ঢাকা মহানগরীর অনেকগুলো সমস্যার মধ্যে বড় একটি সমস্যা হচ্ছে রাস্তার ফুটপাত বে-দখল হয়ে যাওয়া। বলা চলে ঢাকা শহরের ফুটপাতের বিরাট একটা অংশই এখন হকারদের দখলে। ফুটপাত দখল করে হকারদের পশরা সাজিয়ে বসায় প্রতিনিয়ত ভুগতে হচ্ছে পথচারীদের। ঢাকা সিটি ম্যানুয়াল-১৯৮২ ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অধ্যাদেশ ১৯৭৬-তে রাজধানীর ফুটপাতগুলো দখলমুক্ত এবং ফুটপাত পথচারীদের হাঁটার জন্য উপযোগী করার কথাও উল্লেখ থাকলেও আদতে তা রক্ষিত হচ্ছে না। ফুটপাত দখল করে বসানো হকারগণ প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের নিয়মিত বখরা দিয়ে নির্বিঘেœ চালিয়ে যাচ্ছে তাদের দখলদারিত্ব। মাঝে মাঝে আইওয়াশ হিসেবে জোরালো উদ্যোগ ও ঢাক-ঢোল পিটিয়ে এগুলো উচ্ছেদ করা হলেও স্বল্প সময়ের ব্যবধানে তারা আবারো ফিরে আসে।
এ তো গেল অর্থের বিনিময়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতাদের যোগ-সাজসে করা অপকর্মের কথা। কিন্তু এগুলো ছাড়াও রাস্তার পাশে থাকা দোকানদারদের আগ্রাসী মনোভাবের কারণেও অনেক স্থানের ফুটপাত বে-দখল হয়ে যায়। দেখা যায় ওয়েল্ডিং মেশিন, মোটর সাইকেল বা গাড়ি মেরামতের দোকান, ফার্নিচারের দোকান, হোটেল ইত্যাদির সামনে থাকা অংশটুকু তারা নিজ দায়িত্বে দখল করে নেন। এগুলো নিয়ে পথচারীরা কোনো আপত্তি করতে পারে না। কারণ দোকানীরা স্থানীয় ও সংঘবদ্ধ বিধায় অত্যন্ত প্রভাবশালী হয়ে থাকেন।
ঢাকার বিশেষ কিছু এলাকা রয়েছে যেখান থেকে প্রশাসনের কর্মকর্তা ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদেরকে প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে ফুটপাত দখলে চলে গেছে। বিশেষ করে গুলিস্তান, নিউমার্কেট, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট এলাকা, বায়তুল মোকাররম মসজিদ এলাকা, ফকিরাপুল, নয়াপল্টন, পুরানা পল্টন, দৈনিক বাংলার মোড়, মালিবাগ, মতিঝিল, শাহবাগ, যাত্রাবাড়ী, নীলক্ষেত ইত্যাদি এলাকা অন্যতম। এসব স্থানে লোক দেখানো উচ্ছেদ অভিযানও চলে মাঝে মধ্যে। কিন্তু প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতাদের সংশ্লিষ্টতা থাকায় তারা অভিযানের আগেই খবর পেয়ে যায়। আবার কখন বসতে হবে তার গ্রিন সিগনালও তাদের কাছ থেকেই পাওয়া যায়।
হকারদের দিয়ে ফুটপাত দখল আসলে বিরাট এক ব্যবসা। নিয়মিত হকারদের হাত থেকে মোটা অংকের টাকা উত্তোলিত হওয়ায় প্রশাসনের একটা বড় অংশ মনেপ্রাণেই চায় না ফুটপাত দখলমুক্ত হোক। গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এসব টাকা প্রশাসন এবং রাজনৈতিক নেতাদের উচ্চস্তরে পর্যন্ত ভাগাভাগি হয়। তাছাড়া যারা এসব চাঁদার টাকা উত্তোলনের দায়িত্বে থাকে তারা এ সুবিধার বিনিময়ে রাজনৈতিক নেতাদের স্বার্থে কাজেও লেগে থাকেন। অর্থাৎ রাজনৈতিক নেতাদের পোষ্য প্রতিপালনে এগুলো হচ্ছে আয়ের অন্যতম মাধ্যম। সুতরাং তারা কিছুতেই চাইবেন না ফুটপাত দখলমুক্ত হয়ে যাক। কিন্তু সাধারণ মানুষের সুবিধা ও মানুষের চলাচলের পথকে নির্বিঘ্ন রাখা অবশ্যই সু-শাসনের অংশ। অন্তত এই একটি কারণে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে এসব রাজনৈতিক প্রভাব ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের অবৈধ কর্মকা- বন্ধ করে রাস্তা-ঘাটকে নির্বিঘ্ন রাখা উচিত। তাছাড়া যে সব ক্ষেত্রে সরাসরি অর্থনৈতিক সম্পর্ক যুক্ত নয়, অর্থাৎ সচেতনতার অভাবে যে দখলদারগণ ফুটপাত দখল করে রাখছেন তাদেরকে এ ব্যাপারে সচেতন করা যায়। আইনের শাসন কায়েম ও জনসচেতনতাই পারে দেশকে সুন্দর করে গড়ে তুলতে। আমরা আশাবাদী, এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ যথাযথ স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণে উদ্যোগী হবেন।