আমাদের সমাজে এখন পাঠকের অনেক বেশি অভাব- কথাটা এখনকার অধিকাংশ লেখকেরা প্রায়ই স্বীকার করে নিয়েছেন। তাদের মতে তাদের আধুনিক লেখনী পড়ার মানসিকতা আছে এমন পাঠকসমাজ আজ বিলুপ্তের পথে। তাই হাতে নাতে ফল পাওয়া দুষ্কর প্রায়।
ধরুন, মেনে নিলাম যে, এখনকার সময়ে পাঠকের অনেক বেশি অভাব। তার কারণও যথাযথ। যেমন- বর্তমান যুগ তথ্য প্রযুক্তির যুগ। আজ থেকে প্রায় একশ বছর আগেও যে বয়সে মানুষের আনন্দ বিনোদনের জন্য বই পড়া হতো, এখন সেই বয়সে আনন্দ বিনোদনের জন্য কম্পিউটার, ইন্টারনেট নিয়ে ব্যস্ত সবাই। তাই এমন ধারনা করাটাই স্বাভাবিক। তাই বলে যে পাঠক সৃষ্টি হচ্ছে না এমনটাও ভাবা একদমই বেমালুম মনে হয়। আপনাদের মনে আশার সঞ্চার করিয়ে বলি- এখনও অনেক পাঠক সৃষ্টি হচ্ছে। যদি আমরা স্যার হুমায়ুন আহমেদের কথা কিংবা সৈয়দ শামসুল হকের বলি- তারা মারা গেলেও তাদের পাঠক সংখ্যা কমেনি; বরং বেড়েছে। কিংবা স্যার জাফর ইকবালের কথা বলি অথবা নির্মলেন্দু গুণের মত লেখকদের কথা বলি- তাদের পাঠকের সংখ্যা কিন্তু একে বারে কম নয়। প্রকৃত পক্ষে তাদের সংখ্যাই বেশি। লক্ষ করলে দেখবেন বাংলাদেশের মত উন্নতশীল দেশে খুব কম সংখ্যক লোকই তথ্য প্রযুক্তিতে এগিয়ে, আর বাকীগুলো এই বই নিয়েই পড়ে আছে। সুতরাং, ‘পাঠক নেই’ এ কথার ঘোরতর বিরোধী আমি। আমরা আধুনিকতার নামে যে সকল সাহিত্য পাঠকদের হাতে তুলে দিচ্ছি তা প্রকৃত পক্ষে তাদের কাছে অখাদ্য হিসেবে গণ্য হচ্ছে কি না, সেটা ভেবে দেখার সময় এসেছে এখন। তার কারণও যথাযথ।
বর্তমান সময়ে আমরা যে সকল আধুনিক কবিতার জন্ম দিচ্ছি তার অর্থ আমরা বুঝি, কিছু অজ্ঞাত শব্দের ব্যবহার, ভাষার কঠিনতা এবং ছন্দের অমিল। আর আমাদের সাহিত্যের উপর সাধারণ পাঠকের অরুচি আসার হয়ত এটাই প্রধান অন্তরায়। আমরা কখন পাঠকের মনের আকাজ্ঞা নিয়ে চিন্তা করি না। আমাদের যা মনে আশে তাই সাহিত্য বলে চালিয়ে দিতে চাই। সত্য কথা বলতে আমাদের আধুনিক কবিতা বলতে যে কবিতাগুলো বুঝি তার সাথে বাংলা আধুনিক কবিতার কোন মিল নেই। আমার দেখা মতে, পাঠকমহল আমাদের মতো এমন আধুনিক কবিতা অনেক লিখতে পারেন। তাই তারাও আজ পাঠকের সারি ছাড়িয়ে লেখকের সারিতে দাড়িয়েছে।
আমার কাছে বর্তমান সাহিত্যকে যে ভাবে মনে হয়েছে ঠিক সেই ভাবেই উপস্থাপন করার প্রয়াস করেছি। এতে যদি কারো খারাপ লাগে তার জন্য আমি একাগ্র চিত্তে ক্ষমা প্রার্থী। কেননা, কারো মানসিকতায় আঘার করার ইচ্ছা আমার কোন দিনই নেই।