দেশে এমএনপি সেবা অর্থাৎ মোবাইল ফোনের নম্বর অপরিবর্তিত রেখে অপারেটর পরিবর্তনের সুবিধা চালু হয়েছে। ১ লা অক্টোবর থেকে পরীক্ষামূলকভাবে এর কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এ সুবিধার ফলে কোনো অপারেটরের সেবা পছন্দ না হলে চাইলেই ব্যবহৃত নম্বর অপরিবর্তিত রেখে অন্য অপারেটর বেছে নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। আমাদের দেশে মূলত ভুক্তভোগী অনেক গ্রাহক রয়েছেন যারা অতীতে একটি নম্বর নিয়ে আত্মীয়-স্বজন বা ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে পরিচিত হয়ে গেছেন। এ কারণে তারা অপারেটরের সেবা পছন্দ না হলেও নম্বরটির কারণে অন্য অপারেটরে যেতে পারছেন না। নতুন এ সেবা চালু হওয়ার পর গ্রাহকের এ সমস্যা আর রইল না। কিন্তু এক্ষেত্রে বড় ধরনের বাধ সেধেছে অপারেটর বদলে অতিরিক্ত খরচ।
শুরুতে এই সেবার জন্য ফি নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩০ টাকা। কিন্তু এটি চালুর সময় জানানো হল ফি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ টাকা। ফি বাড়ানোর কারণ জানতে চাইলে বিটিআরসি চেয়ারম্যান গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, এমএনপি সেবা চালুর জন্য আমরা টাকা খুব বেশি বাড়ানো হয়নি। প্রথমে যে ব্যবস্থা করা হয়েছিল অনেক আগে, তখন ৩০ টাকা ফি নির্ধারণ করা হয়েছিল। পরে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা গেছে, যে প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তাদের জন্য এই সেবা ব্যবসাসফল হবে না। তাই ২০ টাকা বাড়িয়ে ফি ৫০ টাকা করা হয়েছে। এই পঞ্চাশ টাকার সাথে যুক্ত হবে আরো ১৫ শতাংশ ভ্যাট। অর্থাৎ মোট ৫৭ টাকা ৫০ পয়সা। তবে বিটিআরসির চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, অপারেটর পরিবর্তনের জন্য গ্রাহককে এখন যে টাকা দিতে হচ্ছে, তার হার ধীরে ধীরে কমানো হবে। লাইসেন্সপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান লাভ বেশি করলে এই টাকার হার আরও কমিয়ে দেয়া হবে। এটুকু গ্রাহকদের কাছে মানানসই মনে হলেও অনাগ্রহী হওয়ার বড় কারণ দাঁড়িয়েছে সিম পরিবর্তন বা রিপ্লেসমেন্টের ওপরে ১০০ টাকার কর। যা সহ গ্রাহককে মোট ব্যয় করতে হবে মোট ১৫৮ টাকা। পোস্টপেইড গ্রাহকদের দ্রুত কাজের জন্য সেটার হার আরও বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ উচ্চ খরচের কারণে অনেক গ্রাহক চাইলেও অপারেটর বদলে আগ্রহ হারানোর সম্ভাবনা রয়ে গেছে। এক্ষেত্রে একান্ত বাধ্য না হলে গ্রাহকগণ অপারেটর বদলে আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারেন এবং যে উদ্দেশ্যে এ সেবাটির প্রবর্তন করা হয়েছে অর্থাৎ সেবা দানের ক্ষেত্রে অপারেটরদের মাঝে প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হওয়া, সেটি কার্যকর হবে না।
বর্তমানে বিশ্বের ৭২টি দেশে এই সেবা চালু রয়েছে। প্রতিবেশী দেশ ভারতে ২০১১ সাল থেকে, পাকিস্তানে ২০০৭ সাল থেকে এ সেবা চালু রয়েছে। বিশ্বের অনেক দেশে এমএনপি সুবিধা বিনামূল্যে পাওয়া যায়। সেসব দেশে সেবা দানের প্রতিযোগিতাও বেশি। কিন্তু আমাদের দেশে অতিরিক্ত খরচের কারণে এর উদ্দেশ্য মার খাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে সিম রিপ্লেসমেন্টের জন্য ১০০ টাকা কর বাড়তি বোঝা। এক্ষেত্রে এ খরচটি কমানো যায় কি না সে ব্যাপারে বিটিআরসি আরো ভেবে দেখতে পারে। কেননা, অপারেটরগুলো এখানে নতুন কোনো সংযোগ বিক্রি করছেন না। পূর্বের অপারেটর থেকে শুধু গ্রাহক স্থানান্তরিত হচ্ছে। ঐ গ্রাহক প্রথম অপারেটরের কাছ থেকে সিম ক্রয়ের সময় একবার কর প্রদান করেই সিম নিয়েছেন। এখন অপারেটর বদলের সময় আরেকবার কর দিতে গেলে সেটা অবশ্যই বাড়তি বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। সুতরাং এ ব্যাপারে অবশ্যই কর্তৃপক্ষের ভেবে দেখার অবকাশ রয়েছে।