"কবিদের সাথে ভালোবাসাবাসি করতে নেই", বলে
যে মেয়েটি আমার হাত ছেড়ে দিয়ে চলে গিয়েছিলো--
তার সাথে আমার সতেরো বছর পরে দেখা। মাঝখানে
অনেকগুলো বছরের মতো তার চুল হারিয়ে গেলো!
কপালের দিকে আরো কিছুদুর উচু হয়ে গেলো ভাঁজ,
কি ভীষণ মায়াবী চোখদুটো পিট পিট করছে নজরুল
মঞ্চের এখানে ওখানে। পাশাপাশি হাঁটছে মধ্যবয়সী বর…
আমার দু-চারটে কবিতা পড়বার অনুরোধ ছিলো
খুক খুক করে গলা খাঁকারি দিয়ে পড়া শুরু করলাম,
তরতজা লেখা চারটা কবিতা হাতের কাছে কাগজে
থাকার পরেও পড়তে ইচ্ছে করলো না। স্মৃতি থেকে
আলগোছে তুলে আনলাম কয়েকটা লাইন। এইসব
লাইনগুলো আবৃত্তি করতে করতে হঠাৎ খেয়াল হলো
আমার তো দেখি বেশ কবিতা মুখস্ত থাকে! অথচ
আমি, এই গতকাল লেখা একটা কবিতাও ঠিক মতন
ঠাহরে আনতে পারি না। ইদানিং সব কিছু ভুলে যাচ্ছি…
আয়োজকদের সাথে আমার পুর্বজন্মের শত্রুতা ছিলো
কিনা কে জানে! কি সব জন্মদিন টন্মদিন পালনের নাম
করে নিয়ে এসে সং সাজিয়ে বসিয়ে রাখে শালারা…
অবশ্য একটা জিনিস খুব ভালো লাগে! তরুণ-তরুণীরা
এতো মুগ্ধকরা গলায় কবিতাগুলো আবৃত্তি করে!
আমি ঠিক ঠাহর করতে পারি না কবিতাগুলো, কার?
আমার সন্তানগুলো আমার কাছে অচেনা হয়ে যায়।
আমি মুগ্ধ বিষ্ময়ে শুনি এক একটা লাইন, তারপর
অটোগ্রাফ নেওয়ার লাইন পড়ে যায়--একটা চরম
বিরক্তি নিয়ে আমাকে বইয়ের পর বইয়ে লিখতে হয়,
“শুভেচ্ছা। ভালোবাসসহ।” বছর দশেক ধরে ভালোবাসা
বিলাতে বিলাতে আমি খুব ক্লান্ত। তবুও ভালোবাসাহীন
কোনো এক উস্কুখুস্কু চুলের দিকে মাঝে মাঝে চোখ
চলে যায়। একবার লিখে দিতে ইচ্ছে করে, “শুভেচ্ছা…”
কোন উস্কুখুস্কু চুল অটোগ্রাফের মায়ায় কখনো লাইনে
এসে দাঁড়ায় না। আমার জন্মদিনগুলো বড় বিষন্ন কাটে,
কবিদের সাথে আসলেই ভালোবাসাবাসি করতে নেই!
৩ নভেম্বর, ১৭। কার্তিকের বিকেল।
কসমোপলিটন, চট্টগ্রাম।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১:২৪