আমাদের রাজনীতিবিদরা খুব ই দেশপ্রেমিক! আমাদের দৈনিক বিদ্যুতের ঘাটতি ৩০০০ মেগাওয়াট। নেতারা চান না দেশের মানুষ বিদ্যুতের অভাবে কষ্টে দিনযাপন করুক । তাই তারা কি এবার প্ল্যান করলেন দাদা দের সাথে যৌথ চুক্তিতে একটা কয়লা বিদ্যুত কেন্দ্র করবেন।খুঁজে খুঁজে তারা কেন্দ্র নির্মানের মোক্ষম জায়গা পেলেন বিশ্বের সবচাইতে বড় ম্যানগ্রোভ বন '' সুন্দরবনকে '' । কি দরকার এইসব গাছের? কি হয় এতে? লাকড়ী, জ্বালানি ,ফার্নিচার ,মধু আর প্রানীকুলের আধার ই তো শুধু নাকি ? এর চাইতে বিদ্যুতকেন্দ্র করা অনেক আধুনিক একটা কর্ম। ''ডিজিটালাইজেশন'' এর পথে এগিয়ে যাওয়া। তাই তো তারা ভারতে এক ই উদ্যোগ নিয়ে প্রত্যাখ্যাত কোম্পানির সাথে চুক্তিটি করলেন। ।অবশ্য এটা নতুন কোন খবর নয়। এশিয়া এনার্জি, অক্সিডেন্টাল, নাইকো ,এসএনসি লাভালিন সব দুর্নীতিপরায়ন ও নিম্নমানের অদক্ষ কোম্পানীর প্রিয় গন্তব্যস্থল মনে হয় বাংলাদেশ ! এখন আসি কয়লা কেন্দ্র প্রসঙ্গে ঃ
এই কেন্দ্রটি নির্মিত হবে ১৫% পিডিবির অর্থায়নে,১৫% ভারতীয় পক্ষের , ৭০ শতাংশ ভারতীয় অনুদানে বা খয়রাতি ঋণে। নিট লাভ ভাগ হবে নাকি ৫০ঃ৫০ অনুপাতে। বিদ্যুত কিনবে পিডিবি। একটা নিয়ম বা ফর্মুলা মাফিক। কি সেই ফর্মুলা ?
ফর্মুলাটা হচ্ছে, যদি কয়লার দাম প্রতি টন ১০৫ ডলার হয় তবে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম হবে ৫ টাকা ৯০ পয়সা এবং প্রতিটন ১৪৫ ডলার হলে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ ৮ টাকা ৮৫ পয়সা। অথচ দেশীয় ওরিয়ন গ্রুপের সঙ্গে মাওয়া, খুলনার লবণচরা এবং চট্টগ্রামের আনোয়ারায় তিনটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের যে চুক্তি হয়েছে পিডিবির সঙ্গে, সেখানে সরকার মাওয়া থেকে ৪ টাকায় প্রতি ইউনিট এবং আনোয়ারা ও লবণচড়া থেকে ৩ টাকা ৮০ পয়সা দরে বিদ্যুৎ কিনবে। সরকার এর মধ্যেই ১৪৫ ডলার করে রামপালের জন্য কয়লা আমদানি চূড়ান্ত করে ফেলেছে। তার মানে পিডিবি এখান থেকে ৮ টাকা ৮৫ পয়সা দরে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ কিনবে সেটা নিশ্চিত।আর ঋণের সুদের বিষয়টি তো আছেই।
এবার আসুন মানবিক বিপর্যয়ের বিষয়। ১৮৩০ একর ধানী জমি অধিগ্রহণের ফলে ৮ হাজার পরিবার উচ্ছেদ হবে। রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কর্মসংস্থান হতে পারে সর্বোচ্চ ৬০০ জনের, ফলে উদ্বাস্তু এবং কর্মহীন হয়ে যাবে প্রায় ৭ হাজার ৫০০ পরিবার। শুধু তাই নয়, আমরা প্রতি বছর হারাব কয়েক কোটি টাকার কৃষিজ উৎপাদন।এভাবেই
সুন্দরবনকে অসুন্দর আর ধবংস করার এক সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে । সুন্দরবন থেকে মাত্র ১৪ কিলোমিটার দূরে বাগেরহাটের রামপালে ভারতীয় কোম্পানি এনটিপিসির সাথে কয়লা বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মানের চুক্তি করেছে বাংলাদেশ সরকার। নিজেদের সম্পদ,গর্ব ,রক্ষাকবচ ম্যানগ্রোভ বন ধ্বংসের এত বড় আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত পৃথিবীতে আর কোন সরকারের পক্ষেই নেওয়া সম্ভব না ! এই প্রজেক্ট ব্যাপকভাবে মানব ও পরিবেশ বিধ্বংসী বলে ভারতের মেঘালয় রাজ্যে একই কোম্পানি এই প্ল্যান্ট করতে পারেনি। আর এব্যাপারে বাংলাদেশের সব বহুল প্রচারিত জাতীয় পত্রিকা চুপ মেরে বসে আছে । কত টাকা কলকাতার বাবুদের কাছ থেকে পেয়েছে কে জানে? বহুল প্রচারিত! '' প্রথম আলো '', তার প্রতিদ্বন্দ্বী '' কালের কণ্ঠ '' কোনটিতেই এই বিষয়টি গুরুত্ব পেলো না ? প্রথম আলোর রিপোর্টার '' টিপু সুলতান '' আড়িয়াল খাঁতে বিমানবন্দর নির্মানের বিতর্কিত সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বেশ বস্তুনিষ্ঠ কিছু প্রতিবেদন লিখেছিলেন , এখন তারা কেন চুপ ? বুঝলাম না, আমরা ফ্রি আশুগঞ্জ বন্দর,রোড ট্রানজিট ,পদ্মার ইলিশ দিব, বিনিময়ে তারা কি আমাদের অনবরত বাঁশ ই দিয়ে যাবেন ?