ঘনিয়ে এসেছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সর্বশেষ প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে ইতোমধ্যে দেশের প্রায় সবক’টি রাজনৈতিক দল যাদের মধ্যে বামপন্থী, ডানপন্থী, সেক্যুলার সবাই জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনের দিকে এগোচ্ছে। যতক্ষণ পর্যন্ত বিএনপি নির্বাচনে আসবে কি আসবে না তা নিয়ে এক ধরনের অনিশ্চয়তা বিরাজ করছিল, ততক্ষণ লাঙ্গলের হাতলধারী হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ জানিয়ে রেখেছিলেন তার দল আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের বিরুদ্ধে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। কিন্তু সর্বশেষ যখন মামলা-হামলায় নানাভাবে পর্যুদস্ত বিএনপি নির্বাচনে আসার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানালো তখন এরশাদ জানালেন তিনি আওয়ামী লীগের মহাজোটের সাথেই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। এখন আসন ভাগাভাগি নিয়ে চলছে দর কষাকষি। এর আগে পূর্ব সিদ্ধান্ত মোতাবেক ঐ সময় এরশাদ নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ৫৮টি ইসলামী দল ও দলীয় জোটকে জাতীয় পার্টির সাথে জোটবদ্ধ করেছিলেন, যার নাম ছিল সম্মিলিত জাতীয় জোট। এ জোটে মাত্র ২টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ও ২টি জোটসহ মোট ৪টি শরীক দল ছিল। সম্মিলিত জোটের শরীক দলগুলো ছিল জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, জাতীয় ইসলামী মহাজোট এবং বাংলাদেশ জাতীয় জোট (বিএনএ)। এর মধ্যে ইসলামী মহাজোটে রয়েছে ৩৪ ইসলামী দল এবং বিএনএতে আছে ২২টি। সব মিলিয়ে এই ৫৮টি দলের বিশাল জোট! জোট গঠনের পর এক সংবাদ সম্মেলনে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ জোটের বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করে বলেন, এই জোট রাজনৈতিক নীতি ও আদর্শের দিক থেকে স্বাধীনতার চেতনা, ইসলামী মূল্যবোধ তথা সব ধর্মের প্রতি সম্মান প্রদর্শন ও বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের অনুসারী ও ধারক-বাহক। এই জোটে কোনো স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির জায়গা হবে না।
অন্যদিকে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল পূর্ব থেকেই জাতীয় পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল, বাংলাদেশে ওয়ার্কার্স পার্টি, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (মার্কসবাদী-লেলিনবাদী)সহ আরো ৮টি দল নিয়ে মহাজোট গঠন করে ক্ষমতায় আসে। আর নামমাত্র বিরোধী দল হিসেবে রওশন এরশাদ এর নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি বিরোধী দলের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। রাজনীতির ময়দানে যাকে অনেকেই গৃহপালিত বিরোধী দল হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকে। এবারে বিএপি নির্বাচনে আসায় অবশ্য ১৪ দলের আকৃতি অনেকটা বেড়ে গেছে। অরাজনৈতিক দল হেফাজতে ইসলামীর সমর্থন ছাড়াও এবার ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মিছবাহুর রহমানের তরীকত ফেডারেশনের সাবেক মহাসচিব আবদুল আউয়ালের নেতৃত্বে সম্প্রতি ১৪ দলের সমন্বয়ে ধর্মভিত্তিক নতুন জোট ইসলামিক ডেমোক্রেটিক এলায়েন্স আওয়ামী লীগের সাথে থাকছে।
২০০১ সালে বিএনপির নেতৃত্বে চারদলীয় জোট দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করে। তখন আওয়ামী লীগ এককভাবে নির্বাচন করে জোটের বিরুদ্ধে হেরে যায়। পরে ২০০৫ সালে আওয়ামী লীগ ১৪দলীয় জোট গঠন করে। ২০০৮ সালে ১৪ দলের সঙ্গে জাতীয় পার্টিসহ মহাজোট করে আওয়ামী লীগ দুই-তৃতীয়াংশের বেশি আসনে জয়ী হয়। এরপর বিএনপি ২০১২ সালে ১৮দলীয় জোট গঠন করে, যা পরে ২০ দলে পরিণত হয়। মূলত জোটবদ্ধ হয়ে ক্ষমতায় আসার সুবিধা হওয়ায় রাজনীতিতে জোট গঠনের রীতি চালু হয়ে গেছে। এরই ধারাবাহিকতায় এবারের নির্বাচনেও জোট গঠনের প্রচ- তোড়জোর লক্ষ্য করা গেছে।
এমনিতেই ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি নির্বাচন বয়কট করার কারণে বিএনপি জাতীয় সংসদের কার্যক্রম থেকে দূরে চলে যায়। এ কারণে তারা পূর্বের ৭ বছরের সাথে আরো ৫টি বছর মিলিয়ে মোট ১২ বছর ক্ষমতা থেকে দূরে অবস্থান করে। ফলে দলটির নেতা-কর্মীরা উপর্যুপরি মামলা-হামলা, ধর-পাকড়সহ, গুম-খুনে জর্জরিত হয়ে পড়ায় দুর্বল হয়ে পড়ে। এমনকি কয়েকটি মামলায় দলটির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আদালত কর্তৃক দ-িত হয়েছেন। এর মধ্যে বেগম খালেদা জিয়া ১০ (প্রথমে ৫ বছর ও এর বিরুদ্ধে সরকার পক্ষের আপিলের ভিত্তিতে আরো ৫) বছরের সাজা নিয়ে প্রায় ৯ মাস যাবত জেলখানায় বন্দী আছেন। তিনি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন কি না তা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে ধোঁয়াশা। অন্যদিকে তারেক রহমান যাবজ্জীবন দ- মাথায় নিয়ে অবস্থান করছেন যুক্তরাজ্যে। আইনের ভাষায় বর্তমানে তিনি পলাতক। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়াও গত ২০ নভেম্বর গ্রেফতার হয়েছেন। জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে আদালত তাকে তিন বছরের দ- ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন। বেগম খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভি ও স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদসহ অন্যান্য নেতারা দলটিকে পরিচালনা করে আসছেন। এমতাবস্থায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায়ে অটল থাকার সুযোগ নেই। কারণ, এবারও নির্বাচনে না গেলে দলটি বিলুপ্তির দিকে ধাবিত হয়ে যাবে বলে রাজনীতি বিশেষজ্ঞরা মতামত দিয়েছেন। সবকিছু মাথায় রেখে পারস্পরিক বুঝ-পরামর্শের মাধ্যমে তারা পরিস্থিতি প্রতিকূল হওয়ার পরেও নির্বাচনমুখী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন।
কিন্তু এবার কেবল বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোট নয়, দলটি গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেনের উদ্যোগ গঠিত ঐক্যফ্রন্টের সাথে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। তবে বৈধ ও নিবন্ধিত দল হিসেবে এই তালিকা থেকে বাদ পড়েছে জোটের অপর দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব যুদ্ধাপরাধের দায়ে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদ- ও ফাঁসির দ-ে দ-িত হয়েছেন। তাদের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরাও বিএনপির ন্যায় ধর-পাকড় ও নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। পরে নির্বাচন কমিশনের আদেশে দলটির নিবন্ধনও বাতিল হয়ে যায়। এভাবে তারা রাজনীতির ময়দানে একেবারেই কোণঠাসা হয়ে পড়ে। বর্তমান অবস্থায় তারা দল হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। তবে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে তাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সম্ভাবনা রয়েছে।
অপরদিকে ড. কামাল হোসেন গঠিত ঐক্যফ্রন্টে বিভিন্ন নাটকীয়তার পরেও যোগ দিতে ব্যর্থ হয়ে ড. বদরুদ্দোজার নেতৃত্বাধীন এলডিপি এখন জোটবদ্ধ হয়ে আওয়ামী লীগের সাথে নির্বাচন করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অপরদিকে কৃষক-শ্রমিক জনতা লীগকে নিয়ে কাদের সিদ্দিকী যোগ দিয়েছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে।
জোটের বাজারে আরো কয়েকটি জোটের নাম উচ্চারিত হচ্ছে। এর মধ্যে দুর্নীতির মামলায় সাজা মাথায় নিয়ে বাইরে থাকা বিএনপির সাবেক নেতা নাজমুল হুদা ৩৪দলীয় জোট করেছেন। এদের মধ্যে একটি দলও নিবন্ধিত নয়। গত নির্বাচনে ঢাকা ১৭ আসন (গুলশান-ক্যান্টনমেন্ট) থেকে নির্বাচিত আবুল কালাম আজাদেরও একটি জোট আছে, নাম বিএনএফ। এটিও বর্তমান সরকারপন্থী।
সবকিছু মিলিয়ে এটি পরিষ্কার যে, মূলত দুইটি ধারায় বিভক্ত হয়ে রাজনৈতিক দলগুলো জোটবদ্ধ হয়েছে। অর্থাৎ এবারের নির্বাচন হবে অনেকটাই জোটের নির্বাচন এবং এই নির্বাচন কারোর জন্যই মোটেও সহজ নির্বাচন হচ্ছে না বলে মনে হচ্ছে। আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নিজেও নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে সে কথা জানিয়ে দিয়েছেন। শেখ হাসিনা পরামর্শ দিয়েছেন সকলেই যেন ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়ামী লীগের পক্ষে কাজ করে। সাবধানতা হিসেবে এবার আওয়ামী লীগ থেকে কোনো বিদ্রোহী প্রার্থী বের হলে তাকে আজীবনের জন্য আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কারের ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে। অপরদিকে দলটির মহাসচিব ওবায়দুল কাদেরও জানিয়ে দিয়েছেন, এবারের নির্বাচন খুবই প্রতিযোগিতাপূর্ণ হতে যাচ্ছে।
অন্যান্য বারের চেয়ে এবারে নির্বাচনের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, নির্বাচনে মনোনয়ন প্রার্থীর সংখ্যা প্রচুর। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ থেকে বেশি মনোনয়নপত্র বিক্রি হয়েছে বিএনপির। বিএনপি ৪ হাজার ৫৮০টি ফরম বিক্রি করেছে, আওয়ামী লীগ বিক্রি করেছে ৪ হাজার ২৩টি ফরম। অন্যদিকে জাপা ফরম বিক্রি করেছে ২ হাজার ৮৬৫টি। এর মধ্যে একটি আওয়ামী লীগের একটি আসনে সর্বোচ্চ ৩০টি ও ২য় সর্বোচ্চ ২৩টি ফরম বিক্রি হয়েছে। সঠিক কোনো পরিসংখ্যান না থাকলেও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ইতিহাসবিদদের মতে, মাত্র তিনশ’ আসনের বিপরীতে রাজনৈতিক দলগুলোর মনোনয়নপ্রত্যাশীর সংখ্যা প্রায় ১২ হাজারের কাছাকাছি গিয়েছে, যা দেশের ইতিহাসে অবশ্যই রেকর্ড। এসব মনোনয়নপত্র ক্রয়কারীদের মধ্যে অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদদের পাশাপাশি রয়েছেন ব্যবসায়ী, আমলা, কূটনৈতিক, সঙ্গীতশিল্পী, চলচ্চিত্র অভিনেতা, খেলোয়াড়সহ এমন এমন প্রার্থী যারা মূলত মানুষকে হাসির খোরাক জুগিয়ে থাকেন। এ ধরনের প্রার্থীদের ছড়াছড়ি ঘটায় এবারের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অনেকেই হাস্যরসের উপাদান খুঁজে পেয়েছেন।
যাই হোক, সবকিছু মিলিয়ে বোঝা যাচ্ছে এবারের নির্বাচনে সব দলই মূলত দুইটি শিবিরে যুক্ত হয়েছে। তাই বলা যায় এবারের নির্বাচন মূলত জোটবদ্ধ নির্বাচন। এই দুই শিবিরে যুক্ত হয়েছে পরস্পর বিপরীত আদর্শের শক্তিগুলোও। এ অবস্থায় যে জোটই বিজয়ী হোক না কেন, তারা খুব বড় ব্যবধানে জয়ী হতে পারবে বলে খোদ রাজনৈতিক নেতারাও মনে করছেন না। হাড্ডাহাড্ডি নির্বাচন হবে বলেই মনে করছেন তারা। তাছাড়া যে জোট বিজয়ী হবে সে জোটেও একক কোনো দল নিরঙ্কুশভাবে এগিয়ে থাকার সম্ভাবনা খুব কম, যেমনটা ২০০৮ এবং ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এবং ২০০১ সালে বিএনপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় বসেছিল। সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করতে পারার ভালো দিক হচ্ছে তারা দোর্দ-প্রতাপের সাথে দেশ পরিচালনা করার সুযোগ পায়। অন্যথায় একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকলে কিছুদিন পরেই মন্ত্রিত্বসহ অন্যান্য পদ-পদবীর দাবিতে আপত্তি, অন্তর্কোন্দল ও সমর্থন ত্যাগের হুমকি-ধামকি দিয়ে সরকার দুর্বল হয়ে পড়ে। সেক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নিতে সরকারকে হিমশিম খেতে হয়। এমতাবস্থায় কোনো একটি জোটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রতিষ্ঠিত না হলে আগামী সরকার ও সংসদ কতটুকু স্থিতিশীল ও কার্যকারিতা লাভ করবে তা নিয়ে রাজনীতিবোদ্ধাগণের মধ্যে সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের দেশের মতো উন্নয়নশীল দেশ যেখানে এখন পর্যন্ত দেশের উন্নয়নটাকেই গণতন্ত্রের আগে বিবেচনা করা হচ্ছে, যেখানে এখনো দরিদ্রতার বিরুদ্ধে লড়াই চলছে, যেখানে এখনো শিক্ষাব্যবস্থা একটি অবস্থানে সন্তোষজনক অবস্থানে উন্নীত হতে পারেনি, যেখানে এখনো বিদেশের কাছে প্রচুর পরিমাণ ঋণ রয়েছে, সেখানে এ ধরনের দুর্বল সরকার প্রত্যাশিত নয়। এ অবস্থা উত্তরণে অন্যতম পূর্বশর্ত হচ্ছে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও দীর্ঘমেয়াদী সরকার। অথচ আসন্ন সংসদ নির্বাচনে এ ধরনের কোনো সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কোনও লক্ষণ পরিলক্ষিত হচ্ছে না। বরং পরিস্থিতি আরো অনিশ্চয়তা ও ভঙ্গুরতার দিকে যাত্রা করেছে। এ অবস্থায় কেবল ক্ষমতার মসনদে যাওয়ার জন্য বিপরীত আদর্শের সাথে চাল-ডাল-খিঁচুড়ি মার্কা জোটবদ্ধ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার মানসিকতার পরিবর্তন করা উচিত বলে চিন্তাশীল মহল মনে করছেন।