বুড়ো ব্লগারদের দুর্দিন দেখে প্রায়ই দুচোখ ভরে পানি চলে আসে আমার। এই তো সেদিন একজন বুড়া ব্লগার তার নাম বলছি না তাকে হেয় করতে চাইছিনা তাই, একগাদা বাংলা সিনেমা দেখে ফেসবুক স্ট্যাটাস দেয়া শুরু করলো। আমি জিজ্ঞেস করলাম, হঠাৎ বাংলা সিনেমা দেখা শুরু করলেন?! উনি অনেক একথা সেকথা বলার পর বললেন যে উনি মুভি রিভিউ লিখবেন তাই উনি রিকশাওয়ালার ছেলে, কোটি টাকার কাবিন, এক টাকার বউ এবং পাগলু২ দেখে ফেলেছেন অলরেডি। যাই হোক, বন্দুকের গুলি যেমন বের হলে ফিরে আসে না তেমনি চেষ্টা করলেও পুরাতন ব্লগার কেউ আর ফিরে আসতে পারে না। উনিও তাই চেষ্টা করে ও রিভিউটা শেষ করতে পারলেন না আর ব্লগে রেগুলার হবার যে ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন, কয়েকটি মুভি রিভিউ দিয়ে সেটাও আর হল না।
আরেক ব্লগার আছেন উনার নামটাও বলছি না শ্রদ্ধার খাতিরে। ওই ভাইয়া তো আগে ব্লগে কেউ পোস্ট দিলেই খুত খুত মন্তব্য করতেন। আর আজকাল উনি দুনিয়ার সব বিষয়ে উনার বিরক্তি প্রকাশ করেন ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়ে! এই যেমন- বৃষ্টি কেন আসলো! কেন আসলো না!
বিদ্যুৎ গেছে কই, পানি নাই, রিকশাওয়ালা কোনোখানে যেতে চায় না, কয়দিন ধরে চা খেয়ে বেসচে আছি, সরকারের কোন কাজ নাই, বিরোধীদল এইটা কি করলো! কি আছে জীবনে! ধুর! এই জীবন আর ভাল্লাগে না, বাংলাদেশ এইটা কি খেললো! অমুকের চেয়ে আমাকে মাঠে নামাইলে খেলা দেখাইয়া ছাড়তাম... হাফ লেডিস শাকিব খানরে পাইলে অভিনয়ের সাথে সাথে ড্যান্স শিখায়ে ছাড়তাম...ফারুকীরা এইটা কি শুরু করেছে...
এইবার আসি আমার কথায়। আমি আগে থেকেই যা ঘটতে দেখতাম ওটাই লিখে ব্লগাতাম। এখনও সেই চেষ্টাই করি কিন্তু সময় সুযোগ এবং ইচ্ছার স্বল্পতার জন্য হয়ে ওঠে না। ব্লগে এসে লুল শব্দটার উৎপত্তি হতে দেখেছিলাম। আমার এক ভার্সিটি ছোটবোন আছে যার কাছে যদি কোন ছেলে জিজ্ঞেস করে তোমার ছোটবোন কোন ক্লাসে পড়ে, সে তাকে বলবে, কেন তুই আমার ছোটবোনের সাথে ফ্লার্ট করবি! যদি বলে, তোমার মা কেমন আছে, এটারও সে লুলামির সাথে সম্পর্ক খুজে বের করবেই! বাসে একা খুলনা যাচ্ছি শুনলেই সে প্রথমে জিজ্ঞেস করবে, পাশে কে? মহিলা নাকি লোক?
এর এ জাতীয় আচরণে আমি এক সময় বড়ই বিরক্ত হতাম। ভাবতাম দুনিয়াতে সব বিষয়েই সে লুল আর লুলামি কিভাবে খুজে পায়!
আমাদের অফিসে ইন্টার্নশিপ করতে এসেছিল একটা ছেলে। একদিন আমরা খবর পেলাম ছেলেটার বাবা সুইসাইড করেছে। আমি নতুন ছিলাম তাই লোকটাকে চিনতাম না। কয়েকজন কলিগ বিভিন্নভাবে চেনানোর চেষ্টা করলো, ওই যে একটা বয়স্ক লোক... প্রায়ই আসে, সাথে প্রায়ই অল্পবয়স্ক মেয়ে থাকে... এই ঘটনার এক সপ্তাহ পরে এক কলিগ আমাকে বলছে অমুকের আব্বা নাকি সুইসাইড করেছে! ওই তো সামনে... এবং সাথে একটা ১৯/২০ বছর বয়সী মেয়ে।
লোকটা চলে যাবার পরই অফিসের এক নির্বোধ বস ওই ছেলেকে ফোন করলো, অমুক তোমার বাবার এগুলো কি! প্রতিদিন নতুন নতুন মেয়ে নিয়ে ঘুরে যায়! লোকে কি বলে তোমরা তোমার বাবাকে বোঝাতে পারো না?! দ্যাখো আমাদেরও চল্লিশের পর কিছু সমস্যা হয়েছে কিন্তু আমরা নিজেকে কন্ট্রোল করি... (দুঃখজনক ব্যাপার হল ওই ছেলেটাই সুইসাইড করতে গেছিলো বাবার এই স্বভাবের জন্য)
মানুষের কমনসেন্স এর প্রয়োজনীয়তা কতখানি এই ঘটনা আমাকে আমার উপলব্ধি করিয়েছে!
এই পোস্টের টাইটেলটির কৃতজ্ঞতা ব্লগার মানুষ।