খুব মন খারাপ হলে একা একা নদীর কাছে যাই
রাত দশটা-এগারোটা পর্যন্ত অভয়মিত্র ঘাটে বসে
থাকি। নদীরও কি কোনো বেদনা থাকে মানুষের
মতো? (থাকে সম্ভবত। হু হু একটা আওয়াজ সব
সময় ছাপিয়ে উঠে প্রতিটি নদীর বুকে, নদীগুলো
কেবল ব্যথাময় একটা জীবন কাটিয়ে দিলো নাকি?)
মাঝে মাঝে নৌকায় চড়া হয়। ঘন্টায় তিনশ করে
দাম-দর করে নৌকায় উঠি, নৌকাওয়ালা জোয়ারের
দিকে নৌকা ছেড়ে দেয়। গল্প করে, নিজের গল্প, নদীর
গল্প। সাধারণত নৌকাওয়ালা, রিকশাওয়ালাদের
শরীরে হাজার হাজার গল্প জমা থাকে। শুধু ঘামহীন
মানুষের শরীরে কোন গল্প জমা নাই। শুধুমাত্র উষ্ণতা
আর শরীরের গল্প নিয়ে একটা জীবন কাটালো তারা।
মাঝে মাঝে বাতিঘরে যাই, বইয়ের সমুদ্রে গিয়ে বসে
থাকি কিছুক্ষণ। কতো শত বই কেনা হয়নি এখনো…
আবুল হাসান সমগ্রটা এখনো টেবিলে বড় বড় চোখ
করে তাকিয়ে থাকে না। আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদের
নতুন কয়টা যেন খন্ড আসলো? ( বইয়ের জন্য কি
মানুষের শরীরে বেদনা হওয়া মানায়? বই কিনতে না
পেরে কেউ কি কোনোদিন আত্মহত্যা করেছিলো?)
মাঝে মাঝে একা একা রাস্তায় হাঁটতে থাকি, জ্যামের
ফাঁকে ফাঁকে পা গলিয়ে শহরের এ-মাথা ও-মাথা...
ভোঁস করে কেউ বাইক ছুটিয়ে যায়, রিকশাওয়ালা হেইত
হোইত করে, হেঁটে হেঁটে ক্লান্তি এলে বাসায় ফিরে আসি।
মাঝে মাঝে খুব গভীর বেদনা হলে তোমার কাছে যাই।
তোমার কাছে গেলে মনে হয় নদীতে গেলেই ভালো
হতো। নৌকায় চড়তে চড়তে মনে হয় নদীর চেয়ে নারী
ভালো। তোমার কাছে গেলে মনে হয়, তারচেয়ে বইয়ের
সমদ্রে ডুব দিলে ভালো হতো। বইয়ের পাতা খুলে মনে
হয়, এই প্রতিটা লাইনের পেছনে কোন না কোন নারীর
বড় বড় চোখ, দীর্ঘ পাতা তোলে বড় বড় করে তাকিয়ে
আছে। আমি সব ছেড়েছুঁড়ে তোমার কাছে ফিরে আসি।
মাঝে মাঝে খুব গভীর বেদনা হলে তোমার কাছে যাই…
২৯ শে নভেম্বর, '১৬। অঘ্রানের রাত।
চট্টগ্রাম।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ১১:৩১