ঢাকা, নভেম্বর ২৯ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- 'বলাকা' ভাস্কর্য শনিবার রাতে ভাংচুর চালিয়েছে উলামা আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত নামে ইসলামী একটি সংগঠনের কর্মীরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে, রাত সাড়ে ৯টার দিকে রাজধানীর মতিঝিল এলাকার ভাস্কর্যটির ওপর শাবল, হাতুড়ি, হামানদিস্তা নিয়ে হামলা চালায় শতাধিক আল বাইয়্যিনাত কর্মী। তারা বলাকা ভাস্কর্যের ছয়টি বকের মূর্তির ১২টি পা-এর পলেস্তারা খসিয়ে দেয়। পরে পুলিশি বাধার মুখে তারা পিছু হটে।
ঘটনাস্থল থেকে আট জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
প্রত্যক্ষদর্শী এলিফ্যান্ট রোডের দোকান কর্মচারী গুলজার হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "পাঞ্জাবি পরা টুপি মাথায় প্রায় শ'খানেক লোক রাত সাড়ে ৯টার দিকে বলাকা ভাস্কর্যের ওপর চড়াও হয়। তাদের মধ্যে কয়েকজন ভাস্কর্যের ওপরে উঠে বকের গলায় দড়ি বাঁধে। বাকিরা সেই দড়ি নিয়ে টানাটানি করতে থাকে। আর কয়েকজন হাতুড়ি, শাবল দিয়ে বকের মূর্তিগুলোর ভিত্তি (পা) ভাঙার চেষ্টা চালাচ্ছিল।"
"ওই সময় কয়েকজন পুলিশ গিয়ে তাদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা চালালে তারা পুলিশের ওপরও চড়াও হয়।"
আরেক প্রত্যক্ষদর্শী মো. শাওন জানান, হামলার শুরুতে ওই এলাকায় থাকা স্বল্প সংখ্যক পুলিশ সদস্য বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। এরপর অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাঠিপেটা করে ভাংচুরকারীদের হটিয়ে দেয়।
ভাঙচুরকারীরা একটি লিফলেটও ছড়িয়ে দেয়। যাতে দেশ থেকে সব ভাস্কর্য, ছবি, মূর্তি ধ্বংস ও নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে।
মতিঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফজলুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "আল বাইয়িন্যাতের বেশ কয়েকজন কর্মী রাতে 'বলাকা' ভাস্কর্যে হামলা চালালে লাঠিচার্জ করে তাদের সরিয়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় আমরা কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছি।"
এদিকে এ ঘটনার তথ্য সংগ্রহের সময় পুলিশের লাঠিপেটায় যুগান্তরের সাংবাদিক সারওয়ার আলম আহত হয়েছেন বলে তিনি অভিযোগ করেছেন।
সরোয়ার আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "ঘটনাস্থলে তথ্য সংগ্রহের সময় পুলিশ এসে মারতে শুরু করে। বারবার সাংবাদিক পরিচয় দিলেও তারা মার থামায়নি।"
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম এর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রতিনিধি জানান, মতিঝিলে লাঠিপেটায় আহত আল বাইয়িন্যাতের আট কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য রাত ১১টার দিকে তাদের পুলিশি হেফাজতে হাসপাতালে নেওয়া হয়।
এরা হলেন, মো. হাসিবুর রহমান (২৮), মুফতি মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন (৩০), শাহ নেওয়াজ দীপু (৩০), মোহাম্মদ বিল্লাল (৪০), আব্দুল বারী (৩২), জিয়াউর রহমান (৩২), আরাফাত (২৩) ও মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী (৫১)।
মুফতি জাহাঙ্গীর সাংবাদিকদের বলেন, আল্লাহর হুকুম জারির জন্যই তারা ভাস্কর্যটি ভাঙতে গিয়েছিলেন।
মতিঝিল এলাকায় ১৯৮৯ সালে ৪১ ফুট উচ্চতার বলাকা ভাস্কর্যটি নির্মিত হয়।
এর স্থপতি মৃনাল হক ভাংচুরের নিন্দা করে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "শিল্প-সংস্কৃতির ওপর একের পর এক আঘাত আসছে। কিন্তু সরকার এ ব্যাপারে চুপচাপ। মৌলবাদীরা আমাদের শিল্প-সংস্কৃতিকে ধ্বংস করতে চায়। শিল্পী, সাহিত্যিক, সংস্কৃতিকর্মীসহ দেশের সব মানুষকে এখন মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।"
কিছুদিন আগে মৌলবাদীদের চাপের মুখে বিমানবন্দরের সামনে থেকে মৃনাল হকের বাউল ভাস্কর্য সরিয়ে নেয় সরকার।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/জিএমএ/এলএইচ/ডিডি/এমআই/০১১৭ ঘ.
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে নভেম্বর, ২০০৮ রাত ১:৪১