ভালবাসার যে ক্ষেত্র আছে ওখানে নিজেকে মোঘল মনে করি। মোঘল ঠিক না, মোঘল বাদশা। জানি অনেকেই এমন টা মনে করে থাকেন। কিন্তু আমি নিজেকে সব বাদশার বাদশা মনে করি। কে কি ভাবল তা আমার দেখার বিষয় না। আমি হলাম ভালবাসার প্রবাদ পুরুষ, কিং অব লাভ। কেন এমনটা ভাবি তা একটুখানি না বললেই নয়। মস্তিস্কের নিউরনকে ঘাটাঘাটি করা লাগবে না মোটেও। চুটকি বাজালেই হড়হড় করে কাহিনী বেরিয়ে আসবে। আরে এতো সেদিনের কথা………………
১.
আমরা ছিলাম ৭ বন্ধু। আমি, সজীব, তারেক, মাহবুব, হীরা, ইমরান,অর্ণব। অল জেন্টস, শীঘ্রই গ্রুপের নাম হয়ে গেল অল জেন্টস ক্লাব (নামটা নিন্দুকদের দেয়া, অনেকে নাম শুনে চোখ টিপ দিয়ে কি জানি ইশারা করত)। শীঘ্র অর্ণব গ্রুপ ত্যগ করল। আসলে ওর চাপাবাজিতে অতিষ্ট হয়ে আমরাই ওকে সাইডে ফেলে দিলাম। রিপ্লেসমেন্ট হিসেবে সামিকে পেয়ে গেলাম। ওকে আমি বিশেষ পছন্দ করতাম না ওর মেয়ে ঘেষা স্বভাবের কারনে কিন্তু সবার মধ্যে আমার সাথেই ওর বন্ধুত্ব হয়ে গেল সবার আগে, ধীরে ধীরে সামিউল আমাদের অপরিহার্য মেম্বার, ওকে ছাড়া এখন আর কিছুই জমেনা।
যা বললাম সবই ৪ বছর আগের ঘটনা সবে মাত্র ফার্স্ট ইয়ারে পড়ি। স্কুল কলেজ দুটোই বয়েজ হওয়ায় মেয়েদের সাথে একটু দূরুত্ব বজায় রেখে চলি। মেয়েরা কিছু জিজ্ঞাসা করলে অন্যদিকে চেয়ে উত্তর দেই। অল জেন্টস ক্লাবের কেউ মেয়েদের চারপাশে ঘুরঘুর করতে দেখলে নাখোশ হই। বলাই বাহুল্য ক্লাসের আপামর জনগোষ্ঠি এটা আঁচ করতে পারল অনায়াশেই, ফালাফল হিসেবে নিন্দুক কর্তৃক হয়ে গেলাম অল জেন্টস ক্লাবের প্রেসিডেন্ট। কি আর করা, আমাদের ৭ জনের মধ্যে আমার পর তারেক মেয়েদের সাথে কম মিশে তাই ওকে বানিয়ে দিলাম অল জেন্টস ক্লাবের জেনারেল সেক্রেটারি।
ফার্স্ট ইয়ার শেষ হয়ে সেকেন্ড ইয়ারে উঠলাম। ছেলে মেয়েদের মধ্যে বন্ধুত্ব আরো গাঢ় হল। অল জেন্টস ক্লাবের প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমি স্বভাবতই ক্ষুব্ধ হলাম। সবচেয়ে দুঃখের বিষয় আমার কাছে ছিল, ক্লাসের অন্য ছেলেরা মেয়েদের সাথে যতনা মিশত আমার মেম্বাররা মিশত তার চেয়ে বেশী। সজীব ছিল তার মধ্যে ইউনিভার্সাল ফ্রেন্ড। ছেলে মেয়ে সবার দোস্ত। ছেলেদের সাথে যেমন সাবলীল মেয়েদের সাথেও ঠিক সেরকমই। অনেক সফট আর কুল মাইন্ডেড হওয়ায় ক্লাসের যাবতীয় ছেলে মেয়ে ওর ফ্রেন্ড হয়ে গেল। ছেলেরা ফ্রেন্ড হোক প্রব্লেম নাই কিন্তু এত্ত মেয়ে ওর ফ্রেন্ড কেন? প্রেসিডেন্ট এটা হজম করতে পারলনা। সজীবের নাম দিয়ে দিলাম ফিলানথ্রোপিক (বিশ্বপ্রেমিক)। জেনারেল সেক্রেটারি ওর নাম দিল গুটিবাজ। গুটিবাজ মেয়েদের সাথে গপ্প করে আর আমরা ওইসবের ছবি তুলে মোবাইলের মেমরী কার্ড ভরতে থাকি, পাপারাজ্জি নাম হয়ে গেল কয়েকদিন বাদেই।
কোন কিছুতেই কোন কাজ হয়না। বন্ধুদের ফেরানো যায়না। এমন সময় আমি বোমা ফাটালাম। আমাদের ডিপার্টমেন্টের গ্রুপে আগুনের গোলা নিক্ষেপ করলাম। গ্রুপে মেইল করলাম “বন্ধুরা ফিরে আয়” এই শিরোনামে। এত গেল শিরোনাম, লেখার বিষয় বস্তু ধরতে পেরেছেন আশা করি।
গ্রুপে মনে হয় কেরোসিন, ডিজেল ইত্যাদি ঢালা ছিল। আগুনের গোলা নিক্ষেপ করা মাত্রই দাউদাউ করে জ্বলে উঠল। পক্ষের বিপক্ষের মেইলে গ্রুপ সরগরম হয়ে উঠল। আমি মাঝে মধ্যে মেইল করে আগুনে ঘি ঢেলে মজা দেখি……….
শেষমেষ বলতে গেলে কোন কিছুতেই কিছু হলনা। হাল ছেড়ে দিলাম। আমি আর তারেক বিরস বদনে অন্য সবার কান্ড কীর্তি দেখতে লাগলাম। মাঝেমধ্যে অল জেন্টস ক্লাবের মেম্বারদেরকে হতাশাজনক পারফর্মেন্সের জন্য ভর্ৎসনা করি। সেকেন্ড ইয়ারটাও শেষ হয়ে গেল জানি কোন ফাঁকে।
থার্ড ইয়ারে উঠে গেলাম। সেকেন্ড ইয়ারের দু টার্মেই বেশ ভাল রেজাল্ট থাকার কারণে আমি বেশ সিরিয়াস। যে ভাবেই হোক এটা ধরে রাখতে হবে, অন্যদিকে তাকানোর কোন সুযোগ নেই। ভালি কাটছিল। প্রায় একমাস ক্লাস হয়ে গেল, ক্লাস টেস্ট গুলোও ভালই হচ্ছে বালা যায় কিন্তু এরই মধ্যে কি জানি হয়ে গেল ঠিক বুঝতে পারলাম না………
২.
একটা মেয়ে ছিল আমাদের ক্লাসে। লাজুক টাইপের। কথাবার্তা একদমই হয়নি ওর সাথে। থার্ড ইয়ারে ওঠা পর্যন্ত কথা হয়েছিল ২ বার। একবার ফার্স্ট ইয়ারে লিফটে ওঠার সময়। আমি আর ও একা উঠছিলাম। ও আমাকে জিজ্ঞাসা করল ইঞ্জিনিয়ারিং ড্রয়িংয়ের এ্যসাইনমেন্ট করস? আমি বলেছিলাম হ্যাঁ। এটুকুই।
আরেকবার সেকেন্ড ইয়ারে। টার্ম ফাইনালের আগে ভার্সিটি গিয়েছিলাম এ্যডমিট কার্ড তুলতে। ক্যাফেতে ওর সাথে দেখা হল। ও জিগেস করল ইলেক্ট্রনিক্স পড়া শুরু করস?(প্রথম পরীক্ষা ইলেক্ট্রনিক্স ছিল)। আমি বললাম, না। তুমি করস? ও হ্যাঁ বা না কিছু একটা বলেছিল।
ব্যাস এটুকুই।
৩.
আসলে একটা মানুষের মনে যখন ভালবাসা আসি আসি করে অথবা সে কাউকে ভালবেসে ফেলে তখন তার ভিতরে যে অনুভুতি কাজ করে সেটা লিখে বুঝানো একেবারেই অসম্ভব। সে নিজেই বুঝেনা, আরেকজনকে বুঝবে কি করে? অপার্থিব একধরণের অনুভূতি, অবাস্তব ধরণের অপার্থিব………
আমার মনের আবস্থা তখন ভালবাসা আসি আসি করেছে। অকারণেই ওর কাজকর্ম ভাল লাগতে থাকল। আমি ক্লাসের থার্ড রো তে বসতাম। সেও বসত থার্ড রো তে। বান্ধবীদের মধ্যে মাঝে মধ্যে সিট অদল বদল চলত তাই মাঝে মাঝে আমার পাশে বসত। মনের মধ্যে যে একটা পাখি পিল পিল করছে সেটা তখন টের পেতাম। ও আমার পাশে বসলেই অতিমাত্রায় সিরিয়াস হয়ে যেতাম। কঠিন ভাব নিয়ে ক্লাস লেকচার তুলতাম। পরে নিজেকেই নিজে বোঝানোর চেষ্টা করতাম, বাবা আমি জানি তোমাকে দিয়ে প্রেম ভালবাসা এগুলো হবেনা, খামাখাই এসব নিয়ে ভাব কেন। তারপর এমন একটা ভাব দেখাতাম যেন তুড়ি মেরে সব মানসিক দূর্বলতা উড়িয়ে দিয়েছি। আমার কাছে তখন এই অনুভুতিটা মানসিক দূর্বলতা ছাড়া আর কিছুই ছিলনা।
আমি কারো প্রেমে পড়ব এটা নিজে একদমই বিশ্বাস করতাম না। বিশ্বাস না করেই শুধু বসে ছিলাম তা নয়, বন্ধু মহলে প্রচার করেও বেড়াতাম। কারো প্রতি মানসিক ভাবে দূর্বল হয়ে পড়লে অথবা কাউকে দেখে ভাল লাগলে ওটাকে চেপে ধরতাম। শুধু তাই না, এটাকে বিশাল ক্রেডিটও মনে করতাম।
চেপে রাখতে রাখতে কি হল জানেন?
আমি কোন কিছু না ভেবে, না বুঝে, একদমই কোন কিছু চিন্তা না করে এক সন্ধ্যায় ওর প্রেমে পড়ে গেলাম, ওকে ভালবেসে ফেললাম।
৪.
সন্ধ্যাটা ছিল ২০০৮ সালের ১৮ ই মার্চের সন্ধ্যা। পরের দিন ক্লাস টেস্ট ছিল। সন্ধ্যা থেকে পড়তে বসেছিলাম। এক কি দেড় ঘন্টা পর আমি না প্রেমে পড়ে গেলাম। কেমনে পড়লাম, কিভাবে পড়লাম আমিনা সত্যিই জানিনা। একদমই জানিনা। সন্ধ্যা থেকে ওকে নিয়ে চিন্তা করছিলাম তা নয়। কয়েক দিন ধরে ওর চিন্তা করছিলাম তাও নয়। দিন রাত শুধু ওই মাথার মধ্যে ঘুর ঘুর করত সেটাও না। তাহলে কি এমন হল যে আমি এরকম ঘোরতর ভাবে একজনকে ভালবেসে ফেললাম? এই বিষয়ে এখন পর্যন্ত আমি আঁধারেই রয়ে গেছি। এর উত্তর আমার জানা নেই। বলতে পারেন ভালবাসার যেসব নেংটু এ্যঞ্জেল তীর ধনুক নিয়ে উড়ে বেড়ায় ওরা হয়ত আমার আশে পাশেই ঘুরাঘুরি করছিল। মওকা বুঝে হঠাৎ তীর ছুড়ল। তীরটা না আমার হার্টের একদম মাঝখানে এসে বিঁধেছিল।
রাতারাতি ঘোরতর ভাবে কিভাবে ভালবেসে ফেললাম তা আরেকটু পরেই বুঝবেন।
আমার কি হল সে বিষয়ে আমার একদমই জ্ঞান নেই। আমি জানি আমার মনকে যদি আরেকটু সময় দেই তাহলে সে এই ঘোরতর ভালবাসাকে চাপা দিয়ে ফেলতে পারে। মনকে সময় দিলাম না এক ফোঁটাও।
আমার কাছে ওর সেল নম্বর ছিল না। সজীবকে মেসেজ পাঠালাম। বললাম ওর সেল নম্বর দে।
ঘটনা কিছুটা আঁচ করতে পেরে সজীব পুরা হা।শুধু সজীব হা না। সজীব সামি একসাথে হোস্টেলে থাকে। সজীবের সাথে সামিও হা।
জিগেস করল কিসের জন্য। আমি ভণিতা না করে সব বলে দিলাম।
ওই দুই পাবলিকের চোয়াল পুরোই ঝুলে পড়েছিল তা সজীবের মেসেজ পড়েই বুঝতে পারছিলাম। সেল নম্বর পেয়ে গেলাম।
সজীব জিগেস করল কন্টাক্ট শুরু করবি কবে?
আমি বললাম আজ থেকেই।
প্রেম বিরাগী ছেলের রাতারাতি উলটা হন্ঠন দেখে আমার বন্ধুরা তখন খাবি খাচ্ছে রীতিমত।
কি মনে করে সজীব বলল আজকে কন্টাক্ট করিসনা। আমি আর সামি কালকে তোর সাথে মিটিং করব। তারপর ডিসিশন নিস।
ঘুমানোর আগ পর্যন্ত আমি ক্লাস টেস্টের পড়া পড়েছিলাম নাকি গুন গুন করে গান গেয়েছিলাম আর একটু পর পর নিজের অজান্তেই ফিক ফিক করে পাগলের মত হেসেছিলাম কে জানে?
পরের দিন ক্লাসে গেলাম। মনের অবস্থা পুরোই আজব। একজন কে এত্ত ভালবেসে ফেলেছি অথচ সে জানে না কিছুই।
সজু আর সামির সাথে টিফিন ব্রেকে মিটিং করব সাব্যস্ত করলাম। কিন্তু ফাজিল দুইটা ওই টাইমে মিটিং করবেনা। নিজেরা ক্লাস টেস্টের পড়া পড়ে আসেনাই তাই ক্লাস টেস্ট দিবেনা আবার মিটিং করবে ওই পিরিয়ডেই।
আমি বললাম বাবারা আমিত পড়ে আসছি, আমারে দিতে দাও।
ঊম্মা। দুইজনই একসাথে ভাব মারল। বলে যাহ তোর মিটিং করার দরকার নাই। কুইজ দে।
আমি বললাম একটু কনসিডার কর।
দুইজনই একসাথে ঘাড়ের রগ বাঁকা করে ফেলেছে। এককথা মিটিং হলে এই পিরিয়ডেই হবে। কিছু পেতে হলে কিছু ত্যাগ করতে হয় ইত্যাদি ইত্যাদি বড় বড় ডায়ালগ মারতে লাগল। আমিও বিশাল কিছু পাবার আশায় তুচ্ছ ক্লাস টেস্টের মায়া ত্যাগ করলাম।
৫.
মিটিংটাকে রুদ্ধদ্বার বৈঠক বলা চলে। ক্যাফেতে শুধু আমরা ৩ জন। মিটিং এর আলোচ্য বিষয় বস্তু না বলে এড়িয়ে গেলাম। পজেটিভ নেগেটিভ অনেক কিছু ডিসকাস করে ২ ফাট্টু মত দিল তুই ফিল্ডে আছিস তোর প্রায়োরিটি, প্রবাবিলিটি সবচেয়ে বেশী। এগিয়ে যেতে পারিস।
এরপর সজ়ীব একটা উপদেশ দিল যার জন্য ওকে সারা জীবনের জন্য গুরু মেনে নিয়েছি। বলল ওকে যদি আসলেই পছন্দ করে থাকিস তাহলে কোন ভণিতা করিস না। যত তাড়াতাড়ি পারিস মনের কথা বলে দিস। ওর এই একটা উপদেশ আমাকে কমসে কম ৬ মাস এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিল।
লজ্জার হলেও একটা কথা না বলে পারছিনা। কাউকে ভালবাসলে তাকে যে প্রপোজ করতে হয় আর এটা যে ভালবাসার সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ অংশ সেটা আমি সেদিনই প্রথম জেনেছিলাম।
গুরু শিষ্যকে ১০০ কিলোমিটার বেগে গাড়ি হাকানোর উপদেশ দিয়েছিল, কিন্তু শিষ্য যে হাজার কিলোমিটার বেগে এ্যরোপ্লেন হাকাবে সেটা গুরু কল্পনাও করতে পারেনি।
১৯ তারিখ সন্ধ্যা।
আগেই বলেছি ওর সাথে এই ১৯ তারিখ পর্যন্ত কথা হয়েছে মোট ২ বার। ফোনে কথা, মেসেজ আদান প্রদান কিছুই হয়নি আগে। সাহস করে আজীব একটা মেসেজ পাঠিয়ে দিলাম-
“বলত আমি কে?”
আমার কাছে যেহেতু ওর নম্বর ছিলনা একই ভাবে ওর কাছেও আমার নম্বর ছিলনা। আননোউন নম্বর থেকে মেসেজ পেয়ে ও রিপ্লাই করলনা। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে আবার মেসেজ পাঠিয়ে নিজের পরিচয় দিলাম। এর পরেই আরও আজব একটা মেসেজ পাঠালাম-
“আচ্ছা আমাকে তোমার কেমন লাগে?”
এই মেসেজ পেয়ে ওতো পুরা অবাক। বলল এটা আবার কেমন কোয়েশ্চেন?
বিপদ আঁচ করতে পেরে আমি তাড়াতাড়ি বলে ফেললাম, আসলে আমি তোমার সাথে ফ্রেন্ডশিপ করতে চাইতো তাই নার্ভাস হয়ে এই মেসেজ পাঠিয়ে দিয়েছি, সরি।
ও মেসেজ পাঠাল, আরে ফ্রেন্ডশিপ করতে চাও তাতে সরি বলার কি আছে? ইটস ওকে।
আমি দেখলাম বিপদের যে কাল মেঘ তা আপাতত কেঁটে গেছে। আমার সাথে কথা বলবে কিনা এই নিয়ে একটা ভয় ছিল কারণ আমার সাথে যেমন ওর একদমই কথা হয়নি ক্লাসের অন্য ছেলেদের সাথেও তাই। একদমই চুপচাপ টাইপের।
আমি এইবার কামান হাঁকালাম।
মেসেজ পাঠালাম- আমাকে তোমার কেমন লাগে তা তো জানি না, কিন্তু তোমাকে না আমার অনেক ভাল লাগে।
ও না সেদিন অনেক অবাক হয়ে গিয়েছিল।
মেসেজিং পর্ব ওখানেই খতম। ফোন দেবার সাহস হয়নি।
৬.
ঠিক করলাম পরের দিন ওকে ফোন দিব। বারটার পর ও জেগে থাকেনা। ঠিক করলাম ঠিক ১২ টার সময় কল দিব।
কিন্তু কি কপাল। ওইদিন দাওয়াত পড়ল। আব্বু আম্মু নড়তে চড়তে চায়না। এদিকে রাত বেড়ে যাচ্ছে, সাথে চক্রবৃদ্ধিহারে বাড়ছে আমার অস্থিরতা। ড্রাইভার ছিল না। ড্রাইভার না থাকলে গাড়ি ড্রাইভ করার ভার আমার উপর পড়ে। আমার অস্থিরতা নিবারণ করার তখন এক্টাই উপায়। গাড়ির এক্সিলেটরে জোরসে পা দাবালাম। পিছন থেকে অনেক হউকাউ শুনতে পেলাম। আম্মু সমানে কাওমাও করছে আর আব্বু একটু পর পর ঝাড়ি লাগিয়ে স্পিড কমাতে বলছে। কে শোনে কার কথা।
বাসায় ফিরে দেখি ১২.৫ কি ১০। কল দিলাম। ঘুম ঘুম কন্ঠে ও ফোন ধরল। এক কি দেড় মিনিট ফোন ধরে ছিলাম। আমিও কিছু বলতে পারিনা সেও কিছু বলতে পারেনা। একটু পর ফোন রেখে দিলাম। এতক্ষণের অস্থিরতা মাত্র দেড় মিনিটে খেয়ে ফেলল।
৭.
২০ই মার্চ শুক্রবার। ছোটখাট মেসেজ পাঠিয়েই দিনটা পার করে দিলাম।
২১ই মার্চ। অদ্ভুত একটা দিন। দিনটা ছিল ভালবাসায় যে প্রপোজ করতে হয় তা দুদিন আগে জানা একটা ছেলের দিন। ছেলেটা সকালে হোস্টেলে চলে গেল। গিয়ে দেখল সজীব সামি কেউই নেই। ফোন দিল ওদেরকে। ওরা বলল ফিরতে একটু দেরী হবে তুই ওয়েট কর। ছেলেটা অপেক্ষা করতে লাগল। তার কিছুক্ষণ পর ছেলেটার কি জানি মনে হল।
ছেলেটা ওর ভালবাসার মানুষটাকে ফোন দিল। দুদিন আগে একটা জিনিস শিখে ছেলেটা ওটাই করে বসল। সে তার ভালবাসার মানুসটাকে কাঁপা কাঁপা গলায় বলে ফেলল আই লাভ ইউ…………
থেমে যাওয়া কিছু সময়। নিজের হৃদপিন্ডের আওয়াজ যেন শুনতে পারছি। দেহের প্রতিটা কোষের কম্পন অনুভব করছি জোরেশোরে। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে কপালটা চিক চিক করছিল নিশ্চিত। ফোনের ওপাশের মানুষটা একদমই চুপ। নিঃশ্বাসের আওয়াজও পাওয়া যাচ্ছেনা। ওর কাছ থেকে হ্যাঁ না শুনতে চাওয়া নিছক বোকামি হবে বুঝতে পেরে ফোন রেখে দিলাম।
সজীব সামি ফিরল। ভার্সিটিতে হাঁটতে বের হলাম। হাঁটতে বলে দিলাম ভালবাসার পয়গাম পৌছানোর কাহিনী। শুনে সজীব রাস্তায় বসে পড়ল। সামি গিয়ে পড়ল রাস্তার ধারের শুকনো ড্রেনে।
শিষ্য যে হাজার কিলোমিটার বেগে প্লেন হাকাবে তা গুরু বাস্তবিকই কল্পনা করতে পারেনি।
৮.
যত সহজ ভেবেছিলাম সবকিছু সেরকম সহজ হলনা মোটেও। নিজের উপর মত্রাতিরিক্ত কনফিডেন্সের কারণে তরতর করে এগিয়ে যাচ্ছিলাম। আস্তে আস্তে বুঝতে পারলাম ওদিকেও একজন আছে। কিছু না বুঝেই ওকে ভালবেসে ফেলেছি। ওকেও তো আমাকে ভালবাসতে হবে, ভালবাসাতে হবে।
পরের দিনগুলো কঠিন ছিল। শুধু কঠিন না বেশ কঠিন। আমার দিক থেকে যেরকম ঝটপট ওর দিক থেকে রেসপন্স সেরকমই কম। দিনের পর দিন পার হয়ে যেতে থাকে হ্যাঁ বা না কোনরকম উত্তরই পাইনা। শুধু মাঝে মধ্যে নিরাশার কিছু মেসেজ পাই, ও ওর ফেমিলির মত ছাড়া কোন কিছু কল্পনাই করতে পারেনা এই টাইপের।
আমিও ছাড়ার পাত্র না। লেগে থাকি দিন রাত। কথা একদমই হয়না। মেসেজই ভরসা। রুটিন করে প্রতিদিন রাত ১২ টায় ফোন দেই একবার। আধা মিনিট কথা বলি, একমিনিট চুপ করে থাকি তারপর ফোন রেখে দেই।আমার বুকের ভেতরে আশা একটাই ছিল ও আমার প্রত্যেকটা মেসেজ এর উত্তর দিত কেবল আমাকে ভালবাস কিনা এই প্রশ্ন করে করা মেসেজ গুলো ছাড়া।
দিন যায়, সপ্তাহ যায়। মনের ভিতরটা অস্থিরতার ভান্ডার হয়ে ওঠে ধীরে ধীরে। দুই তিন দিন নরমাল মেসেজ পাঠাই। কি কর? শরীর কেমন? খাওয়া দাওয়া করস? এর পরেই আবার মনের অস্থিরতাকে সামাল দিতে না পেরে বাঁধ খুলে দেই। পাঠাতে থাকি একের পর এক ভালবাসার বার্তা। নিজের অস্থিরতাকে পূঁজি করে অস্থির করে তুলি ভালবাসার মানুষটার হৃদয়। কখনও ছলাকলায় কখনও বা সরাসরি জানতে চেয়ে বসি আমাকে ভালবাস?
ভালবাসার বার্তা প্রেরণে নিপুন ভাবে আমি প্রেরক আর ও গ্রাহক রয়ে যায়। এর উল্টোটা হয়ে উঠেনা কখনো। ভুলেও হয় না।
বেশীদিন কিন্তু হয়নি। একমাসও হয়নি পুরোপুরি, কিন্তু এর মধ্যেই আমার উন্মাদ হবার দশা। পড়ালেখা কাকে বলে ভুলে গিয়েছি। চোখ থেকে ঘুম যে কোথায় পালিয়ে গেল কে জানে? সারা রাত জেগে জেগে ভালবাসার মানুষটাকে মেসেজ পাঠানোই আমার নেশা। চোখের পাতা এক করা মুস্কিল হয়ে পড়ল দিনকে দিন। ক্লাস লেকচারের খাতা গুলো ভরল না একদমই। সারাদিনই হয় ঘোর না হয় অস্থিরতার মধ্যে কাটে। বাসায় ভাল লাগেনা মোটেও। হোস্টেলে চলে যাই। রাত ভর ভালবাসার গান শুনি সজীব, সামির ঘুমের বারোটা বাজিয়ে। পাগল বন্ধুর এহেন অত্যাচার হাসি মুখেই ওরা সহ্য করে যেতে থাকল।
শরীরের চেয়ে মনের ব্যরাম অনেক ভয়ংকর। আমি পুরোই বেখেয়াল হয়ে গেলাম। আশে পাশে কি ঘটে না ঘটে কিছুরই খবর থাকেনা। বন্ধু বান্ধবরা আমার অবস্থা দেখে শংকিত। একটা কথাই বার বার মনে করিয়ে দেয়, রাস্তা পার হবার সময় খেয়াল করে পার হোস।
রাতে ঘুম হয়না। খাবার দাবারে রুচি উঠে গিয়েছে। না ঘুমিয়ে না খেয়ে চেহারা হয়ে গেল দেখার মত। ওদিকে আমার ভালবাসাটা আমাকে দেখে আর শুধু অস্থির হয়ে উঠতে থাকে কিন্তু কিছুই বলেনা। একদিন শুধু ক্লাসের শেষে বলেছিল আমিত তোমাকে নেগেটিভ কিছু বলিনি তুমি এরকম করছ কেন? সব কিছুত শেষ হয়ে যায়নি। আমি গোঁয়াড়ের মত উত্তর দিয়েছিলাম তুমিত পজেটিভ কিছুও বলনাই।
৯.
৫ই মে। আমার ভালবাসা দিবস। আমি যে ভালবাসার বিশাল সনদ রচনা করেছিলাম ওখানে এই দিন সিলমোহর পড়েছিল।
ভার্সিটি থেকে বাসায় ফিরে ঘুমানোর চেষ্টা করেছিলাম। ঘুম বোধয় আসেনি। সন্ধ্যার দিকে শরীর প্রচন্ড খারাপ করল। দেহটাকে যেন আর চালাতে পারছিলাম না। আমার যে কেরোসিন অবস্থা সেটা ও ক্লাসেই দেখেছিল। ভেংগে পড়া দেহটার ভেতর যে তাজা আর ভালবাসায় ভরা একটা হৃদয় সেটাকে সহায় করে একের পর এক মেসেজ পাঠাতে লাগলাম। আমার করুণ অবস্থা আঁচ করতে পেরে ও বলে ফেলল, তুমি যা করতে বলবে আমি তাই করব।
আমার উত্তর রেডী করাই ছিল। বললাম তুমি যে আমাকে ভালবাস সেটা তোমার মুখ থেকে শুনতে চাই। রাতের বেলা ওকে ফোন দিলাম, ও কথাটা বলতেই পারেনা। শুধু বলে আমাকে একটু হেল্প কর, আমি বলতে পারছিনা। আমিও কথা বের করার জন্য চাপ দিতে থাকি। অনেক চাপাচাপির পর ওর মুখ থেকে বের হয়ে আসে আই লাভ ইউ।
আমিও আজিব ধরণের গোঁয়ার পাব্লিক। এটুকু শুনেই ক্ষান্ত হইনা। জিগেস করতে থাকি অল্প ভালবাস নাকি অনেক অনেক ভালবাস। ও কিছুতেই আর কিছু বলতে চায় না। ওদিকে আমিও ছাড়িনা। ও হঠাৎ করে অনেক অনেক বলে ফোন কেটে দিল।
কি জানি একটা পুরো শরীর ছুয়ে গেল।
৬ই মে। ক্লাসে গেলাম, কোন কথা হলনা ওর সাথে। বাসায় ফিরলাম। সন্ধ্যায় মেসেজ পাঠালাম। ডেলিভারি রিপোর্ট আসেনা। ফোন দিলাম। ফোন বন্ধ। সারাটা রাতই ওর ফোন বন্ধ ছিল।
আমি না অনেক কষ্ট পেয়েছিলাম সেদিন। অনেক অনেক।
১০.
আমি যেভাবে অবলিলায় ভালবাসার কথা প্রকাশ করতে পারতাম ও সে ভাবে পারতনা মোটেও। ওই যে একবার আই লাভ ইউ বলল এর পর আর কোন নাম গন্ধ নেই। প্রথম প্রথম সবাই বেশ সাবধানী থাকে। আমার দিক থেকে সাবধানতা অবলম্বন করার কিছু ছিল না। কিন্তু ওর দিকটা ভেবে আমিও সাবধান হয়ে চলতাম। ক্লাসে কোন কথা হয় না বাসায় গিয়ে ফোনে টুক টাক।
এর মধ্যে ওর কাছ থেকে কিছু ভালবাসার কথা আদায় করে নিয়েছি। ওগুলাও এমনই সাবধানী টাইপের ছিল যে দেখলে হাসবেন। যদি কখনও বলত আমি তোমাকে ভালবাসি তবে কথাটা আসত তিন খন্ড হয়ে। প্রথম মেসেজে “আমি”, ২য় মেসেজে “তোমাকে”, ৩য় মেসেজে “ভালবাসি”। শর্ত স্বরূপ আগে আরেকটা মেসেজ আসত যে মেসেজ গুলো ডিলিট করে দিতে হবে।
মাঝে মাঝে চাপাচাপি করলে মেসেজ আসত “ভালবাসি”। শুধু এটুকুই। কাকে ভালবাসি, কি ভালবাসি কিচ্ছু নেই। জিগেস করতাম কাকে ভালবাস? চেয়ার, টেবিল না খাট, নাকি আমাকে? শুনে মিষ্টি করে হাসি দিয়ে আমার ভুবন ভুলিয়ে দিত।
দিন গড়িয়ে টার্মের শেষ দিন এসে পড়ল।
সব মেয়েরা ফিমেইল হোস্টেলে থাকবে।আমিও মওকা খুঁজছি। হোস্টেলে থেকে গেলাম। ক্লাস থেকে বেরুবার সময় অনেক সাহস নিয়ে ওকে বলে ফেললাম সন্ধ্যার পর একটু নিচে নেমো। উদ্দেশ্য ছিল ওকে প্রথম বারের মত সামনা সামনি আই লাভ ইউ বলব।
তারেকও ছিল আমাদের সাথে। সজীব, সামি কোন কাজে বাইরে ছিল। আমি তারেক কে সাথে নিয়ে ফুল কিনতে গেলাম। ওহ একটা কথা বলতে তো ভুলেই গিয়েছি। অল জেন্টস ক্লাবের প্রেসিডেন্সি আমি তারেকের কাধেই বর্তে দিয়ে এসেছিলাম।
রিকশা করে ফুলের দোকানে গিয়ে ৩ টা লাল গোলাপ কিনলাম। তখন মাত্র সন্ধ্যা নেমেছে। ফুল কিনে ফিমেইল হোস্টেলের একটু দূরে দিয়ে দাঁড়ালাম। ভালবাসার মানুষটা আসবে। ওকে ৩ টি গোলাপ দিয়ে মনের ভালবাসা উজাড় করে আই লাভ ইউ বলব এটাই ইচ্ছা। মেসেজ করলাম, কাউকে সাথে নিয়ে নিচে নামার জন্য। বলল নামতে পারবেনা। আমি হতবাক!! পরে শুনেছিলাম ওরই এক বন্ধু!! ওকে নামতে দেয়নি। এটাও জানত যে আমি দেখা করার জন্য পাগল হয়ে আছি, তা জেনেশুনেই নামতে দেয়নি।
এর পর দুই একটা মেসেজ পাঠালাম। আর কোন বাৎচিত হলনা। আমি, তারেক কে নিয়ে ওখানেই রয়ে গেলাম। কিছুক্ষণ পর সজ়ীব আসল, তার কিছুক্ষণ পর সামি আসল। আমার ওইখান থেকে নড়তে ইচ্ছে হচ্ছিল না। আমার অবস্থা দেখে সজীব, তারেক, সামিও রয়ে গেল।
রাত সাড়ে ১০ টা কি এগারটা পর্যন্ত ওখানে ছিলাম। হোস্টেলে ফিরবার সময় মেসেজ পাঠালাম আমি চলে যাচ্ছি। ও জিগেস করল হোস্টেল থেকে চলে যাচ্ছ? আমি বললাম না, তোমার জন্য যেখানে এসে দাঁড়িয়ে ছিলাম ওখানেই এতক্ষণ ছিলাম। ওখান থেকে চলে যাচ্ছি।
সাথে আরেকটা মেসেজ পাঠালাম, “জানো তোমার জন্য না ৩ টি গোলাপ এনেছিলাম, লাল গোলাপ”।
সাথে সাথেই ওর ফোন আসল। হাউমাউ করে কান্না। থামেনা আর।
আমারও মনটা বেজায় খারাপ ছিল। সবার সামনে তো কাঁদতে পারিনা। হোস্টেলের ছাদে দিয়ে হাউমাউ করে কানলাম।
একের পর এক মেসেজ যেতে আসতে থাকে। কান্না চাপতে না পেরে হাই ভলিউমে গান ছেড়ে বালিশ চাপা দিয়ে কান্না করি। ওদিকে ও ও সমানে কান্না করছে। ওর ব্যলেন্স একসময় শেষ হয়ে আসে। এদিক থেকে মেসেজ পাঠানো বন্ধ হয়না।
সকালে নাস্তা করতে বের হলাম, পকেটে মরে যাওয়া কালচে তিনটি গোলাপ। ও বার বার বলছে গোলাপ গুলো দেবার জন্য। কিন্তু আমি দিতে চাচ্ছিলাম না। বলছিলাম ফুল গুলো তো মরে গেছে। তবুও ও চেয়েই যাচ্ছিল।
নাস্তার মাঝে ফোন আসল হোটেল থেকে বাইরে আসবার। বাইরে এসে দেখি আমার ভালবাসার জানুটার দিকে তাকানোর উপায় নেই। সারা রাত কান্নাকাটি করে আর জেগে থেকে চোখ টোখ একদম ফুলে গিয়েছে। কাঁপা কাঁপা হাতে গোলাপ ৩ টি ওকে দিলাম।
এই যে কষ্ট গুলো এগুলো আমার ভালবাসার গৌরব, আমার ভালবাসার অলংকার। কেন একথা বলছি? এসব ঘটনার পরই ভালবাসা আমাদের মধ্যে এসেছে দ্বিগুন, তিনগুন কখনও বা আরো বেশীগুন হারে।
১১.
এরপর আর কোন কষ্টের ইতিহাস নেই। আজ আবধি যা আছে সবই ভারপুর ভালবাসার ঘটনা। একজন আরেকজনকে দূর্বার গতিতে আপন করে নেবার গল্প।
কি দূর্দান্ত দিন গুলোই না গিয়েছিল তখন। রাতে গাড়ির গ্যাস নিতে গিয়ে বনানী থেকে মিরপুর চলে যেতাম। ওর বাসার সামনে গিয়ে ফোন দিয়ে গাড়ির হর্ন বাজিয়ে বলতাম হর্ণ শুনতে পাও? রাত তখন বারোটা বাজি বাজি করে। ও পাগলের মত আমাকে আই লাভ ইউ বলতে থাকত। বলতে বলতে কেঁদে দিত। দু তিন মিনিটের জন্য ওর বাসার সামনে গিয়ে ওর কাছ থেকে বহু ভালবাসায় জর্জরিত হতাম। মাঝে মধ্যে এমনি এমনি ওর বাসার সামনে চলে গিয়ে ফোন দিয়ে ছাদে আসতে বলতাম। ও উপরে আমি নিচে। ফোন দিতাম। ওকে যে অনেক বেশী ভালবাসি তা বলতে থাকতাম। কেন জানি আমাদের দুজনের চোখই পানিতে ভিজে যেত।
দিন এভাবেই কেটে যেতে লাগল। ওই দিনটার কথা মনে পড়ে যেদিন কাওসার ওকে আর আমাকে রিক্সায় উঠিয়ে দিয়েছিল। কাওসার উঠিয়ে না দিলে আমি নিজে কবে উঠতে পারতাম কে জানে?
সেইদিনের কথাও মনে পড়ে যেদিন প্রথম ওর হাত ধরেছিলাম। টার্ম ফাইনালের শেষ এক্সাম ছিল। রিক্সায় করে এক জায়গায় খেতে যাব প্রথমবারের মত। রিক্সা কিছুদূর চলার পর ওকে বললাম তোমার হাতটা দাও। ও লক্ষী মেয়ের মত হাত দিয়ে দিল। আমি আমার সমস্ত ভালবাসা দিয়ে ওর হাত চেপে ধরলাম। ওর হাত অসম্ভব রকম কাঁপছিল। ওইদিনের অনুভুতি সারা পৃথিবী বিক্রি করে দিলেও পাওয়া যাবেনা। আমি না একটি বারের জন্যও ওর দিকে তাকাতে পারিনি। তবুও বুঝতে পারছিলাম ওর চোখের কোনায় জমেছিল অস্বাভাবিক ভাললাগার অনুভুতি সহ্য করতে না পেরে বেরিয়ে আসা জল। বুঝতে পেরেছিলাম কেননা আমার চোখের কোনাতেও ছিল হৃদয়ের অনুভুতি চুয়ে পড়া পানি।
১২.
আমরা দুজন দুজন কে আপন থেকে আপনতর করে নিতে থাকলাম। একসময় বুঝতে পারলাম আমি ওকে যতটা ভালবেসেছি ও আমাকে তারচেয়েও বেশী ভালবেসে ফেলেছে। ভালবাসা যতটুকু দিতে থাকলাম পেতে শুরু করলাম তার চেয়ে বেশী। আজ পর্যন্ত এটাই বহাল আছে।
আমি দ্রিঘাংচুকে ভালবাসি, কুটুমুটু জানকে ভালবাসি, বাদুড়কে ভালবাসি, ঝুনঝুনি বেগমকে ভালবাসি, জন্টি জানকে ভালবাসি, টুনটুনি বেগমকে ভালবাসি, চটপটি বেগমকে ভালবাসি, বাজুকা বেগমকে ভালবাসি, জামকে ভালবাসি, এলিয়েন কে ভালবাসি, লাবলু জানকে ভালবাসি, চিকেন রোলকে ভালবাসি, কাবাব বেগমকে ভালবাসি, ব্রোকেন চিক সুইট জানুকে ভালবাসি, গাল ভাংগা সুইট পিচকুকে ভালবাসি, জান্টুকে ভালবাসি, পিচকুকে ভালবাসি, ট্যাবাকে ভালবাসি, বুচিকে ভালবাসি, ছোটকু কে ভালবাসি, পুতুলকে ভালবাসি, আমার পরীটাকে ভালবাসি।
ভাবলেন কি আবল তাবল বকা শুরু করলাম!!!!
আবোল তাবোল না। এগুলো ওকে বিভিন্ন সময় আমার দেয়া নাম। বেশীর ভাগই অদ্ভুত ঠেকছে কিন্তু প্রত্যেকটা নামেরই শানে নুযুল আছে। সেগুলো নাই বললাম।
ওর নামটা আসলে কি জানেন? থাক সেটা জনারও দরকার নেই।
আমি আমার হিয়াকে সবচেয়ে বেশী ভালবাসি।
শেষ কথা
এত্ত নরম মনের একজনকে নিজের করে নিচ্ছি ভাবলেই বুকটা একদম ভরে যায়। স্পষ্টই দেখতে পাচ্ছি লেখাটি পড়ে হিয়া হাপুস হুপুস করে চোখের পানি ফেলছে। ওর মনটা না এমনই নরমের নরম একটু কিছুতেই কান্না করে ফেলে। আমার জ্বর হল ওমনি কান্না। আমি একটু অভিমান করলাম ওমনি কান্না। সুন্দর একটা মেসেজ পাঠালাম আবার কান্না।
দুটো বছর হতে চলল প্রায়, অবিশ্বাস্য ভাবে ঝগড়া হয়নি একবারও। মান অভিমান হয় মাঝে মধ্যে তাও ওটা মনে হয় সাধের ভালবাসাটাকে আরো ফুলিয়ে ফাপিয়ে বড় করার জন্য। কথা বার্তা, মেসেজিং বন্ধ ছিলনা একটা দিনের জন্যও। যদিও আমি দু কি তিন বার রাগ করে মোবাইল কয়েক ঘন্টার জন্য বন্ধ রেখেছিলাম, সেটা আমিই করেছি, ও এক বারের জন্যও নয়। মাঝে শুধু নেপাল বেড়াতে গিয়ে আমার চৌদ্দটা বাজিয়েছিল। যার সাথে কথা ছাড়া থাকতে পারিনা একটা বেলা, সেবার কথা ছাড়া থাকতে হয়েছিল পাক্কা ৩ দিন। ওর বন্ধ করে রেখে যাওয়া মোবাইলটার ইনবক্স ভরেছিল আগের মতই।
এখনকার অবস্থাও শোচনীয়। পাশ করে ফেলেছি। আগের মত প্রতিদিন আর দেখা হয় না। দু জন দুজনের বিরহে ভীষণ ভাবে কাতর। একজন আরেক জনকে মিস করতে করতে জান ফালা ফালা হয়ে যাচ্ছে।
ভালবাসায় সিক্ত হতে হতে একটা জিনিসই ভাল মত বুঝে ফেলেছি। ওকে ছাড়া আমি বাঁচবনা। সিনেমার ডায়ালগ হয়ে গেল তাইনা? হোক তাতে আমার কোন সমস্যা নেই। ওকে যদি জিগেস করেন তাহলে ও ও বলবে আমাকে ছাড়া ও বাঁচবেনা। এই কমার্শিয়াল যুগে এমন পুরান কালের সিনেমার ডায়ালগই বা কয়জন শুনতে পায়।
যা বলেছিলাম। ভালবাসার যে ক্ষেত্র আছে ওখানে নিজেকে মোঘল মনে করি। মোঘল ঠিক না, মোঘল বাদশা। জানি অনেকেই এমন টা মনে করে থাকেন। কিন্তু আমি নিজেকে সব বাদশার বাদশা মনে করি। কেন ভাবি তা বুঝতে পেরেছেন আশা করি।
আমি হলাম ভালবাসার প্রবাদ পুরুষ, কিং অব লাভ।
একটি সুন্দর আর সুখী ভবিষ্যতের প্রত্যাশায় এই বিশাল পৃথিবীতে দুজন ক্ষুদ্র মানব মানবী যারা বিশ্বাস করে সঠিক সময়ে, সঠিক স্থানে তারা এসেছে এবং তারা সৃষ্ট হয়েছে একে অপরকে ভালবাসার জন্য।
লেখাটি পূর্বে "ভালোবাসি" - ভালবাসা দিবস ২০১০ উপলক্ষে সঙ্কলন-এ প্রকাশিত
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:১৯