এক.
বাড়ির নাম ক্ষণিকালয়। কিন্তু বাড়িটি সবার কাছে টু-লেট হাউজ নামে পরিচিত। কারণ এখানে যারা ভাড়া আসে তারা তিন মাসের বেশি থাকে না। কত জন যে এলো গেল কত যেন আসবে কে যানে। এ বাড়ির মালিক মোসাদ্দেক সাহেব রিটায়ার পুলিশ অফিসার। সৎ থাকাতে জীবনে কিছুই করতে পারেন নি। রিটায়ার এর পর পেনসনের সব টাকা দিয়ে এই দুতালা বাড়িটি করেন। এর একতলায় তিনি থাকেন। দু তলা ভাড়া দেন। এ বাড়িতে ভাড়া থাকার জন্য ৩ মাসের ভাড়া অগ্রীম দিতে হয়। আর ব্যাচেল নট এলাউড। তিনি নিজে থেকে ভাড়টিয়ার প্রোফাইল যাচাই করে ভাড়াদেন। শত হলেও পুলিশ অফিসার। এবারের ভাড়াটিয়াদের নিয়ে তিনি খুব খুশি। স্বামী স্ত্রী দুজন। সাথে ছোট্ট একটা বাচ্চা। সুখী পরিবার । এসব ভাড়াটিয়া সৌভাগ্যবান। বিদ্যুত বিল, পানি, গ্যাস সব কম খরচ হয়। আর ভাড়াটিয়া বৌটিকে তার মেয়ে অরুন্ধতির মত লাগে। যে এক্সিডেন্ডে মারা যায়। মেয়েটি গান করছে। আহা প্রাণটা ভরে গেল। কি মধুর কন্ঠ।
গলির মাথায় আসতেই সে শুনতে পেল দূর থেকে ভেসে আসছে মিষ্টি গানের সুর । তার কাছে মনে হলে এই সুরের জন্য সব কিছু ছেরে সাধু হওয়া যায়।সে যদি মোঘল সম্রাট হতো তাজমহল এমন কয়েকটা বানিয়ে ফেলত। গলির মাঝ বরাবর একটি দোতালা বাড়ি।সুরের রাগিণীর উৎস ওখানেই। বাড়ির যতই কাছে আসছে ততই তার কাছে গানের মূর্ছনা স্পষ্ট হয়ে উঠছে।সিড়ির ধাপ গুলো ধিরে ধিরে পার হয়ে উপরে উঠছে যত মনটা হারিয়ে যাচ্ছে মায়াবি আবেসে।খোলা দড়জা দিয়ে দেখা যাচ্ছিল আনমনে গান করছে একজন মায়াবতী । সে কখন তার পিছনে এসে দাড়িয়ে গান শুনছে টেরই পায়নি সুকন্ঠি সুরবালা।
আ- আ- আ- আ……………………….
সুরে ও বাণীর মালা দিয়ে তুমি
আমারে ছুইয়া ছিলে
অনুরাগ কুম কুম দিলে
দেহে মনে
বুকে প্রেম কেন নাহি দিলে
আমারে ছুইয়া ছিলে……………………..
বাহ! বাহ! কি ঝংকার ! তোমার গলায় যাদু আছে । তোমাকে কোয়েল না ময়না বলব?
আমার নাম রানু। রানুই বল।
ঠিক তাই! তুমি হলে আমার রানুনকুলাস ফুল!! সৌন্দর্য আছে সুরভী আছে আর আছে বুকে বিধা কাঁটার মত সুরেলা কন্ঠ।কাঁটা না মিষ্টি ছুরি বলব?
পাগল! তুমি আস্ত একটা পাগল!
পাগলইতো! তোমার প্রেমে!
তাই নাকি! তখনতো সবাই তোমাকে পাগল মজনু বলে খেপাবে!ঢিল ছুরবে!
লোকের নাক ফটিয়ে দিব!বলে দেখুক।
কেন কেন? পাগল হবার সক ফুরুৎ।
তা কেন হবে? কবি বলেন-
যখন সবই আমায় পাগল বলে
তার প্রতিবাদ করি আমি
যখন তুমি আমায় পাগল বল
ধন্য যে হয় সে পাগলামি।
রানুকে হঠাৎ জড়িয়ে বুকের কাছে টেনে নিল সে।ভালবাসায় সিক্ত কামুক ঠোট যুগল তার মায়াবি মিষ্টি ঠোট দুটোতে ছোঁয়াতে যাবে এমন সময় পাস থেকে আরেকটি সুরেলা কন্ঠ চিৎকার করে তার অবস্থান জানান দিল।
ওয়া ওয়া ওয়া
দেখ আরেক পাগল ক্ষেপেছে! দু পাগল কি করে সামলাই!ঠেলে সরিয়ে দিয়ে উঠে দাড়াল রানু।
তুমি আমার জন্য চা নিয়ে আস। আমি ওকে দেখছি।
তুমি পারবে ওকে সামলাতে?
কেন পারনা! একশবার পারব! আমি ওর আব্বু হই।
তাহলে সামলাও । আমি রান্না ঘরে গেলাম।
বাবু সোনা, চাদু সোনা, কুটু কুটু কুট!
ওয়া ওয়া ওয়া!
আব্বু সোনা, কাদে কাদে না!
ওয়া ওয়া ওয়া
কি মসিবত এর কান্নাতো থামছেই না। রানু রানু রানু!
কি হল? এতটুকুতেই দম শেষ!
না বাবা ! বাচ্চা কাচ্চা সামলানো বেটা ছেলেদের কাজ না! তুমি ওকে নাও চাটা বরং আমি বানাচ্ছি।
পারবে?
ঠিক পারবো? ওরে বাপরে! হাত পুরে গেলোতো!
না রান্না বান্নাও তোমাদের কাজ!
জনাব শুধু রান্নাবান্না কেন? আমরা এখন সব করতে পারি।
সব পারো বুঝি!
হ্যা সব পারি! সুযোগ দিয়ে দেখো একবার!
সবার জন্য সব কাজ নয়!
আচ্ছা পরীক্ষা হয়ে যাক!
ঠিক আছে! ঐ সুটকেসটা একটু তুলে দেখাও!
এ আর কঠিন কি? এক্ষুনি তুলে দিচ্ছি।ওরে বাবা!কত্ত ভারী!
তোল তোল!
তু-ল-ছি তো! নাহ! অনেক ভারী!
তোমার কাপর চোপর দিয়েই তো ভারী করেছ।বুঝ এবার! কি বোঝা বহন করতে হচ্ছে আমায়।
এসব তোমাদের কাজ তোমাদেরই করতে হবে।
তাহলে স্বিকার করলে যে, সকল কাজ সবার জন্য নয়।
তা আর বলতে!! তবে নারী ভারউত্তোলক কিন্তু আছে!
তেমন কিন্তু ছেলে কুকও আছে! তা বলি কেন! বিশ্বে কিন্তু এক নম্বরে আছে মেল কুক। টমি মিয়ার নাম শুনেছ?
বাদ দাওতো টমি টামি! পারি না পারি আমরা আমরাই! আমরা আমাদের মত সুখী।
ঠিক বলেছ আমাদের ঘর আমাদের জান্নাত! আর এ জান্নাতের অমূল্য রত্ন হলে তুমি আর আমার আব্বু সোনা।
হা হা হা বলে হেসে উঠল ওরা দুজন। এভাবেই খুনসুটিতে তাদের জীবন কেটে যাচ্ছিল।কিন্তু এত সুখের মাঝেও তাদের একটাই দুঃখ। মা-বাবা থেকেও তাদের কাছে না পাওয়া।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুন, ২০২০ দুপুর ২:৫০