পুরো দেশে এখন নির্বাচনের হাওয়া। টেলিভিশনের সংবাদ, টকশো, খবরের কাগজের প্রথম পাতা থেকে শুরু করে ভেতরে পর্যন্ত কেবল নির্বাচনী খবর। কে কোন দল থেকে মনোনয়ন পেল, কে মনোনয়ন পেতে ব্যর্থ হলো, কোন হেভিওয়েট প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিপক্ষ কোন হেভিওয়েট প্রার্থী লড়ছেন, কার জেতার সম্ভাবনা বেশি-কম ইত্যাদি নিয়ে নানামুখী বিশ্লেষণ চলছে। আর মাঠে ময়দানে, চায়ের দোকানের আড্ডায় প্রসঙ্গ ঐ একটাই, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন।
রাজনীতিতে ভোটের পর্ব বরাবরই এদেশীয় মানুষের কাছে বিরাট এক উৎসবের বিষয়। ভোটের কয়েক মাস আগে থেকেই প্রার্থী ও উৎসাহী সমর্থকদের মাঝে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। তবে ভোটকে কেন্দ্র উৎকণ্ঠা, অস্থিরতারও শেষ থাকে না। প্রায়ই একদল কর্মী সমর্থকদের সাথে আরেকদল কর্মী সমর্থকদের দ্বন্দ্ব-সংঘাতের সৃষ্টি হয়। এ দ্বন্দ্ব সংঘাতে প্রাণহানীর ঘটনাও ঘটে থাকে। তবে ভোটপ্রিয় এদেশের জনতা নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পেরে আনন্দিত হয়। যদি কারো পছন্দনীয় প্রার্থী নাও জিততে পারে, তবুও শান্তি মতো ভোট দিতে পেরে তারা এ স্বস্তি পায়। বিগত ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দল বিএনপি ছাড়াও অন্যান্য বেশ ক’টি রাজনৈতিক দল নির্বাচন বর্জন করে। ফলে উৎসাহী ভোটারগণ ভোটের আনন্দ থেকে বঞ্চিত হন। কিন্তু এবারে সবক’টি রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নিতে যাচ্ছে। যে কারণে হয়তো এবার তাদেরকে পূর্বের মতো হতাশ হতে হবে না। এখন পর্যন্ত কিছু কিছু ব্যত্যয় ছাড়া নির্বাচনী পরিবেশ ভালোই মনে হচ্ছে
সামনে নির্বাচনের আরো ১ মাসেরও বেশি সময় রয়ে গেছে। ইতোমধ্যে প্রার্থীগণ মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন। রাজনৈতিক দলগুলোও মনোনীত প্রার্থীদের কাছে প্রাথমিক মনোনয়নের চিঠি পাঠাচ্ছেন। আর গতকাল মনোনয়ন জমাদানের শেষ দিন পার হলো। সামনে চূড়ান্ত মনোনয়ন ও প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় আসছে। এরপর প্রতীক বরাদ্দের হয়ে গেলেই শুরু হয়ে যাবে নির্বাচনের আসল পর্ব, অর্থাৎ প্রচার-প্রচারণা। এ অবস্থায় রাজনৈতিক দলগুলো ভোটারদের কাছে তাদের পক্ষ থেকে ইশতেহার প্রকাশ করবেন। নির্বাচিত হলে জনগণের জন্য তারা কে কি করবেন সেগুলো সেই ইশতেহারে তুলে হবে। ইশতেহারে প্রতিশ্রুতি এবং দূরদর্শী রূপরেখা তুলে ধরতে পারলে তা জনগণের মাঝে প্রভাব ফেলে। এছাড়াও ইশতেহার থেকে একটি রাজনৈতিক দলের গতিপ্রকৃতি, বৈশিষ্ট্য ও আদর্শ পরিষ্কার হয়। এ জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে বুঝেশুনে ইশতেহার তৈরি করতে হবে। তবে নির্বাচনী ইশতেহার তৈরি আগে এই মুহূর্তে আসলে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের চাওয়া কোনটি সেটা বুঝতে হবে। যে দল সাধারণ মানুষের চাওয়া পাওয়াকে ধরতে পারবে এবং সেই অনুসারে কাজ করতে তারাই মূলত নির্বাচনে সুবিধা করতে পারবে।
বাংলাদেশের মানুষের একটি মৌলিক সমস্যা হচ্ছে অর্থনৈতিক সমস্যা। এর পেছনের বড় কারণ দুর্নীতি। অন্যদিকে সুশাসনের অভাব, রাষ্ট্র জনগণের সেবকের পরিবর্তে প্রভুত্বের ভূমিকায় উত্তীর্ণ হয়ে যাওয়া, মানুষের বাকস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের মতো বিষয়গুলো নিয়েও সাধারণ মানুষের তীব্র ক্ষোভ রয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ তাদের দেশের সক্ষমতা সম্পর্কে জ্ঞাত। তারা জানে তাদের দেশে উন্নত নয়। এখানে সম্পদের অপ্রতুলতাও রয়েছে। কিন্তু তারা যখন দেখে এরই মাঝে কিছু কিছু মানুষ ক্ষমতা এবং দুনীতি করে রাঘব বোয়াল বনে যায় তখন তারা তা বরদাস্ত করতে পারে না। অন্যদিকে জনগণ জানে রাষ্ট্র জনগণের সেবক। কিন্তু বাস্তবে যখন দেখে রাষ্ট্র তাদের প্রভু বনে গেছে তখনও তারা হতাশ হয়।
আমরা বিশ্বাস করি, যে রাজনৈতিক দল এবার দুর্নীতি দূর করার কার্যকর প্রতিশ্রুতি দেবে, রাষ্ট্রকে জনগণের সেবক বানানোর প্রতিশ্রুতি দেবে, অন্দরমহলের সিদ্ধান্ত নয়, কার্যকর পদ্ধতিতে জনগণের মতামত জেনে সেই অনুসারে রাষ্ট্র শাসন করার প্রতিশ্রুতি দেবে, নির্বাচনে সেই দল অনেকটাই এগিয়ে থাকবে। তাই আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে কাছে আশাবাদী, তারা জনগণের মনের চাওয়াকে বুঝবেন, দুর্নীতিমুক্ত, জনবান্ধব রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দেবেন এবং নির্বাচিত হয়ে সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবেন।