♣হাটে যাওয়া থেকে কোরবানির পশু কেনা পর্যন্তঃ♣
☀ হাটের জন্য পর্যাপ্ত সময় রাখুন। তাড়াহুড়ো যেন করতে না হয়।
☀ হাটে পোশাক ময়লা হবে। তাই সে অনুযায়ী পোশাক পড়ুন। সাথে ছাতা নিতে ভুলবেন না।
☀ কোরবানির পশু কেনার টাকা সবাই ভাগ করে যার যার সাথে রাখুন। পুরো টাকা একজনের কাছে রাখবেন না। নইলে পকেট মার হলে সব টাকা একসাথে যাবে।
☀ ঘর থেকে বের হবার সময় মুরুব্বিদের কাছ থেকে জেনে উত্তম কিছু কেনার দোয়াটা পড়ে নিন।
☀ হাটে হকারদের কাছ থেকে কিছু কিনে খাবেন না। তাহলে স্বাস্থ্যের পাশাপাশি জীবন ও হুমকিতে পড়তে পারে। অজ্ঞান পার্টি থেকে সাবধান!
হাটের দালালদের কাছ থেকে সাবধান! প্রয়োজনে বুঝে শুনে একজন সাথে রাখতে পারেন।
☀ পশুর বয়স নিশ্চিত হয়ে নিবেন। কোরবানির গরুর বয়স কমপক্ষে দুই বছর এবং ছাগলের কমপক্ষে ছয় মাস হতে হয়।
☀ সুস্থ-সবল, উজ্জ্বল চামড়ার সতেজ ও বলিষ্ঠ পশু কিনুন।নীরোগ পশু কিনুন। চামড়ায় কাটা / ঘা, জিহ্বায় ঘা , পেট অতিরিক্ত ফোলা , ভাঙ্গা শিং , খুরের মধ্যে ক্ষত থাকলে পশু কিনবেন না।
☀ পশু রোগাক্রান্ত কিনা, স্টেরয়েড বা অন্য কোন ড্রাগে বিপর্যস্ত কিনা দেখে নিবেন। বিক্রেতার কথায় বিভ্রান্ত হবেন না।
☀ পশু কেনার পর হাটের খাজনা / হাসিল ঠিকমত পরিশোধ করুন।
পশু ঘরে আনার সময় আগেই কল দিয়ে জানিয়ে দিন বেঁধে রাখার জায়গা প্রস্তুত রাখতে। পশুর খাবারও কিনে ফেলুন।
☀ কসাই বুকিং দিয়ে রাখুন।চাটাই কিনে রাখুন। ডেটল / স্যাভলন কিনে রাখুন। ছুরি, দা ধার করে রাখুন। দারিপাল্লাও জোগাড়ে রাখুন।কোরবানির আগে পরের পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার জন্য ব্লিচিং পাউডার কিনে ফেলুন।
♣কোরবানির প্রস্তুতিঃ♣
☀ জবাইয়ের ১২ ঘণ্টা আগেই পশুকে খাওয়াদাওয়া থেকে বিরত রাখুন।
☀ পশু জবাইয়ের আগে কোনোভাবেই তাকে পরিশ্রম বা উত্তেজিত করা যাবে না। এর ফলে মাংসের গ্লাইকোজেন বা সঞ্চিত শক্তি হারিয়ে যায়। ফলে এসিডিটিতে দ্রুত মাংস নষ্ট হয়ে যায়।
☀ কোরবানি সম্পন্ন হলে পুরো জায়গা সম্পূর্ণ পরিস্কার করে ফেলতে ভুলবেন না। পুরো স্থান সাফ করে পানি দিয়ে ধুয়ে ব্লিচিং পাউডার ছিটিয়ে দিন।
♣মাংস ফ্রিজে রাখার জন্যঃ♣
☀ পশু জবাইয়ের অন্তত তিন-চার ঘণ্টা পর্যন্ত মাংস শক্ত থাকে। সে সময় কোনোভাবে মাংস রেফ্রিজারেটরে রাখা যাবে না। তিন-চার ঘণ্টা পর মাংস শক্ত থেকে নরম হলে প্রক্রিয়াজাত করে তারপর রান্নার কিংবা রেফ্রিজারেটরে রাখার সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
☀ রেফ্রিজারেটরে রাখার সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি হল প্যাকিং করে রাখা। তবে খেয়াল রাখতে হবে ঠিকমতো তা প্যাকিং হয়েছে কি না। হাড়সহ মাংস, হাড় ছাড়া মাংস, চর্বিসহ মাংস, চর্বি ছাড়া মাংস-এই প্রতিটি প্যাক হবে আলাদা। ভালোভাবে কেটে পরিষ্কার করে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে ছোট ছোট প্যাকেট করতে হবে।
•মনে রাখবেন, পানি (এবং রক্ত তো আবশ্যই) ঝরানো টা খুব প্রয়োজন। নয়ত ফ্রিজের ঠাণ্ডায় মাংসের ভিতরে তা জমে বরফ হয়ে যায়। আয়তনে বড়, গঠনে শক্ত ও ধারালো হয়ে এই বরফ মাংসের টিস্যুগুলোকে ছিন্নভিন্ন করে স্বাদ ও মান নষ্ট করে দেয়। একারনে কমার্শিয়াল ফুড ইন্ডাস্ট্রিতে খাবার সংরক্ষনে তাই Freezing and Thawing খুব সাবধানে করা হয়। Freezing and Thawing এর বাজে প্রভাব এড়াতে মাংস ছোট ছোট প্যাকেট করে ফ্রিজিং করুন, তাহলে যতটুকু প্রয়োজন একবারে অতটুকুই বের করতে পারবেন। লোড শেডিং এর সময় ফ্রিয খুলবেন না।
☀ অবশ্য মাংস বড় একটা ডিশে করেও রেফ্রিজারেটরে রাখতে পারেন।
☀ কাঁচা অবস্থায় মাংস ঘরের সাধারন রেফ্রিজারেটরে রাখতে চাইলে ১৮ থেকে ২২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপেই চলবে। এতে গরুর মাংস ১২ মাস, খাসির মাংস ছয় মাস, মাথা, কলিজা ৬ মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়।
☀ মাংসটা যখন ডিপ ফ্রিজে কিংবা রেফ্রিজারেটরে সংরক্ষণ করা হবে, তখন প্যাকেটে সেদিনের তারিখটা লিখে রাখতে হবে। এতে পরে বোঝা যাবে মাংস পুরনো হয়ে নষ্ট হয়ে গেল কি না।
☀ আমার পছন্দ মাংসে লবণ, ভিনেগার, মসলা মাখিয়ে রাখা। এতে রেফ্রিজারেটরে রাখলেও মাংসের স্বাদ ভালো থাকে।
☀ রান্না করা মাংস ছোট ছোট বক্সে রাখুন।
♣ফ্রিজ ছাড়া রাখার উপায়ঃ♣
☀ বাংলাদেশে সবচেয়ে প্রচলিত হচ্ছে বড় বড় হাড়িতে মাংস রেধে প্রতিদিন সেটা জ্বাল দিতে থাকা। একসময় তা শুকিয়ে অসাধারণ স্বাদের হয়। এই পদ্ধতি তা ভালো। এছাড়া অন্য উপায় হচ্ছেঃ
☀ মাংস ঘরে আনার ৮-১০ ঘণ্টার পর লবণ দিয়ে ভালোভাবে ফুটিয়ে (১০০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা) নিলে মাংস ভালো থাকবে। ফলে মাংসের ভেতরের অন্যান্য জীবাণু মরে যায়। এর ফলে গরমকালে ১২ ঘণ্টা এবং শীতকালে ২৪ ঘণ্টা মাংস ভালো থাকে।
☀ কড়া রোদে মাংস শুকিয়ে মাংসের আর্দ্রতা কমিয়ে এনে তা সংরক্ষণ করা যায়। মাংস সংরক্ষণের সবচেয়ে আদি পদ্ধতিই হলো মাংস রোদে শুকিয়ে নেওয়া।
খুব কড়া রোদে ৭ দিন মাংস শুকিয়ে সংরক্ষণ করা যেতে পারে। রোদে শুকালে মাংসের আর্দ্রতা কমে যায়। পানি শুকিয়ে গেলে তবেই মাংস সংরক্ষণ করা যাবে।
☀ হালকা লবণ দিয়ে মাখিয়ে নিয়ে রোদে ভালোভাবে শুকালে এই মাংস ভালো থাকে অনেক দিন।
তবে শুকানোর পর অবশ্যই মাংসগুলো টিনে ভালো করে এঁটে রাখতে হবে, নয়তো পোকামাকড়ের আক্রমণে তার আবার অপচয় হবে।
☀ ভিনেগার দিয়েও মাংস সংরক্ষণ করা যায়। কোনো টিন বা বোতলে ভিনেগারে মাংস সম্পূর্ণভাবে ডুবিয়ে রাখলে মাংস ভালো থাকে অনেক দিন। আর ভিনেগার যদি না পাওয়া যায়, তাহলে তার বদলে লেবুর রস ব্যবহার করা যেতে পারে।
☀ রেফ্রিজারেটরে মাংস না রেখে বাইরে রাখতে চাইলে বড় বড় টুকরা করে কাটা মাংসে মসলা মাখিয়ে তেল দিয়ে কড়াইতে রাখা যেতে পারে। তবে প্রতিদিন অন্তত একবার কড়াইতে রাখা মাংস গরম করতে হবে।হালকা লবণ ও হলুদ দিয়ে মাংসগুলোকে তাপ দিতে হবে। তাহলে অনেক দিন সাধারণ তাপমাত্রায়ই রাখা যায়। তাপমাত্রা কেমন থাকবে তা জানতে আবহাওয়া অফিসে যোগাযোগ করতে পারেন
যেসব পদ্ধতির কথা বলা হয়েছে মাংস সংরক্ষণের ক্ষেত্রে, এসব পদ্ধতিতে মাংস সংরক্ষণ করলে প্রোটিন, লৌহ ও ফসফরাস এসব সংরক্ষিত থাকে।
মনে রাখবেন, অল্প তাপে বেশি সময় ঢেকে মাংস রান্না করলে ভিটামিন ডি সংরক্ষিত থাকে।
মাংস টিফিনে নিবেন কিভাবে?
☀ টিফিন বাক্সে খাবার নিয়ে বেরোনোর আগে খাবার ঠাণ্ডা করে নিন।কখনোই গরম খাবার নেওয়া যাবে না, এতে খাবার নষ্ট হতে পারে। গরম নিতে চাইলে হট লাঞ্চ বক্স ব্যাবহার করবেন।
☀ টিফিন বক্সে মাংসের শুকনো আইটেম নেয়াই ভালো। কাবাব নিতে পারেন।
☀ আজকাল সব অফিসেই ছোটখাটো রান্নাঘর , ওভেন থাকে। সুযোগ থাকলে খাওয়ার আগে খাবার ও মাংস গরম করে নিন।
☀ খাবার টিফিনবক্সে কতক্ষন ফ্রেশ থাকবে তা নিশ্চিত হয়ে নিন।
♣হেলথ টিপসঃ♣
☀ মাংস ভালভাবে সিদ্ধ করে রান্না করবেন। নয়ত কৃমি, এমনকি এনথ্রাক্সের ঝুকি থাকে।
☀ মাংস রান্নার আগেই চর্বি ছাড়িয়ে নিন। এতে ক্যালরির পরিমাণ কমে আসবে।
☀ এই সময় খালি লবণ খাওয়া ছেড়ে দিন।লবণ খেলে শরীরে পানির পরিমাণ বেড়ে যায় এবং উচ্চরক্তচাপের আশঙ্কা থাকে। প্রয়োজনে লেবু বা লো সোডিয়াম লবণ ব্যাবহার করুন।
☀ মাংস ডীপ ফ্র্যাই এর চাইতে বেকড রান্না অনেক স্বাস্থ্য সম্মত, তবে তাতে মাখন, ঘি এসব দিলে লাভ হবেনা।
☀খাবার প্লেটে প্রচুর স্যালাড রাখুন। লেবুর শরবত খান। কোল্ডড্রিঙ্কস যত কম খাবেন তত ভালো।
☀মাংস খাওয়া শেষে দৈ খাবেন। লাল মাংস পেটে বিষ ও খারাপ জীবাণু বাড়ায়। দৈ সেটা প্রতিরোধ করে।
☀মাংস খাবার পরেই চা খাবেন না। দুটো মিলে বিষ তৈরী করবে। আল্লার ওয়াস্তে খাবার পর সিগারেট খাবেন না , এটা আরো ভয়ঙ্কর।
☀নির্দিষ্ট সময় অনুযায়ী খাওয়ার চেষ্টা করুন।
☀ওজন মাপুন
☀ ফল খান। লেবু জাতীয় ফল ভালো কাজ দিবে।
☀ডায়বেটিস / প্রেসার / কোলরেস্টেরল এর রোগীরা সাবধান থাকুন।
*ঘুমোতে যাবার ৩-৪ ঘন্টা আগেই ডিনার শেষ করুন। খাবার টেবিলে বসার আধ ঘন্টা আগে পানি খান। এছাড়া খাবার শেষ হবার সাথে সাথে নয়, বরং আধ ঘন্টা পর পানি খাবেন। এসব আপনার হজম কে চরম করবে!
কিছু অনুরোধঃ
☀ কোরবানি নিয়ে দয়া করে প্রতিযোগিতা / অযাচিত অহংকার করবেন না।
☀ ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় রাখুন।
☀ পাড়া প্রতিবেশী ও আত্মীয়দের সাথে দেখা-সাক্ষাত করতে ভুলবেন না।
☀ আল্লাহ সুযোগ দিয়েছেন সমাজের সহমানুষদের মুখে খাবার তুলে দেয়ার। গরীব ও হকদারদের মাঝে তাদের প্রাপ্য মাংসের ভাগ ও চামড়া / মূল্য খুশিমনে বিলিয়ে দিন।
♣ ♣আল্লাহ আপনার কোরবানি কবুল করুক। আমিন।♣ ♣
তাহলে আপনি রেডি? হয়ে যাক! ঈদ মোবারক!!