আমি খুব স্বল্প পরিমাণ অর্থ রোজগার করি। এ দিয়ে কোনোমতে দিন পার করি। সামান্য ব্যতিক্রম হলে, পরিবারের কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে বা কোনো প্রকার ঝামেলায় পড়লে মুশকিলে পড়ে যাই। খুবই সাধারণ মানের জীবন যাপনে অভ্যস্ত আমি। দীনহীন বেশ বললেও বাড়িয়ে বলা হবে না।
আমার এ ধরনের জীবন যাপন নিয়ে আমার শুভাকাঙ্ক্ষীদের রয়েছে তীব্র ক্ষোভ। এই যুগে এমন একজন প্রতিভাবান(!) মানুষ এভাবে পড়ে রয়? একটু চেষ্টা প্রচেষ্টা করলেই তো ভালো একটা উপার্জন করা যায়। অনেকে অনেক সময় অনেক প্রস্তাবও দিয়ে থাকেন কিছু করার জন্য। কিন্তু আমি সেদিকে মনোযোগী নই। তবে মাঝে মাঝে ভাবি কিছু একটা করা দরকার উপার্জনের জন্য। এমনি এক দুর্বল মুহূর্তে বড় ভাই এই একই বিষয় নিয়ে কথা তুললেন। বললেন, আর কত? এখন তো কিছু একটা করতে পারিস! বাচ্চা-কাচ্চা হয়েছে, সংসার হয়েছে। ওদের ভবিষ্যত আছে। পড়ালেখা আছে। আমিও তখন উনার সাথে সায় দিলাম। বললাম, দেখি- সামনের বছরের দিকে কিছু একটা করার চেষ্টা করব।
বেশ কয়েকমাস কেটে গেলো এরপর। আজকে হঠাৎ মনে হলো- আমার বড় ভাইতো আমার মতো অন্য কিছু করেনি। বিয়ের পর থেকে রাত দিন চেষ্টা করেছেন উদয়াস্ত পরিশ্রম করে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য। শিক্ষকতার পাশাপাশি ব্যবসা শুরু করেছেন। এক সময় ব্যবসা ভালো হওয়ায় ব্যবসাতেই মনোযোগ দিয়েছেন। ছেলে মেয়েকে পড়ালেখা করাচ্ছেন। এখন এমন একটা পর্যায়ে এসে পৌছেঁছেন যে দেখে বয়সের চেয়ে অনেক বুড়ো মনে হয়। অথচ আমার বাবা এখনও বয়সের তুলনায় অতটা বুড়ো হয়ে যাননি। বেশ ভালোভাবেই চলাফেরা করতে পারেন তিনি।
বড় ভাই ও ভাবী- দু'জনে মিলে প্রচণ্ড পরিশ্রম করে সংসারটাকে গড়ে তুলেছেন। সামান্য জমি কিনে তার উপর বাড়িও করেছেন ছোটো-খাটো একটা। অবশ্য ভাবির বাবার পরিবারের অবদানও আছে এর পেছনে। ব্যবসায় মোটামুটি সংসার চলে যাচ্ছে। বেশ কিছু নগদ অর্থের লেনদেন হয় দোকানে। ব্যবসাটা মূলত সিম বিক্রি, ফ্ল্যাক্সিলোড, বিকাশ ইত্যাদির। হঠাৎ কিছুদিন আগে ডিবি পুলিশ এসে হানা দিয়ে দোকানের মালামাল জব্দ করে নগদ টাকাসহ ধরে নিয়ে গেল। অভিযোগ বিকাশে অবৈধ লেনদেনের। অর্থাৎ কোথাও কোনো অপহরণকারী মুক্তিপন আদায়ের জন্য বিকাশে টাকা লেনদেন করেছে। গ্রাহকের পরিচয় না রাখায় সন্দেহমূলকভাবে বেশ কিছু দোকানীকে ধরে নিয়ে যায়। তার মধ্যে আমার বড় ভাইও ছিলেন। ধরে নিয়ে যাওয়ার পর মারধোর, রিমান্ড। প্রচুর অর্থ ব্যয় ও দৌড়াদৌড়ি করে জামিন করানো হয়। মামলা এখনও চলছে। পাশাপাশি যে নগদ টাকাগুলো নিয়ে গিয়েছিল তা আর ফেরত পাওয়া যায়নি। পুনরায় কষ্টে-সৃষ্টে পুজিঁ জোগাড় করে এখন আবার ব্যবসা শুরু করেছেন।
আজকে হঠাৎ ঘটনাটি মনে পড়ে গেল। এই যে আমাদের সমাজব্যবস্থা, যেখানে বিচার নেই, ন্যয়-নীতি নেই- এখানে পয়সা কামিয়ে কি হবে? আমার পয়সা নিয়ে আমি নিরাপদ, আমার পয়সা কেউ লুটে নেবে না তার নিশ্চয়তা কোথায়? পয়সা হলে আমি যে দুর্বৃত্তদের টার্গেটে পড়ে যাব না তার গ্যারান্টি কি? উদয়াস্ত শ্রম দিয়ে আমার কামাই করা টাকা কেউ একদিন এসে পিস্তল ঠেকিয়ে নিয়ে গেলে তো সবই গেল। এর মাঝে অর্থ কামাই করে ফায়দা কোথায়? কোনো বিপদ আপদ আসার আগে যেটুকু ভোগ করা যায় সেটুকুই কি তবে লাভ?
যদিও ভাবছি এখন কিছু একটা করা দরকার, কিন্তু এগুলো মনে আসলেই মনে হয় এই সমাজব্যবস্থাকে এভাবে রেখে আমি কোথায়, কীভাবে বান্ধি সাধের ঘর?