলন থেকেই কলকাতায় এক ভয়ংকর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার জন্ম হয়।মাত্র ৭২ ঘণ্টার মধ্যে শহরে চার হাজারেরও বেশি সাধারণ মানুষ প্রাণ হারান ও এক লক্ষ বাসিন্দা গৃহহারা হন। কলকাতার দেখাদেখি দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে নোয়াখালী, বিহার, যুক্তপ্রদেশ অধুনা উত্তরপ্রদেশ পাঞ্জাব ও উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশেও। তবে সর্বাপেক্ষা ভীতিপ্রদ দাঙ্গার ঘটনা ঘটেছিল কলকাতা ও নোয়াখালীতে (অধুনা বাংলাদেশ রাষ্ট্রে)। এই ঘটনাই ভারত বিভাগের বীজ বপন করে।১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীনতা অর্জন করলে, কংগ্রেস দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়। সেই থেকে মূলত নেহেরু-গান্ধী পরিবারই কংগ্রেসকে নেতৃত্ব দান করতে থাকেন।


অন্যান্য দাঙ্গার তুলনায় সে দাঙ্গা কেন যে দিক দিয়ে স্বতন্ত্র তা হল এর সংগঠিত রূপ। দিন টিকে ব্যর্থ করতে উভয় পক্ষই সর্বাত্মক প্রস্ততি নিয়ে রেখেছিলেন। দাঙ্গা বিরোধে পুলিসের সক্রিয় ভূমিকা না রাখার জন্যে প্রধানমন্ত্রীকে অভিযোগ করা হয় অপরদিকে লীগ কর্মীদের খাবারের ব্যবস্থা করতে প্রায় ১০০০০ ব্যক্তির এক মাসের খাদ্য বরাদ্দ একবারেই তুলে রাখা হয় বলেও অভিযোগ করা হয়। আরেকদিকে মাড়োয়াড়ি ব্যবসায়ীরা বৃটিশ সৈন্যদের থেকে অস্ত্রশস্ত্র এবং গোলা বারুদ কিনেছে বলে রিপোর্ট আছে যেগুলো দাঙ্গার সময় ব্যবহার করা হয়। দাঙ্গা শুরুর বহু পূর্বে হিন্দু মালিকানাধীন ফ্যাক্টরী গুলোতে এসিড বোমা তৈরী করা ও মজুদ রাখা হয়। বল্লম এবং দেশীয় অস্ত্র তৈরীর জন্যে কলকাতার কামারদের প্রস্তুত রাখা হয়। প্রত্যেক পক্ষ থেকে যে হিংসাত্মক কার্যাবলী সংঘটিত হয় তাতেও পরিচালনার বৈশিষ্টসমুহ দৃশ্যমান। লুন্ঠিত মালামান কেন্দ্রীয় স্থানে আনা নেওয়ার জন্য মালগাড়ি ব্যবহার করা নিজ ধর্মালবলম্বী প্রতিষ্ঠানসমুহ এড়িয়ে চলা এবং পুলিসের দৃষ্টি এড়াতে উভয় পক্ষের কর্মীদেরই রেড ক্রসের ব্যাজ ব্যবহার করা ইত্যাদি কেন্দ্রীয়ভাবে পরিচালনারই প্রমাণ। শত্রুতার চরম মুহুর্তে বোধহয় একে অপরের কর্মপদ্ধতি দেখে শিক্ষা নিয়েছিল যেমনটা দেখা গিয়েছিল ষোলশতকে ফ্রান্সে ক্যাথলিক প্রটেস্টাণ্টদের দাঙ্গার সময়।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৪:১৪
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাছে থেকে আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৪৬

আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

২০০১ সালের কথা। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটা আন্তর্জাতিক দরপত্রে অংশ গ্রহণ করে আমার কোম্পানি টেকনিক্যাল অফারে উত্তীর্ণ হয়ে কমার্শিয়াল অফারেও লোয়েস্ট হয়েছে। সেকেন্ড লোয়েস্টের সাথে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সংস্কারের জন্য টাকার অভাব হবে না, ড. ইউনূসকে ইইউ

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



বুধবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে ঢাকার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ঢাকায় নিযুক্ত ইইউর রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার এবং সফররত এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিসের এশিয়া ও প্যাসিফিক বিভাগের পরিচালক পাওলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নারী বুকের খাতায় লিখে রাখে তার জয়ী হওয়ার গল্প (জীবন গদ্য)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৩২



বুকে উচ্ছাস নিয়ে বাঁচতে গিয়ে দেখি! চারদিকে কাঁটায় ঘেরা পথ, হাঁটতে গেলেই বাঁধা, চলতে গেলেই হোঁচট, নারীদের ইচ্ছেগুলো ডিমের ভিতর কুসুম যেমন! কেউ ভেঙ্গে দিয়ে স্বপ্ন, মন ঢেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্রী ও কুশ্রী পদাবলির ব্লগারদের টার্গেট আমি

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫



আমাকে জেনারেল করা হয়েছে ১টি কমেন্টের জন্য; আমার ষ্টেটাস অনুযায়ী, আমি কমেন্ট করতে পারার কথা; সেটাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে; এখন বসে বসে ব্লগের গার্বেজ পড়ছি।

সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×