আমার বাড়ির কাজের বুয়া। মর্জিনার মা বলে ডাকে সবাই। দুবার বিয়ে হয়েছে দুবারই তালকা হয়েছে। প্রথম ঘরেরই তার দুই মেয়ে মর্জিনা আর মারিয়া। মর্জিনাকে তার মা বেশ কয়মাস হল যাত্রাবাড়ী একবাড়ীতে কাজে দিয়েছে। ছোটটি আমাদের বাসায় থাকে। আমার দুই মেয়ে আর ভাইয়ের মেয়েদের সাথে খেলাধুলা করাই তার কাজ। মাঝে মাঝে ঘরের হালকা পাতলা কাজে সাহায্য করে। মেয়ে দুটিকে দু জায়গায় দিয়ে মা ঝাড়া হাত পা। এই চলছিল তার জীবন । গত সাপ্তাহে খবর এল তার বড় মেয়ে মর্জিনা যাত্রাবাড়ীর ঐ বাসা থেকে হারিয়ে গেছে। এ সংবাদ পেয়ে পাগল প্রায় মা ছুটে যায় যাত্রাবাড়ী। ৪-৫দিন সেখানে থাকে কিন্তু মেয়ের কোন হদিস পায় না। গত পরশু আমার কাছে এসে কেঁদে কেটে বলে-
ভাইজান আমার মাইয়াটা হারাইয়া গেছে।
বললাম, থানায় জানিয়েছ?
হেরা থানায় জিডি করছে? আমার মাইয়া নাকি হেগ মাল সামনা লাইল ভাইগা গেছে।
মাইকিং করে নাই?
না করে নাই। তয় হেরা এক কবিরাজের কাছে গেছে । হেয় গণনা কইরা কইছে মাইয়া ভাল আছে।
আমি বললাম, কী সব আজে বাজে কথা বল। কবিরাজ মানে?
হ ভাইজান কবিরাজ। দুই তিনটা কবিরাজের কাছে গেছে । চাইল পড়া আয়না পড়া দিয়া দেখছে । এক জনে কয় মাইয়ারে শিশু পাচারকারি আটকাইয়া রাখছে। মাইয়ার কোন ক্ষতি হয় নাই। তারে ১২০০ টাকা দিলে সে কবিরাজি কইরা মাইয়ারে উদ্ধার কইরা দিব কইছে।
তুমি কি পাগল না অন্যকিছু? কি বল এসব। যাও যাও! থানায় যাও। এইসব ফালতু জায়গায় দৌড়াদৌড়ি বন্ধ কর। আর যে বাড়িতে তোমার মেয়ে দিলা তারাই বা কি? কোন মাইকিং করলা না। আবার কবিরাজ টবিরাজ সব ফালতু কাজ……………..আমারতো মনে হয়ে তোমার মেয়েটারে মেরে টেরে এরা গুম করে ফেলছে। এরকম হরহামেশা হচ্ছে।
কি কন ভাইজান……….! চিৎকার করে কেঁদে উঠে সে।
ঘটনা এখন এ পর্যন্তই চলমান।
আজকের এ জামানায় চাউল পড়া আয়না পড়া এসব এখনো আছে? মানুষ এখনো এসব বিশ্বাস করে? একটি মেয়ে হারিয়ে গেছে। কত সিরিয়াস একটি বিষয়। কোথায় থানা পুলিশের কাছে দেন দরবার করবে। তা না কুসংস্কার নির্ভর হয়ে বসে আছে। আমার কেবলই মনে হচ্ছে এসব ঐ বাড়ির লোকদের ভাওতা। মেয়েটাকে কিছু একটা করেছ তারা। আবার জিডি করেছে মেয়েটাকে দোষি করে। মাইকিং করে নাই। আবার কবিরাজি ভাওতা। খুবই রহস্য জনক বিষয়গুলো। মেয়েটি উদ্ধার হবে কিভাবে?
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মে, ২০১৬ রাত ১:০৪