আমি একটা বিষয় বুঝতে পারছি না। আমরা কোন বুঝে বা কোন জ্ঞানে এখনও নিশ্চিন্ত হয়ে বসে আছি! যে খবরটা এতদিন পত্রিকার পাতায় সীমাবদ্ধ ছিলো, টেলিভিশনের পর্দায় সীমাবদ্ধ ছিলো, অনলাইনের টেক্সটে সীমাবদ্ধ ছিলো সেই খবরটা এখন আর খবর নেই। সেই খবর আজকে আমাদের চোখের সামনে ঘটছে। আগামীকাল সেটা আমাদের উপর ঘটতে থাকলে কে আমাদেরকে সেটা থেকে উদ্ধার করবে? মায়ানমারে রোহিঙ্গাদের মধ্যে বিত্তবান লোক ছিলো না তা তো নয়। তাদের মধ্যে এমপি, মন্ত্রীও ছিলো। অং সান সুচির পিতা অং সানের চাইতে বড় লিডার ছিলো রোহিঙ্গা মুসলিমদের একজন। কিন্তু সেই রোহিঙ্গাদের আজকে কি পরিণতি? তারা নিজ দেশে পরবাসী। লাথিয়ে, গুতিয়ে, গলা কেটে, আগুন দিয়ৈ পুড়িয়ে তাদেরকে সেখান থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে।
.
আফগানিস্তানে তাই হয়েছে, ইরাকে তাই হয়েছে, সিরিয়ায় তাই হয়েছে, কসোভোতে তাই হয়েছে, জিংজিয়াং- উইঘরে তাই হচ্ছে, কাশ্মীরে তাই হচ্ছে, ফিলিস্তিনে তাই হচ্ছে। কোথাও বিচার নেই। মানবতাবাদীরা বড় জোর নিন্দা, প্রতিবাদ করে দায় সারছেন। আগামীকাল এভাবে আমাদের উপর হলে কে আমাদেরকে রক্ষা করবে? কে আছে আমাদের পাশে? তিনদিকে ভারত, এক অংশে মায়ানমার। বাকি একদিকে অথৈ সাগর। অনেকে মনে করতে পারে যে রোহিঙ্গাদের প্রেক্ষাপট আমাদের মত নয়। আমরা এখানে সংখ্যাগুরু। সুতরাং অন্যদের মত পরিস্থিতি আমাদের হবে না।
.
কিন্তু ভাই, তুমি বোধ হয় ভুলে গেছ যে তোমার আল্টিমেট পরিচয় মুসলিম। তুমি নিজেকে যতই ধর্মনিরপেক্ষ আর উদার মনে কর, গণতন্ত্রের সৈনিক মনে কর, বাইরে থেকে তোমার পরিচয় কেবলই মুসলিম। আর আল্লাহর চোখে আল্লাহর সাথে অঙ্গীকার ভঙ্গকারী। আল্লাহ মুসলিম হিসেবে, মুমিন হিসেবে তোমার উপর যে দায়িত্ব অর্পণ করেছিলেন সেই দায়িত্ব তুমি ভুলে গেছ অথবা অস্বীকার করেছ। সুতরাং এর পরিণতি হিসেবে দুনিয়াতে লান্ছনা তোমাকে ভোগ করতে হবেই। কেউ তোমাকে এই পরিণতি থেকে রক্ষা করতে পারবে না। তুমি আজকে এদেশের মন্ত্রী, এমপি, বিচারক, ডাক্তার, আইনজীবী, বড় সরকারি কর্মকতা? ওটা ওদের মাঝেও ছিলো। দেশে আক্রান্ত হলে তোমার এসব পরিচয় কাজে আসবে না। তখন একমাত্র পরিচয় হবে উদ্বস্তু, শরণার্থী। আর অস্ত্রের নিচে পড়ে গেলে দফা রফা হয়ে যাবে
.
বিচার? মুসলমান মারলে আবার বিচার আছে নাকি? কোথাও বিচার হয়েছে আদৌ? কসোভোতে লাখ লাখ মুসলিম নরনারীর হত্যা ও ধর্ষণের বিচার হয়েছে? কয়েকজন জেনারেলের বিচারই কি বিচার? আচ্ছা ধরলাম সেটাও বিচার। কিন্তু পৃথিবীর অন্য প্রান্তে মুসলমান হত্যা কি সেগুলো দেখে বন্ধ হয়েছে? এরপরেও কি নারকীয় হত্যাকাণ্ড করেছে মায়ানমারের সেনা ও মগরা মিলে!! এভাবে কালকে তোমাকে হত্যা করা হলেও কারও কিছু এসে যাবে না। ব্রিটেন মায়ানমারের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নিয়ে কূটনৈতিকভাবে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলছে। এভাবে তোমাদেরকে হত্যা করা হলে কূটনৈতিক পদক্ষেপ নিয়ে ওদেরকে শান্ত করা হতে পারে মাত্র। বিচার কখনোই হবে না।
.
তাহলে কীসের ভরসায়, কোন আশায় এত নিশ্চিন্ত, নিরুদ্বেগ আমরা? সম্ভবত গরু-ছাগল জবাই হওয়ার আগে যেমন জানে না তারা কিছুক্ষণ পরে জবাই হচ্ছে তেমন আমাদের অবস্থা হয়ে গেছে। বোধশক্তি নাই হয়ে গেছে। যদি তাই না হত তবে এমন স্বাভাবিক থাকা সম্ভব হত না। নিশ্চয়ই আমাদের মাঝে এর প্রভাব পড়ত। আমাদের মাঝে চিন্তার উদ্রেক হত। কিন্তু মানুষের চেহারা, কাজ-কর্ম দেখে মনে হয় তাদের কিছুই হয়নি। বরং কেউ উদ্বেগ প্রকাশ করলে বলে, আরেহ! ওসব নিয়ে চিন্তা করে কি লাভ? তাদের মত অবস্থা আমাদের হবে না। শান্তিতে থাকো। আরাম করো। উৎসবে মনোযোগ দাও!!
এই দিন থাকবে না, এই দিন থাকবে না বলে দিলাম। আপনি যেই হোন না কেন, যতবড় শেঠই হোন না কেন- আপনি পার পাবেন না।