সত্য প্রকাশে নির্ভীক ও আপসহীন সাংবাদিক মাহমুদুর রহমান দৈনিক আমার দেশ অফিসে অবরুদ্ধ বেশ কিছুদিন ধরে।
মাহমুদুর রহমানের অপরাধ একটাই। আর তা হচ্ছে, তিনি একজন খাঁটি দেশপ্রেমিক। দেশের মাটি, মানুষ ও জনগণের গণতন্ত্রের প্রশ্নে আপসহীন এবং আইনের শাসন ও ন্যায়বিচারের পক্ষে। দুঃশাসন, স্বৈরশাসন, অপশাসনের বিরুদ্ধে এক মহান প্রতিবাদী কণ্ঠ। মাহমুদুর রহমান নিজের স্বার্থের কথা কখনও ভাবেন না। কোনো অপশক্তির কাছে মাথা নত করার মতো সাংবাদিক তিনি নন। জনগণ, কেবল জনগণের জন্যই তার বস্তুনিষ্ঠ আপসহীন সাংবাদিকতার সংগ্রামী ধারা অব্যাহত আছে।
কলম সৈনিক মাহমুদুর রহমানের সাংবাদিকতার জীবন দীর্ঘ না হলেও—এ স্বল্প সময়ে বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তা আজ ও আগামী দিনের লড়াকু প্রতিবাদী সাংবাদিকদের জন্য অনুপ্রেরণার উত্স হয়ে থাকবে তার মতো সত্য অনুসন্ধানী মাথা উঁচু করা সাংবাদিক শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বে ক’জন আছে আমার জানা নেই। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশকে সংবাদ সম্মেলনে ঘৃণা ও ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে নিজ পায়ের দুই জুতো মেরে দুঃসাহসী ইরানি সাংবাদিক বিশ্বরেকর্ড গড়েছিলেন ঈমানি শক্তির জোরে। বাংলাদেশের সত্যসন্ধানী প্রতিবাদী সাংবাদিকদের গর্ব ও অহঙ্কার দেশকণ্ঠ মাহমুদুর রহমান। তিনি যা সত্য ও ন্যায় বলে বিশ্বাস করেন, তা প্রতিষ্ঠার জন্য লড়ে যান অনবরত। দেশের জনগণ ও বিশ্ববাসী দেখেছে, কী অসীম সাহস নিয়ে হাসতে হাসতে তিনি বিগত দিনে দীর্ঘকাল কারাবরণ করেছিলেন। আদালতে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, আমি যা সঠিক মনে করেছি, জনস্বার্থে তা প্রকাশ করেছি। আমি কোনো অন্যায় করিনি। অন্যায়ের সঙ্গে কোনো আপস নয়।
স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্রের পক্ষে কথা বলার জন্য মাহমুদুর রহমান ও আমার দেশ পত্রিকাকে অনেক নিপীড়নের শিকার হতে হয়েছে। আজ মনে হয়, কবল মাহমুদুর রহমান অবরুদ্ধ নন। বরং সারাদেশে গণতন্ত্র আজ অবরুদ্ধ। প্রতিনিয়ত রাজনৈতিক সন্ত্রাস, দমন, মিথ্যা মামলা-হামলা, নির্যাতন-নিপীড়ন, সংখ্যালঘু হত্যা, বিশ্বজিতদের ওপর ছাত্রলীগের চাপাতি খড়গ, বিরোধীদলীয় চিফ হুইপের দেহ রক্তাক্ত করনের মধ্য দিয়ে তাই প্রতীয়মান হয়। পুলিশের বুটের নিচে বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের পিষ্টকরণের মাধ্যমে গণতন্ত্রের হৃদপিণ্ডের রক্তক্ষরণ আর গণতন্ত্র পিষ্ট হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
অবাধ তথ্য প্রবাহের যুগে তথ্য পাওয়ার অধিকার স্বীকৃত হলেও, স্কাইপ সংলাপে পরিকল্পিত বানোয়াট রায়ের চাঞ্চল্যকর তথ্য উদ্ধার ও প্রকাশ নিঃসন্দেহে বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার সাহসী দিগন্তের উন্মোচন। একটা প্রহসনের বিচারের নামে নাটকের চিত্র ফুটে উঠেছে। এর জন্য লড়াকু সাংবাদিক মাহমুদুর রহমান প্রশংসার দাবিদার। কিন্তু যারা অপরাধ করল তাদের নিন্দাবাদ শুধু নয়, দুষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া উচিত ছিল বিচার বিভাগের পবিত্র ভাবমূর্তিতে কালিমা লেপন করে বিশ্বে বাংলাদেশকে খেলো করার জন্য। অথচ ঘটছে এর উল্টোটা।
আইনের শাসন সমুন্নত রাখতেই সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে অমূলক ষড়যন্ত্র ও মিথ্যা মামলার এবং দৈনিক আমার দেশ অফিসে অবরোধের অবসান জরুরি। জাতি ’৭৩-৭৪ এর বিভীষিকাময় দুঃশাসনের দিনগুলিতে আর ফিরে যেতে চায় না। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ‘ফার ইস্টার্ন ইকোনমিক রিভিউ’র ডেভিড হাস্টের লেখা ‘গণতন্ত্রের মৃত্যু’ আর ‘ডেইলি টেলিগ্রাফের’ পিটার গিলের মন্তব্য প্রতিবেদন ‘মুজিব একনায়কত্ব কায়েম করেছেন’ শিরোনাম আজও আতঙ্ক বয়ে আনে। জনগণ এসব কিছুর পুনরাবৃত্তি আর চায় না।
অবাধ তথ্য প্রবাহের যুগে সত্য প্রকাশের বস্তুনিষ্ঠ সত্ সাহসী সাংবাদিকতার সংগ্রামী ধারার জয় হোক, দৈনিক আমার দেশ-এর জয়যাত্রা অব্যাহত থাকুক—মনেপ্রাণে এই কামনা গণতন্ত্র ও স্বাধীনতাপ্রিয় জনগণের।
>মাসুমা মির্জার কলাম থেকে সংগৃহীত