এক
-হলুদ রঙের প্যান্ট কিনে আনলে কেন?
-দেখ রুবি, তুমি রাগ করছো কেন? আমার সব প্যান্টই হয় কালো বা অ্যাশ কালারের। তাই ভাবলাম একটু ভেরিয়েশন আনার জন্য একটা শকিং কালারের প্যান্ট কিনি। তাই এই প্যান্টটি কিনেছি।
অফিস থেকে ফিরেই আনিসের এই হলুদ রঙের প্যান্টাটা দেখে আমার মেজাজটা চরমে উঠলো। একটা মানুষ এতটা অগোছালো হয় কি করে? আনিস এমন একটা মানুষ যার কোন কিছুই আমার পছন্দ হয় না। দেখা যাবে আমি একটু খেয়াল না করলে সে কালই অফিসে এই হলুদ রঙের প্যান্ট পড়ে রওয়ানা হবে।
-কি হলো, রুবি, কথা বলছ না কেন? একটা প্যান্ট নিয়ে শুধু শুধু এতটা রাগ করা কি ঠিক? আর আমি এই প্যান্টটা তো তোমার জন্য আনিনি, তাহলে তুমি কোন যুক্তিতে রাগ করছো?
এই হলো আনিস! যার নিজের কোন কিছুতেই খেয়াল নেই। সেই সঙ্গে আমার দিকেও কোন খেয়াল নেই। আমি যদি সেজেগুজে ওর সামনে যাই ও কিছুই খেয়াল করেনা, অফিস থেকে এসেই ওর জুতাগুলো দরজার সামনেই ফেলে এসেছে। আমাকে এগুলো তুলে রাখতে হয়েছে। এখানে মেঝেতে ওর অফিসের ব্যাগ, প্যান্ট, শার্ট সবই পড়ে আছে, এসব নিয়ে ওর সাথে আমার অনেক ঝগড়া হয়েছে।
অথচ আনিসের কোন বিষয়েই কেউ কোন দোষ দিতে পারবে না, সে সবার সাথে ভালো ব্যবহার করে বিশেষ করে আমার পরিবারের লোকরা ওকে খুবই পছন্দ করে। আর আমি যা বলি ও তা-ই করার চেষ্টা করে, কখনওই আমার অজান্তে কিছু করে না। তাই ও-কে আমার কাছে একজন ভালো মানুষ মনে হয়, কিন্তু কোন ভালো লাগার মানুষ মনে হয় না।
ভালো-লাগার মানুষ! হ্যাঁ, ওতো আমার ভালো-লাগার মানুষই ছিলো। পরিবারের সবার অমতে আমি ওকে বিয়ে করেছি, আর বিয়ের পরই ওর কদর্য রূপের সামনে আমাকে পড়তে হয়েছে। প্রতিনিয়ত ওর এই কদর্য রূপ আমাকে চরম অস্বস্তিকর জীবনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। ওর কদর্য রূপ প্রথম আমার চোখে পড়ে বাসর রাতে, বাসর রাতে ও ঘরে ঢোকে স্যান্ডো গ্যাঞ্জি পরে। ও আমার দিকে তাকিয়ে দাঁত বের করে হাসছিল, আর রাগে আমার সমস্ত শরীরে আগুন জ্বলছিল!
এই যে আমি চুপচাপ বারান্দায় বসে আছি, আমি জানি আনিসের এটা নিয়ে কোন মাথা ব্যথা নেই, ও এখন ওর মুঠোফোনে গেমস খেলছে ওর নকিয়া ১১০০ মোবাইলে স্নেক বলে একটা গেম আছে। ওর ইচ্ছা এটার অষ্টম ধাপে যাবে, এটার জন্য অফিস থেকে এসে প্রতিদিনই খুব চেষ্টা করছে, উকি দিয়ে ওর দিকে চেয়েই মেজাজটা আরো খারাপ হলো। খালি গায়ে মেঝেতে শুয়ে শুয়ে গেমস খেলছে, লুঙ্গিটা উঠে গেছে হাটুর উপড়ে! উফ্ একটা মানুষ এতটা বিরক্তিকর হয় কেন?
- রুবি চলো খেয়ে নেই! খিদা লেগেছে ।
- টেবিলে খাবার দেয়া আছে, খেয়ে নাও, আমি খাব না।
- আচ্ছা তুমি আমার হলুদ প্যান্টা নিয়ে ক্ষেপে আছো? ঠিক আছে কালই আমি এই প্যান্টটা পাল্টে আনব। এবার চলো খেয়ে নেই। খুব খিদা লেগেছে।
-তুমি হলুদ কিংবা লাল রঙের প্যান্ট পড়লেই বা কি?
-দেখ রুবি, আমি জানি তুমি আমার চালচলনে খুবই বিরক্ত হও! কিন্তু আমিতো মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছি। প্রতিদিন অফিস থেকে এসে এমন দেখতে ভালো লাগে না। আমি কি তোমার কোন কিছু মাথা ঘামাই? তুমি কি পরো না পরো সেটা নিয়ে তো আমি তোমাকে কখনো বিরক্ত করি না। তাহলে তুমি এমন করছো কেন?
-তোমার মাথা থাকলে তো মাথা ঘামাবে, তুমি যেই রকমের মানুষ তোমার বিয়ে করা উচিৎ হয় নাই। উচিত ছিল একা একা থাকা, আশেপাশের মানুষের তোমার কাছে কোন অস্তিত্ব নেই। তুমি হচ্ছো একটা রোবটিক মানুষ!
-সামান্য একটা প্যান্ট এর জন্য কেন তুমি আমাকে এতো কথা শুনাচ্ছে? আমি তো বললাম কাল এটা বদলে নিয়ে আসব! প্রমিজ! বউ, এবার চলো ভাত খেয়ে নেই খুব খিদা লাগছে।
-আমি খাবো না, তুমি খেয়ে নাও।
আচ্ছা যাও, কাল থেকে তুমি যেভাবে বলবে, আমি ঠিক সেভাবে চলার চেষ্টা করব। প্লিজ, বিশ্বাস কর। কাল থেকে তুমি আমার সম্পূর্ন অনুরূপ দেখবে, বিশ্বাস কর, প্লিজ, বিশ্বাস কর।
-সত্যি বলছ?
-হ্যাঁ, সত্যি বলছি, চলো এখন ভাত খেয়ে নেই, চলো। তুমি টেবিলে গিয়ে ভাত বাড়, আমি স্নেক গেমটা আরেকবার চেষ্টা করে দিখে! শালা, একটা জায়গায় গিয়ে শুধু বারবার আটকাইয়া যাচ্ছি।
এই হচ্ছে আনিস, একটু আগে কি শপথ করলো পর মুহুর্তেই সব ভুলে গেলো! ওফ্ , আমার এই অস্বস্তির সঙ্গে বসবাস চলতেই থাকবে, চলতেই থাকবে!