প্লেনটা রানওয়ে স্পর্শ করা মাত্রই এক অদ্ভুৎ অনুভূতি হলো, জীবনের এই প্রথম আমি কোন পরভূমে। জানালা দিয়ে যা দেখছিলাম তাতেই অভিভূত হচ্ছিলাম। প্লেনটা রানওয়ের মাঝেই দাড়িয়ে রইল। ঢাকা এয়ারপোর্টের মত তখন কলকাতা এয়ারপোর্টে জেটব্রীজ/জেটওয়ে ছিল না। ছোটবেলায় দেখা সিনেমার মতন সিড়ি দিয়ে রানওয়ের মাঝেই নামতে হতো। আমাদের গ্রুপের সবাই প্লেন থেকে নেমে বাসে উঠলাম। এই বাসটার কাজ ছিল শুধু রানওয়ে থেকে ইমিগ্রেশন অফিস পর্যন্ত পৌছে দেয়া। কলকাতার ইন্টারনেশনাল এয়ারপোর্ট টা খুব একটা ব্যস্তময় ছিল না। ইমিগ্রেশন অফিসারকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম, সারাদিনে মাত্র ৫-৭ টা ইন্টারনেশনাল ফ্লাইট যাতায়াত করে। আমাদের প্লেনের যাত্রী ছাড়া সেসময় আর কোন যাত্রী ছিল না। তাই খুব দ্রুত ইমিগ্রেশন পার হতে পারলাম। কানেক্টিং ফ্লাইট ছিল লোকাল, আর হাতে সময়ও ছিল না। ব্যাগ কালেক্ট করে বের হয়ে সিগারেট খাওয়ার সময়টাও ছিল না। এর মাঝেই দেখি, হাদি ভাই আর পুলক গায়েব। আমরা বাকীরা বোর্ডিং এর জন্য গেলাম, ভাগ্যক্রমে এবারও উইন্ডো সীট পেলাম। বোর্ডিং সময় শেষ হওয়ার আগ মুহুর্তে হাদি ভাই আর পুলকের দেখা পেলাম। আমারে দেখেই হাদি ভাইয়ের দাত কেলানো হাসি, "কই ছিলি তুই? আমি আর পুলক তো নাইমাই দুইটা কইরা কিংফিশার মাইরা দিছি।" এতক্ষণে তাদের গায়েব হওয়ার রহস্য উৎঘাটন হলো।
দ্বিতীয় প্লেন যাত্রার শুরুতেই ধাক্কা খেলাম, ঢাকা থেকে কলকাতায় এসেছি ৪০-৫০ মিনিটেই। আর কলকাতা থেকে দিল্লী ২ ঘণ্টার বেশি। এতেই ভারতের ভৌগলিক বিশালত্বের পরিচয় পাওয়া যায়। আর একটা ধাক্কা খেয়েছি, যখন দেখলাম সুন্দরী বিমানবালাগুলো বিমানের মাঝে খাবার ফেরী করে বেরচ্ছে। লোকাল ফ্লাইটে খাবার ফ্রী ছিল না, কিনে খেতে হতো।
যখন দিল্লীতে নামি, তখন রাত ১১ টা ছুঁই ছুঁই। এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়ে ট্যাক্সি নিলাম। যখন হোটেলে নামি তখন রাত ১২ পার। হোটেলের ফরমালিটি সেরে রুমে ঢুকতে ঢুকতে ১ টা বেজে গেল। সেই বিকেলে ঢাকা-কলকাতা ফ্লাইটে শেষবার কিছু মুখে দিয়েছিলাম, তারপর পেটে আর কিছু পড়েনি। রুমে রাখা হোটেলের মেন্যু দেখে মাটন বিরিয়ানী অর্ডার করলাম। রুম সার্ভিস যখন খাবার নিয়ে এলো, তখন আমি অবাক। দেখি বিরিয়ানীর সাথে রসমালাই নিয়ে এসেছে। আমি হোটেল বয়কে রসমালাই দেখিয়ে বললাম আমিতো এটা অর্ডার করি নি। হোটেল বয় বলল "ইটস সাপ্লিমেন্টারী। ফ্রী হ্যায়।" আমি তো মহাখুশি বিরিয়ানীর সাথে রসমালাই ফ্রী!!! ফ্রেশ হয়ে খাওয়া শুরু করলাম। বিরিয়ানী শেষ করে রসমালাই খাওয়ার জন্য চামচ নিয়ে বসলাম। প্রথমবার মুখে দিতেই পেটের ভেতরে এতক্ষণ যা ঢুকিয়েছি, সব বের হয়ে আসতে চাইল। রসমালাই টক কেন? আবার কিছুটা নুনতা নুনতা। কেও পাশে নেই যাকে জিজ্ঞেস করব এই রসমালাই এত আজব কেন? ভাবলাম হয় এই রসমালাই বাসী এইজন্য ফ্রী দিয়েছে অথবা ইন্ডিয়ানরা বোধহয় টক রসমালাই খায়। এইসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়লাম।
হাদি ভাই সকালে রুমের বেল চেপে ঘুম ভাঙালো। বলল "তারাতারি নিচে আয়, ব্রেকফাস্ট করুম।" বলে রাখা ভাল হোটেল থেকে সাপ্লিমেন্টারি বুফে ব্রেকফাস্টের ব্যবস্থা ছিল। আমাদের কয়েকজন প্রথম কয়েকদিন হামলে পড়ে ব্রেকফাস্ট সারে। বুফে তার ওপর ফ্রী!! ব্রেকফাস্টের মেন্যুগুলোও ছিল বেশ ভাল মানের। আইটেমও ছিল হরেক রকমের। নাস্তা খেতে খেতে হাদি ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম "ভাই রাতে কী খাইছেন?" সে বলল "মাটন বিরিয়ানী?" আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম "ভাই মাটন বিরিয়ানীর সাথে রসমালাই দিছিল?" এবার হাদি ভাই হাসতে হাসতে অজ্ঞান হওয়ার অবস্থা। আর বাকী ভাইকে ডাক দিয়ে বলল "বাকী, তোর মত অশুভও রসমালাই খাইছে।" বুঝলাম আমার মত ধরা আরও অনেকেই খাইছে। শেষে পুলক বুঝিয়ে বলল যে ওইটা রসমালাই ছিল না। ওটা ছিল রাইতা।
চলবে...
আগের পর্ব
এডিট:
আমার খাওয়া রসমালাই (আদতে রাইতা) এর মত দেখতে নিচের ছবিটা। আমি কেন রাইতাকে রসমালাই মনে করেছি হয়ত এই ছবিটা দেখে হয়তো অনেকে বুঝতে পারবেন। (ছবি গুগল মামা)
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুলাই, ২০২০ বিকাল ৩:৫৫