হাতিয়া, প্রিয় হাতিয়া যেখানটায় হয়েছে আমার জন্ম, কটেছে শৈশব আর কৈশরের পুরোটা। প্রকৃতির আপন খেয়ালের লীলা ভূমি হাতিয়া জুড়ে দাপিয়ে বেড়ানো হয়নি তেমন একটা তবে আপন গন্ডির মাঝেই জীবন শুরুর শুরু থেকেই দু'চোখ ভরে দেখেছি ঘন সবুজ আর মেঠো পথের বাড়াবাড়ি আলিঙ্গন, খাল পুকুরে এমনি এমনি গজিয়ে উঠা ঝাঁ চকচকে শাপলা পাতার ফাঁকে মাথা উঁচিয়ে খোলা আকাশটাকে দেখে নেয়া ঢেঁড়া সাপ,কালবৈশাখির দারুন দাপটে দেখেছি মধ্যদিনে আকাশ কালো হয়ে হঠাৎ নামা সন্ধ্যা আর পুকুরে খোলসে মাছের রুপালি চমক।
বাবার হাত ধরে মাছ কিনতে বাজারে যাওয়া কিংবা বেড়ী বাঁধের ধুলো মাখা পথে হাঁটতে হাঁটতে have, has, shall, will এর ব্যবহার শেখা আজো কাঁপিয়ে দেয় আমূল এই আমাকে। এইতো সেদিন রেনুমিয়ার হাট সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে মোরগের লড়াই আর বিস্কিট দৌঁড়ে অংশ নেয়া, আফাজিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে আন্তঃস্কুল প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে নিদারুন ব্যর্থতার পর ক্রীড়া শিক্ষকের প্রবল ভার্সনায় চোখ বেয়ে নেমে আসা কান্না আর খাল পাড়ে ঘর বানিয়ে থাকা পুরদস্তর কৃষক "মালাম দাদা"-র জীবনকে জীবনের "আর্দশ" হিসেবে জানানোর পর অগ্রজদের তীব্র তিরষ্কার আজো স্মৃতির পর্দায় ভীষন রকম উজ্জল।
...... হ্যাঁ, আজীবন এগুলো অমলিন-ই থাকবে, যখন তখন স্মৃতির অনুভূতিতে বিলিয়ে যাবে সুখের একটুকরো পরশ। -----
----- থাকবে না শুধু আমার প্রিয় গ্রাম,গ্রামের পরিবেশ যেখানটায় এক পূর্ন যৌবনা জোছনায় উঠোনে পিঁড়ি পেতে গল্প শোনার মাঝে কলাপাতা নড়তে দেখে ভূত ভেবে আতংকিত হয়েছিলাম। থাকবে না বাড়ির পাশেই প্রিয় মসজিদ যে মসজিদের আঙ্গিনায় পাটি পেতে সুর করে আরবি শিখতাম, যে মসজিদে বাবা ফজরের নামায পড়তে যাবার সময় আমাকে নিয়ে যেতেন, নামায শেষে খালি পায়ে হাটতেন, আমাকেও হাটাতেন আর দেখাতেন ঘাস শিশিরের আবেগঘন মাখামাখি।
..... নদী ভাঙ্গনের করাল থাবায় আজ হারিয়ে যেতে বসেছে সেই গ্রামটি যেমন করে বিলীন হয়েছে হাতিয়ার প্রায় অর্ধেকেরও বেশী অংশ, টুকরো টুকরো হয়ে দুপদাপ লুটিয়ে পড়ছে ভাঙ্গনের ভীষন রকম ক্ষুধার মাঝে। হারিয়ে যাচ্ছে আমার গ্রাম, সাথে যাচ্ছে আমার বাবার কবরটিও। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাউকে আর কোনদিন দেখাতে পারব না আমার শৈশব - কৈশরের খেলার মাঠ, আমার বেড়ে উঠার আঙ্গিনা, আঙ্গুল উঁচিয়ে কখনোই বলতে পারবনা - ঐখানে তোর দাদার কবর......
হাতিয়ার বিলীন হয়ে যাওয়া অংশের অধিকাংশই আজ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন এখানে সেখানে, আবাসে, প্রবাসে।কর্মজীবনের শতধারার ব্যস্ততার মাঝের কোন এক অবসরে বিলীন হয়ে যাওয়া মাটির আবেগ ক্ষণকালের জন্য হলেও হৃদয় খামচে দেয়, মেতে থাকা আলো ঝলমেলে সন্ধ্যায় মনে করিয়ে দেয় ফেলে আসা জোনাক জ্বলা মায়াবি সন্ধ্যার কথা ....এ আমি নিশ্চিত জানি। আরও জানি ভাঙ্গনের এই ধারা এখনই রুখে দিতে না পারলে হাতিয়ার বর্তমান অংশের বয়স আর মাত্র কয়েক দশক।
আজ যারা হাতিয়া কে "জেলা" হিসেবে বাস্তবায়ন করার জন্য সংগ্রাম করছেন, আপনাদের কাছে আমার কড়জোর মিনতি, সবার আগে আমরা সবাই মিলে কি হাতিয়া কে ভাঙ্গনের হাত থেকে বাঁচাতে একমত হতে পারিনা? পারিনা কি বলতে একসাথে, বেঁচে থাক আমার হাতিয়া,আমার ভালবাসা ?
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:০৪