এই সময় গায়ে একটু জ্বর হলে যে কি হয় তা টের পেলাম আসে পাসে সবার আচরনে।না বাসায় সমস্যা না। সমস্যাটা অফিসে। বসে ছিলাম বসের পাসে বসকে বললাম আমার গাটা গরম লাগছে। মনে হয় জ্বর আসছে। বাস তরাক করে লাফ দিয়ে দুরে যেয়ে বসল। অথচ আগে বস গায়ে হাত দিয়ে দেখত। এখন আতংক সেই কার্টিসি নষ্ট করে দিয়েছে।
ঠাট্টা করে হোক বা বাস্তবিই একজন সহকর্মীকে দেখলাম হাসতে হাসতে বলছেন, আপনার থেকে দুরে থাকতে হবে। আমার কাছে ঘেসবেন না। আমাকে টার্চ করবেন না। যাই হোক ব্যাপরটা খুবই শকিং। যে সময় পাসে থেকে সবার সেবা পাবার কথা আচ্ছা সেবা না হোক দোয়া করার কথা। বা আত্মবিশ্বাসী করার জন্য দুটা ভাল কথা বলার কথা। তা না করে উপেক্ষা করা। আমাদের দেশে করোনা রোগে মানুষ মরছে না বলে আমার বিশ্বাস। মরছে অবহেলা আর উপেক্ষা ভাইরাসে।
অনেক আগে কোয়ান্টাম কোর্স করেছিলাম। সেখানে গুরুজি বলেছিল। মানুষের ছোয়ায় যে হিলিং এটি একটি শক্তি। যা সষ্ট্রার দান। শুধু ছোয়া কেন তাদের মনোবল বৃদ্ধি করে এমন কথাও হিলিং। পজেটিভ কথায় রোগ অর্ধেক সেরে যায়। হাদিসে আছে রাসূল (সা.) বলেছেন, শুশ্রুষার পূর্ণতা হলো- রোগীর কপালে বা শরীরে হাত রেখে জিজ্ঞেস করা, কেমন আছেন? তিরমিজি
আমারা এখন এমন সচেতন হলাম যে মা বাবা আত্মিয় স্বজন কাউকে কভিড-১৯ এ আক্রান্ত হতে দেখলে আছুতের মত আচরন করি। বৃটিশ সময় হিন্দু মুসলমানকে মুসলমান হিন্দুকে ছুলে কিংবা উচু জাত নিচু জাতেক ছুলে অপিত্র মনে করত। আজ জাতপাত না আজ কভিড-১৯ রোগ সে জায়গাটা দখল করেছে। যা বড়ই কষ্টের।
মুসলামানরা কি করে এটা করতে পারে? কেমন করে রোগিকে অবহেলা করতে পারে? যেখানে রোগি দর্শন একটা ইবাদত বলা হয়েছে। দেখুন ইসলাম কি বলে-
রোগীকে দেখার উপকারিতা বা ফজিলতঃ
রোগী দেখার অসংখ্য ফজিলত রয়েছে। আসুন একটু জেনে নেই-
হজরত আলী (রা.) বর্ণনা করেন, আমি রাসূল (সা.) কে বলতে শোনেছি, যে ব্যক্তি সকালবেলা কোনো অসুস্থ মুসলমানকে দেখতে যায়, সত্তর হাজার ফেরেশতা বিকাল পর্যন্ত তার জন্য দোয়া করতে থাকে। আর বিকেলে রোগী দেখতে গেলে সকাল পর্যন্ত সত্তর হাজার ফেরেশতা দোয়া করে… । -সুনানে তিরমিজি: ৯৬৭
রোগী দেখার নিয়ম ও আদব
১. অজুসহকারে রোগী দেখতে যাওয়া। এ মর্মে হজরত আনাস (রা.) রেওয়ায়েত করেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি উত্তমরূপে অজু করে সওয়াবের উদ্দেশ্যে কোনো অসুস্থ মুসলমান ভাইকে দেখতে যায়- তাকে জাহান্নাম থেকে ৬০ বছরের পথ দূরে রাখা হবে। -আবু দাউদ: ৩০৯৭
২. রোগীর অবস্থা বুঝে শরীরে হাত রেখে রোগের কথা জিজ্ঞাসা করা। রাসূল (সা.) বলেছেন, শুশ্রুষার পূর্ণতা হলো- রোগীর কপালে বা শরীরে হাত রেখে জিজ্ঞেস করা, কেমন আছেন? তিরমিজি
৩. রোগীর সামনে এমন কথা বলা যাতে সে সান্তনা লাভ করে। রাসূলুল্লাহ (সা.) কোনো রোগীকে দেখতে গেলে বলতেন, এমন সান্দনামূলক কথা বলতেন বলে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে।
৪. রোগীর কাছে বেশি সময় ক্ষেপন না করা। রাসূল (সা.) বলেন, রোগী দেখার সময় হলো- উটের দুধ দোহন পরিমাণ। আরেক বর্ণনায় এসেছে, রোগী দেখার উত্তম পন্থা হলো- তাড়াতাড়ি ফিরে আসা।
৫. রোগী কিছু খেতে চাইলে এবং তা তার জন্য ক্ষতিকর না হলে খেতে দেওয়া। রাসূল (সা.) বলেছেন, রোগী যদি কিছু খেতে চায়- তবে তাকে খেতে দেওয়া উচিত। -ইবনে মাজাহ
৬. রোগীর সামনে উচ্চ আওয়াজে কথা না বলা। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, সুন্নত হলো- রোগীর পাশে কম সময় বসা এবং উঁচু আওয়াজে কথা না বলা।
৭. রোগীর জন্য দোয়া করা। বিভিন্ন দোয়া হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। রাসূল (সা.) বলেন, কোনো রোগীর কাছে গিয়ে নিম্নের দোয়াটি সাতবার পাঠ করলে মৃত্যুরোগ ছাড়া সব রোগ থেকে সে সুস্থ হয়ে ওঠবে- ইনশাআল্লাহ।
দোয়াটি হলো- আসআলুল্লাহাল আজিম, রাব্বাল আরশিল আজিম, আই ইয়াশফিয়াকা। -আবু দাউদ: ৩১০৬
৮. রোগীর কাছে নিজের জন্য দোয়া চাওয়া। রাসূল (সা.) বলেন, ‘তোমরা রোগী দেখতে গেলে তার কাছে নিজের জন্য দোয়া চাও। কেননা তার দোয়া ফেরেশতাদের দোয়ার সমতুল্য।’ -ইবনে মাজাহ
আজ নিয়মগুলো সব ভায়োলেট হচ্ছে। নতুন ফতোয়ার মাধ্যমে। আসলে এগুলো কতটুক সঠিক হচ্ছে তা আল্লাহই ভাল জানেন। তবে আমার কাছে অস্বস্তিকর মনে হয়। সচেতন হতে যেয়ে ধর্মীয় বিধান লংঘন করা যায় অথচ সচেতনতার জন্য অন্য সব বিধান লংঘন যেন কিছুই না। বাজার দেখেন । মাছে বাজারে গেলে পাবিলিকের এমন ঠ্যালা খাবেন যে আপনি না করোনা চ্যাপটা হয়ে যাবে। সিএনজি অটৈা রিক্সা এগুলোতে দুরত্ব কেউ মেন্টইন করে? বা এগুলো চলার উপর কোন নিষেধাজ্ঞা আছে? সেখানে কতটুকু স্বাস্থ বিধী মানা হয়। শ্রমিকরা মানে? দল বেধে গাদাগাদি করে প্রশাসনের নাকের ডগায় তারা বাড়ি যায়। ত্রান দেয়া হচ্ছে সবাইকে জড়ো করে। যেখানে বাসায় বাসায় ত্রান দেওয়া ছিল প্রকৃত সচেতনতার পরিচয়। না এসব আমারা দেখিনা। এসব ক্ষেত্রে ছার আছে। কেউ কিছু বলে না্। শুধু বাজরের ঠ্যালা ঠেলি করা লোকগুলো মসজিদে গেল ফাক হয়ে দাড়ায়। মসজিদ আল্লাহ ঘর। এখন আল্রাহর ঘরকে প্রসাশনের ঘর বানাননো হয়েছে। লাল দাগ মাঝে রেখে দাড়ান, ৩ফিট দুরত্বে থাকুন। মাস্ক ছাড় মসজিদে প্রবেশ নিষেধ। এগুলো কি আল্লাহ বলেছেন? না প্রশসন বলছে। কেন সচেতনতা? অথচ দেখেন কোন বাজারে কিন্ত কোন এমন দেখেছেন যে মাস্ক ছাড়া আসলে বাজারে ঢোকা নিষেধ। যে দেশ সমাজিক দুরত্ব সমাজেই নেই বা পালন হয় না সেই দেশে ধর্মীয় উপাসনালয়ে সামাজিক দুরত্বের ফতোয়া কতটুকু গ্রহনযোগ্যতা পাবে স্রষ্টার কাছে ? তিনিই ভাল জানেন।
সচেতন ১০০% হতে হবে। ১% ও কম নয়। ফুটো রেখে যা হয় সেটার নাম ফুট্টোস। নিরাপত্তা নয়।
একটা এডালড জোক-
হ্যারে শুনলাম তোর ছেলের নাম ফুট্টোস রেখিছিস?
ঠিক শুনেছিস।
কিন্তু এটা কোন নাম হল?
আর বলিস না কনডমে মধ্যে ফুটো থাকায় হয়েছেতো!!!!!
কাজেই সচেতন হলে পরিপূর্ণ হতে হবে। কেউ সচেতন কেউ নয়। এমন হলে পুরো এই উদ্যোগ শুধু লোক দেখানোই হবে। কাজের কাজ কিছুই হবে না।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুন, ২০২০ রাত ১১:০৩