আমাদের বাড়ি বেড়াতে এসে
যেদিন ছল করে জল চাইতে গিয়ে থতমত করে তেল চেয়েছিলি,
সেদিনই বুঝেছিলাম- তুই আমাকে ভালোবাসিস।
আমি মুচকি হেসে, ইয়াব্বড় ঢাউস একটা সরষে-তেলের বোতল
মুখ খুলে তোর নাকের কাছে উঁচিয়ে ধরেছিলাম। তুই রক্তজবার মতো লাল হয়ে গিয়েছিলি।
তেলের ঝাঁঝে নয়, লজ্জায়।
'ঢেঙ্গি ছেরির কিত্তি দ্যাহ! পুলাডারে কিরুম জ্বালাইতাছে...'
মা আমাকে বকে দিয়েছিলেন।
আশৈশব পিতৃ-মাতৃহীন কমলকে
কোলেপিঠে করে মানুষ করেছিলেন বলে
তোর প্রতি মায়ের আলাদা একটা দরদ ছিলো।
আমিও কিন্তু মনে মনে তোকে পছন্দই করতাম।
এরপর থেকে শুধু প্রতীক্ষায় থেকেছি,
অকষ্মাৎ পাহাড়ি ঢলের মতো, সংকোচের সব বাঁধ ভেঙে, কবে আমার বালিমাটিতে গড়া মনের বাঁধে ধাক্কা দিবি,
সে ধাক্কায় ভেঙে যাবে আমার আজন্ম-অনাহত,
লজ্জার বাঁধ।
যৌবন-স্রোতে ভেসে যাবো শুধু তুই আর আমি।
ভাবনা আমার ভাবনাই রয়ে গেলো।
সংকোচের চৌকাঠ পেরিয়ে, আমার মেকি-লজ্জার বাঁধ তুই ভাঙতে পারিসনি।
কতো রৌদ্রদগ্ধ-চৈত্র চাতকের মতো দিন গুণে
পার করেছি-
বৃষ্টি হয়ে কখন ঝরবি, পাবো পিপাসার জল, জানাবি সেই কাঙ্ক্ষিত বাসনা।
বহুবার ভেবেছি- নিজেই গিয়ে তোর জালে ধরা দিই।
বাঙালি নারীর মন বলে কথা।
ভাবতে পারি শুধু, করতে জানি আকাশ-কুসুম কল্পনা
চোখ ভাসিয়ে কাঁদতে জানি, এছাড়া কিছুই করতে জানিনা।
নিজে নিজে সংকোচে সংকোচিত হয়েছি আবার
বিদ্যা-বুদ্ধি-যোগ্যতায় কিসে আমি তোর নাগাল পাই!
বিয়ের আগে তোকে শেষ চিঠিটা লিখেছিলাম, বাবা-মা'র চোখকে ফাঁকি দিয়ে
তোকে আসতে বলেছিলাম, 'তোর সাথে
হাসতে না পারি, শেষবার এবং প্রথমবারের মতো
কাঁদতে তো পারবো' এই বলে।
আমার চিঠির উত্তর আসেনি,
আসিসনি তুইও।
ভেবেছিলাম তোর যোগ্য সহচরী নিয়ে সুখে ঘরকন্না পেতে আছিস তুই।
পরে মায়ের কাছ থেকে শুনেছি- নিভৃতচারি স্বভাবটা আজো লালন করেই চলেছিস।
আছিস নিজের মতোই একাকী।
অবশেষে গোধূলিবেলায় এলি, রৌদ্রতপ্ত, কর্মক্লান্ত দেহ
হতে পারলামনা তোর হাতের লাঠি, শেষ অবলম্বন
সঙ্গী শুধু স্মৃতি রোমন্থন।