মৃত্যু থেকে আর মাত্র ৫ মিনিট দূরে দাঁড়িয়ে আমি। এই মুহুর্তে নিজেকে পৃথিবীর খুব ক্ষমতাধর মানুষ বলে মনে হচ্ছে। আমার হাতের মুঠোই রয়েছে আগামী কয়েকটি সময়। ধীরে ধীরে নাইলনের দড়িটার প্যাঁচগুলো খুলতে শুরু করেছি । সবকিছু শেষ করতে ৫ মিনিটের বেশি লাগার কথা না। জীবনে অনেকবার ঠকেছি, তাই ঠেকেছি বারবার। শেষ বারের মত দোকানী বোধহয় ঠকাতে চায়নি। পলাশী থকে কেনা নাইলনের দড়িটা বেশ সক্তই মনে হচ্ছে।
সিলিঙে ঝুলিয়ে দিতে পারলেই সব শেষ। আম্মু ও ঘরে নামায পড়ছে। শেষবারের মত আর একটি বার দেখতে ইচ্ছে করছে তাকে। নিশার(ছদ্ম নাম) কাছ থেকেও বিদায় নেওয়া হয়নি। ও বোধহয় কিছু আঁচ করতে পারেনি। পারেনি একেবারেই? কি করত সে জানলে? এসে প্রাণপনে বাধা দিত? নাকি চলেই যাব ধরে নিয়ে উপসংহার এ পৌছুত? এখনও চিনতে পারেনি তাকে। তবুও আকাশের দিকে বাড়িয়ে দিই আমার শেষ ভালবাসাটুকু।
শেষ টুকু আর লিখতে পারিনি। বরং চাইনি লিখতে। প্রতিনিয়ত ধৈর্যের বাধ ভেঙ্গে যাওয়া এ শহরের গলি ঘুঁপচিতে ঘটে যাওয়া এ দৃশ্যের শেষ প্রান্তটুকু অনেক বেশি সূঁচালো। দগদগে করে তুলে আপনাকে, আমাকে। সেই দগদগে দাগের রেখা না মুছে যেতে ছড়িয়ে যায় তা অন্যখানে।
আমাদের ঠিক পাশ দিয়ে হেঁটে চলে গেল তেমনি এক মানুষ। কোন এক ভোর সকালে জানান দিয়ে যায় আত্মহননেই শেষ অধ্যায় রচিত হয়েছে আমাদেরই পাশের অতিপরিচিত কোন মুখের। কারও প্রিয়। কারও বা অপ্রিয়, কারও আড্ডার সাথী, কারও বন্ধুপ্রতিম কোন বড় ভাইয়া কিংবা কোন প্রিয় মানুষের অলস বিকেলের সহচর।
চলে যাওয়া মানে প্রস্থান নয় টাইপের কথাবার্তা দিয়েই আমরা আমাদের আনুষ্ঠানিক দায়িত্তটুকু শেষ করি। ধরে নিতে থাকি ওরা যাবেই। শেষ পর্যন্ত জানতে চাওয়া হয়না কেন এই নিরব আত্মহনন? বুঝতে পারিনা কোথায় সেই একাকীত্ন , কোথায় এই নিসঙ্গতা? বুয়েটের মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়েও কোথায় সেই হতাশা?
এই লেখাটি শেষ করে আমিও হয়ত পড়তে বসব, কালকের টেস্টের জন্য। কিংবা যেতে পারি টিউশনিতেও। অথবা হাতে হাত ধরে বসে থাকতে পারি কোন প্রিয় মানুষের।
তবুও একবার হলেও কি সপ্তাহান্তে জানতে চাইতে পারিনা পাশের মানুষগুলোকে কোথায় সেই কষ্টটুকু? সেই একাকীত্ন? একবার অন্তত দাঁড়িয়েই পথ আগলে জিজ্ঞেস করতেই পারি, তোমার মন খারাপ কেন?
(কিছুদিন আগে আমাদের ছেড়ে চলে যাওয়া এক মানুষকে ভেবে লেখা )