কী নিঠুর দারিদ্র্য বিলাসে মেতেছো!
গাড়ি বাড়ি বহুতল অট্টালিকা ফেলে গড়েছো নিবাস
ছনে-ছাওয়া জীর্ণ কুটিরে।
এখানে ঝড়ের ঝাপটা, বৃষ্টির ছাট এসে
ভিজিয়ে যায় আভিজাত্যে ঢাকা তোমার অভিজাত দেহমন,
চৈত্র ও কার্তিকের রৌদ্র শুকিয়ে দেয়
বিত্ত-বৈভব, বিষয় আর বাসনার রসে সিক্ত অভিলাষী কায়া,
ছাউনির ফুটোপথে নিশিকান্ত কুঞ্জে এসে নিত্য নিয়ে যায় দুঃখ-সুখের খোঁজ।
কুটিরের পাশ ঘেঁষে সদাসর্বদা অতন্দ্র প্রহরীর মতো জেগে থাকা
কাশবন, নারকেল আর সুপারির সারি––
বাতাসের বাঁশিতে সুর তুলে সুমধুর গান শোনায় অহোরাত্র।
অবোধ, আবেগি সন্তানের মতো বক্ষোপরে মাথা রেখে
আকণ্ঠ আঁকড়ে ধরে থাকে লাউ, কুমড়ো আর শিমলতাদের বাহু।
নিগুঢ়-অন্ধকার রাত্তিরে সমস্ত আাকাশ তোমার ছাদ হয়ে আবির্ভুত হয়,
থাকেনা কংক্রিট গাঁথা চারদেয়ালের বাধা,
সমস্ত বিশ্বই তোমার সংসার তখন।
তারাদের ঝাড়বাতির আলোকসজ্জায় শোভিত হয় উঠোন তোমার,
মাঝে মাঝে মধ্যমনি হয়ে অবশ্রুত গান শোনায় পূর্ণিমা-চাঁদ।
এই নলখাগড়ার জীর্ণ-বেড়ার বিপরীতে গড়ে তুলেছো শহুরে সভ্যতা;
সাজিয়েছো বিলাসের বাড়াবাড়ি।
স্মার্ট টিভি, স্মার্ট ফোন, কম্প্যুটার ল্যাব–––
সেখানে বসে তুমি অবলোকন কর গ্রহ-উপগ্রহ আর জ্যোতিষ্কদের আনাগোনা,
বিশ্বের দূরতম দূর হতেও নিয়ন্ত্রণ করো তোমার তোমার ঘরদোর-সংসার
আইফোনে-আঙুলের ইঙ্গিতে।
মার্সিডিজ, বিএমডাব্লিউ, ইনফিনিটি, পরশি পেনারোমা তোমার আধুনিক গতিময়-বোররাক।
সুইমিং পুলের নীল জলে পৃথিবীটাকে মনে হয় স্বপ্নময়-নীল।
শরীরের কলকব্জা অটুট রাখতে বানিয়েছো অযুত যন্ত্র দিয়ে জিমনেসিয়াম,
গেমরুম, বলরুম, টেনিস কোর্ট মিলে সুবিশাল অন্দরমহল,
সজ্জা কক্ষ, শয়ন কক্ষ মিলে এলাহি কারখানা।
সেখানে বসেই তুমি স্বাদ নাও পাস্তা, পোস্ত, চায়নিজ আর শহুরে পিজ্জার
প্রয়োজন-অপ্রয়োজনে উড়ে চল কপ্টারে-জেটপ্লেনে,
দূর-দূরান্ত পাড়ি দাও চোখের পলকে।
কী অভিলাষে তোমার এ দারিদ্র্য-বিলাস!
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জানুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৪:২৪