এই রকম হলুদ হলুদ কার্তিকের সকাল আমরা অনেক
অনেক বছর দেখি না! এই রকম শীত শীত ঘ্রাণ, অনেক
অনেক দিন আগে আমি আমার মা'র কাছে জমা রেখে
শহরে চলে আসছি। আমার সেইসব ঠোঁট ফাটতে শুরু
করা, পা ফাটতে শুরু করা সকালগুলা আর একটা মাঝারি
সাইজের মেরিল পেট্রোলিয়াম জেলি সেই যে কবে মা'র
আঁচলে গিট মেরে দিয়ে এই থকথকা ঘামের শহরে
আসলাম, এখনো উজবুক শহরটাতে পা টেনে টেনে চলছি…
জালফাটা বিলের আঁড়ের ক্ষেতে রুয়ে দেয়া আলুবীজ
পেরুল, আর রঙ্গইম্যা সঁইয়ের বীজগুলা আর সেইসব
ক্ষেত মজুরদের দল, যাদের জন্য ফোরকানিয়া থেকে ফিরে
আইসা পান্তাভাত, মরিচ ভর্তা আর বাসি তরকারি নিয়া
আইলে আইলে হাঁটা আর কাঁচা কাঁচা ধারালো ধানের ছরা
আর সেইসব ছরার গন্ধ আমি কার্যত ভুলতে পারি না…
আমাদের পশ্চিম পাশের কুয়ায় ন্যাংটা হয়ে মশারী টানা
সেইসব সকাল, আর গর্ত থেকে টেনে টেনে বাইর করা
বাইং মাছের কথা মনে পড়লে আমি বাবাকে ফোন দিই,
বাবা এই বছর অবসরে গেছেন। গত বছর বড়সড় একটা
ওপেন হার্ট করায়া বাইর করার পর প্রথম কথা বললেন,
“মোক্তাররে ফোন দে। আমি ওরে আলুগুলা লাগায় ফেলতে
বলে আসছিলাম। লাগাইছে কিনা দেখ।” আমি হাসছিলাম!
এই বছর বাবার সময় কাটছে না। বললেন, “চাষবাস একটু
বাড়াইছি। ধানও হইছে মাশআল্লাহ…” আমি কাঁচুমাচু গলায়
বললাম, “আপনার এইসব ভেজাল করার দরকার কি?”
হাসতে হাসতে বললেন, “তুই এইসবের কি বুঝবি? আমারে
নিয়ে টেনশন করতে হবে না। আমি বেশ ভালোই আছি।
ও, শোন, তোর মা পুঁটি মাছ রাখছে ফ্রিজে, একদিন আইসা
ঘুরে যা বাড়ি থেকে।” আমি ‘আচ্ছা’ বলে ফোন রাইখা দিই…
আমার সেইসব হলুদ হলুদ কার্তিকের সকালগুলা আমাকে
ডাকে। মাঝে মাঝে আমি মা’র কাছে যাই, মা’র আঁচলের
কাছে। মা’র কাছে জমা রাখা আমার সেইসব মশারী টানা
সকাল আর মেরিল পেট্রোলিয়াম জেলিটা আমার মা আমাকে
আর ফেরত দিতে পারেন না। আমার ছোট ভাই মা’র কাছ
থেকে ওইসব হলুদ হলুদ কার্তিকের সকাল আর পান্তাভাতগুলা
কেড়ে নিয়ে আমার সামনে সামনে ঘুরঘুর করতে থাকে…
আমি আমার সকাল হারানোর বেদনা নিয়া একবার আমার
মাকে আরেকবার আমার পুরাতন বয়সী ছোট ভাইকে দেখি!
০১ নভেম্বর, ’১৯। কার্তিকের দুপুর।
মিরপুর, ঢাকা।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা নভেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৩:৩৮