আমার জেঠা বিবাহসুত্রে দিনাজপুর এর বাসিন্দা হলেও আমার কখনো যাওয়া হয় নাই।পঞ্চগড় ভ্রমণ শেষে আমি আর আমার দুই বিয়াই রওনা হলাম উত্তরবঙ্গ আরেক জিলা দিনাজপুর ভ্রমণএ। প্রথমে গেলাম কান্তজির মন্দির ভ্রমণ করতে। অনেক নাম শুনেছি এই মন্দির এর,ভিতরে গিয়ে দেখি যা শুনেছি তার থেকেও কয়েকগুণ বেশি সুন্দর। ছোট্ট একটা জায়গাতে মন্দির টির অবস্তান। মন্দিরের প্রতিটা ইট এ এত সুক্ষ কারুকাজ যে কারো নজর কারবে।পুরোহিত এর সাথে কথা বলে মন্দির এর ইতিহাস জানলাম,সম্রাট আকবর এর আমলে কেও একজন আকবরকে এসে বলে যে সে নাকি স্বপ্নে দেখেছে এই বঙ্গে একটা মন্দির করতে হবে।রাজা মুসলিম হওয়া সত্তেও মন্দির নির্মাণের খরচ দিয়ে এই বঙ্গে পাঠিয়ে দেয়।প্রায় বিশ বছর ১১১ জন কর্মির কঠোর পরিশ্রমের ফল এই মন্দির। মন্দির এর চার দেওয়ালে লিখা আছে চার যুগের ইতিহাস। সব শেষ যুগ হল কলিযুগ। ভারতবর্ষের হাতি,ঘোড়া, বিবাহ,পালকি ইত্যাদি খুদাই করা আছে প্রতিটা ইট-এ।উইনেস্কো এটিকে বিশ্ব সুন্দর্যের তালিকায় রেখেছে।প্রতিদিন অনেক বিদেশী আসে এটিকে দেখার জন্য।প্রতিবছর মাঘ মাসে মন্দির চত্তরে বিশাল মেলা হয়।এর পর গেলাম রামসাগর দেখতে।এটা এত বড় দিঘি যে ঘুরে দেখতে ভ্যান ভাড়া করা লাগল,৫০ টাকা ভ্যান ভাড়া করে দিঘিটা একটা চক্কর দিলাম।বড় টাইলস করা একটা ঘাট আছে, দিঘির ভিতরে ছোট্ট একটা চিড়িয়াখানা আছে।দিঘিটা নিয়ে অনেক পৌড়ানিক কথা কথিত আছে।যেমন কোন এক রাজা নাকি স্বপ্নে দেখেছেন যে দিঘিতে পানি ইঠবে তখনই যখন রাজার স্ত্রী দিঘিতে নামবে।রাজা শিকল পরিয়ে তার স্ত্রী কে দিঘিতে নামায় আর সাথে সাথে বিশাল দিঘি টা পানিতে পূর্ন হয়ে যায়।শিকল টান দেয়ার পর দেখা গেল রাজার স্ত্রী আসেনি আসল শুধু শিকল। কথিত আছে দিঘির পানি নাকি কখনো শুকায় না। মনটা ভরে যায় এত বড় দিঘি দেখে। তবে নিরাপত্তা তেমন না থাকায় অবাদে চলছে ছেলেমেয়ে দের রঙ্গলিলা।যাইহোক রামসাগর দেখে রওনা হলাম দিনাজপুর ফুলবাড়িয়া কয়লাখনি দেখতে।তবে নিরাপত্তার কড়াকড়ি থাকার কারনে ভিতরে যাওয়া হল না তবে চেস্টার কোন ত্রুটি ছিল না ঢোকার জন্য। বাইরে থেকে দেখলাম কয়লার স্তুুপ। গেট এর বাইরে থেকে দেখলাম দুইজন বাংলাদেশি বের হলে চারজন চাইনিজ বের হয়,খবর নিয়া দেখলাম ভিতরের ৬০ ভাগ ই চাইনিজ। চাইনিজ দের শক্তি বেশি হওয়ায় মুলত কামলা হিসাবে ওদেরকে নিয়া আসা হয়।একরাত হোটেল এ কাটানোর পর পরদিন রওনা হলাম দিনাজপুর এর বিখ্যাত স্বপ্নপুরি পার্ক দেখতে। স্বপ্নপুরি পার্ক এর মালিক স্থানীয় এক রাজনৈতিক ব্যাক্তি।অনেক বছর যাবৎ শুরু হলেও এখনো এর কাজ চলছে।দিন দিন এর সুন্দর্য বৃদ্ধি করা হচ্ছে। ঢোকার সময় দুইটা পরি,ভিতরে চিড়িয়াখানা, মাছের একুরিয়াম, গুহা,আদিম জীবন,প্রাকিতিক পরিবেশ সব মিলিয়ে এক অদ্ভুদ সুন্দর।মালিক এর ছেলে বিয়ে করেছে ক্লোজআপ তারকা সালমা কে।সালমার ঘড়ও আছে পার্ক এর ভিতর।তবলা,বেহালা,হারমনিয়াম এর প্রতিকৃতিও আছে।বোঝা যায় মালিক অনেক সংগীত প্রিয় মানুষ। দিনাজপুর মূল শহর থেকে পার্ক এরর দুরত্ত ১০০ টাকা ছি এন জি তে।এর পর অনেক স্মৃতি নিয়ে রওনা হলাম বগুড়ার উদ্দেশ্যে।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:৫০