somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লালদিঘি কলকাতার একটি ঐতিহাসিক জলাশয়

২২ শে আগস্ট, ২০১৬ সকাল ৭:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


লালদিঘি হলো পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতার বিবাদীবাগ অঞ্চলের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত একটি বৃহদাকার ঐতিহাসিক জলাশয়। এই দিঘির ইতিহাস কলকাতা মহানগরীর ইতিহাস অপেক্ষাও প্রাচীনতর। ব্রিটিশ যুগে এই জলাশয়টি ছিল শহরের অন্যতম মিষ্টি পানীয় জলের উৎস। বর্তমানে এই দিঘির উত্তর ভাগে মহাকরণের সম্মুখে রাজ্য সরকার একটি ভূগর্ভস্থ কার পার্কিং প্লাজা নির্মাণ করছেন।জব চার্নকের আগমনের পূর্বেই ডিহি কলিকাতা গ্রামে লালদিঘির অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়া যায়।লালদিঘির নিকর্টেই সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবারের একটি কাছারি এবং গৃহদেবতা শ্যামরায়ের মন্দিরটি অবস্থিত ছিল। অনুমান করা হয় দোলযাত্রা উপলক্ষে রং খেলার পর এই দিঘির জল লাল হয়ে উঠত বলে দিঘিটি লালদিঘি নামে পরিচিত হয়। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি উক্ত কাছারিবাড়িটি প্রথমে ভাড়া এবং পরে ক্রয় করে নিয়েছিলেন।অবশ্য লালদিঘির নামকরণ নিয়ে অন্য কাহিনিও প্রচলিত আছে। কারো কারো মতে পুরনো কেল্লার লাল রংটি এই দিঘির জলে প্রতিবিম্বিত হত বলে দিঘিটি লালদিঘি নামে পরিচিত হয়।আবার অন্যমতে জনৈক লালচাঁদ বসাক এই দিঘিটি খনন করিয়েছিলেন। তাই তার নামানুসারেই দিঘিটির নাম হয় লালদিঘি।নব্যভারত এ প্রাণকৃষ্ণ দত্ত এই দিঘির অন্য একটি ইতিহাসের বর্ণনা দিয়েছেন। আর তার মতে গোবিন্দপুরের মুকুন্দরাম শেঠ বা তার পুত্ররা এই দিঘি খনন করিয়ে থাকবেন। এই দিঘির ধারে তার কাছারি অবস্থিত ছিল। দোলের দিন রংখেলার পর দিঘির জল লাল হয়ে যেত বলে দিঘির নামকরণ হয় লালদিঘি।যা হোক ১৭০৯ সালে এই নোংরা শ্যাওলা এবং পানায় ভরতি পুকুরটির জল শোধিত করে এটিকে একটি মিষ্টি জলের জলাধারে পরিণত করা হয়।


মহাকরণ বা রাইটার্স বিল্ডিংস
পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতার বিবাদীবাগ অঞ্চলে লালদিঘির উত্তরেই এই ভবনটি অবস্থিত। ১৭৭০ সালে স্থাপিত ঐতিহাসিক রাইটার্স বিল্ডিংসের নকশা প্রস্তুত করেছিলেন টমাস লায়ন্স। ১৭৭৬ সালে লায়ন্স ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ইউরোপীয় কেরানিদের বসবাসের জন্য উনিশটি পৃথক অ্যাপার্টমেন্ট তৈরি করেন সেগুলি দেখতে ছিল সারিবদ্ধ দোকানের মতো। সেই কেরানিদের বলা হত রাইটার আর এদের নাম থেকেই ভবনের পূর্বতন নাম রাইটার্স বিল্ডিংস এর উদ্ভব। ১৮৮৯ সালে ভবনটি গথিক স্থাপত্যে। ভবনের সম্মুখভাগে করিন্থীয় স্থাপত্য নব্য রেনেসাঁ স্থাপত্যশৈলীর একটি উদাহরণ। প্রধান প্রবেশদ্বারের শীর্ষে ব্রিটানিয়ার একটি মূর্তিও স্থাপিত হয়।


ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে রাইটার্স বিল্ডিংসের নাম নানাভাবে জড়িত। ১৯৩০ সালের ৮ই নভেম্বর বিপ্লবী বিনয় বসু, বাদল গুপ্ত এবং দীনেশ গুপ্ত রাইটার্স বিল্ডিংসে এক দুঃসাহসিক অভিযান চালিয়ে কারাবিভাগের প্রধান এন. জি. সিম্পসনকে হত্যা করেন। সেই ঘটনার অব্যবহিত পরে ভবনের অলিন্দে নিরাপত্তারক্ষী ও পুলিশ বাহিনীর সঙ্গে বিপ্লবী-ত্রয়ীর যে সংঘর্ষ হয় তা "মহাকরণের অলিন্দ যুদ্ধ" নামে প্রসিদ্ধ। সংঘর্ষের শেষে গ্রেফতারি এড়াতে বাদল গুপ্ত সেখানেই আত্মহত্যা করেন। ১৯৪৭সালে স্বাধীনতালাভের পর রাইটার্স বিল্ডিংস পশ্চিমবঙ্গ সরকারের রাজ্য সচিবালয়ে পরিণত হয়। সে সময় বাংলায় ভবনটির নামকরণ হয় মহাকরণ। যদিও ইংরেজি নাম হিসেবে রাইটার্স বিল্ডিংস কথাটিই প্রচলিত। বর্তমানে মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয় পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য মহাফেজখানা সহ রাজ্য সরকারের একাধিক সরকারি বিভাগের প্রধান কার্যালয় মহাকরণে অবস্থিত।


অষ্টাদশ শতকে ট্যাঙ্ক স্কোয়ার বা লালদিঘি সংলগ্ন চত্বরটি ছিল শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত। এই দিঘির আয়তন ছিল প্রায় ২৫ একর। ডাচ অ্যাডমিরাল স্ট্যাভার্নিয়াস ১৭৭০সালে এই অঞ্চল পরিভ্রমণের পর লেখেনঃ সরকারের আদেশক্রমে কলকাতাবাসীদের শুদ্ধ এবং মিষ্টি পানীয় জল সরবরাহের উদ্দেশ্যে এই দিঘি খনন করা হয়। একাধিক জলের উৎস দিঘির জল সর্বদা সব স্তরে রাখতে সাহায্য করে। এটির চারিদিক রেলিং দিয়ে ঘেরা। তাই কেউ এই দিঘির জল ব্যবহার করতে পারে না। পূর্বে দিঘিটি আরও বড় ছিল। ওয়ারেন হেস্টিংসের আমলে দিঘিটি পরিষ্কার করে এর পাড় বাঁধিয়ে দেয়া হয়েছিল। এই দিঘির জল সেই সময় ছিল শহরের সবচেয়ে মিষ্টি জল। পৌরসংস্থার জল সরবরাহ পরিষেবা চালুর আগে এই দিঘিই শহরের ইউরোপীয় বাসিন্দাদের জলের চাহিদা মেটাত।
লালদিঘির যুদ্ধ
১৭৫৬ সালের ১৮ই জুন ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এবং বাংলার নবাব সিরাজদৌলার মধ্যে সংঘটিত লালদিঘির যুদ্ধে ইংরেজ বাহিনীর পরাজয় ঘটেছিল। তার ফলে কলকাতা ব্রিটিশদের হাতছাড়া হয়। ১৭৫৭ সালের ২৩শে জুন পলাশীর যুদ্ধের পর ইংরেজরা আবার শহরের দখল নিতে সক্ষম হয়।

"তথ্যসূত্র"=ইন্টারনেট
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে আগস্ট, ২০১৬ সকাল ৭:৫৯
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাছে থেকে আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৪৬

আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

২০০১ সালের কথা। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটা আন্তর্জাতিক দরপত্রে অংশ গ্রহণ করে আমার কোম্পানি টেকনিক্যাল অফারে উত্তীর্ণ হয়ে কমার্শিয়াল অফারেও লোয়েস্ট হয়েছে। সেকেন্ড লোয়েস্টের সাথে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সংস্কারের জন্য টাকার অভাব হবে না, ড. ইউনূসকে ইইউ

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



বুধবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে ঢাকার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ঢাকায় নিযুক্ত ইইউর রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার এবং সফররত এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিসের এশিয়া ও প্যাসিফিক বিভাগের পরিচালক পাওলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নারী বুকের খাতায় লিখে রাখে তার জয়ী হওয়ার গল্প (জীবন গদ্য)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৩২



বুকে উচ্ছাস নিয়ে বাঁচতে গিয়ে দেখি! চারদিকে কাঁটায় ঘেরা পথ, হাঁটতে গেলেই বাঁধা, চলতে গেলেই হোঁচট, নারীদের ইচ্ছেগুলো ডিমের ভিতর কুসুম যেমন! কেউ ভেঙ্গে দিয়ে স্বপ্ন, মন ঢেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্রী ও কুশ্রী পদাবলির ব্লগারদের টার্গেট আমি

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫



আমাকে জেনারেল করা হয়েছে ১টি কমেন্টের জন্য; আমার ষ্টেটাস অনুযায়ী, আমি কমেন্ট করতে পারার কথা; সেটাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে; এখন বসে বসে ব্লগের গার্বেজ পড়ছি।

সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×