এ কথা সর্বজন বিধিত যে ছোট দল হোক আর বড় দল হোক মনোনয়ন নিয়ে উপর মহলে দেন দরবার চলে। এটাও জানি এটি মুলত লেনদেন। দুই দল ভালো প্রার্থী না দিলে আমরা ভালো ভোট কিভাবে দিবো কাকে দিবো? গণতন্ত্রও কিভাবে মজবুত হবে?
গণপ্রজান্ত্রী বাংলাদেশ মানে এ দেশ শাসন করবে জনগণ তারাই দেশের মালিক। ১৬ কোটি মানুষ যেহেতু এক সাথে শাসন করতে পারে না ।সে জন্যই বাংলাদেশকে ৩০০টি সংসদীয় এলাকায় ভাগ করা হয়েছে। এই ৩০০টি এলাকার মানুষ মিলে ৩০০জন নির্বাচিত এমপি বানাবে তাদের প্রতিনিধি হিসাবে। সংসদীয় গণতন্ত্রে সংসদই সব কিছুর মুল। জনগণ মানে সংসদ। এই সংসদ থেকেই আবার নির্বাহী বিভাগ গঠন করা হবে। মুলত নির্বাহী বিভাগের প্রধানমন্ত্রী /মন্ত্রী তথা মন্ত্রীসভা যৌথভাবে সংসদের কাছে জবাবদিহী থাকে। মানে সংসদের অধীন হলো নির্বাহী বিভাগ। যেহেতু সংসদ মানেই জনগণ , জনগণ মানেই দেশের মালিক তাই তার কাছে সব বিভাগই অধীন । বর্তমান সংবিধান অনুসারে অভিযুক্ত বিচারপতির ইমপিসমেন্ট করার ক্ষমতাও সংসদের হাতেই অর্থ্যাৎ জনগণের হাতেই । ষোড়ষ সংশোধনী দ্রষ্টব্য।
রাজনীতির যে কোন মেরুকরণকেই রাষ্ট্রবিজ্ঞান নেগেটিভ হিসাবে জ্ঞান করে। কারণ এতে সিন্ডিকেট হয় এবং সিন্ডিকেট হলে সুষম প্রতিযোগীতা না হয়ে একটা অসম প্রতিযোগীতা হয়। ভারসাম্যমূলক অবস্থান নড়ে যায়। ধরেন আমি ঢাকা ১২ আসনের ভোটার এবং আমি জাতীয় পার্টির সমর্থক। আমি কখনো ভোট দিলে লাঙ্গলে দিবো। কিন্তু আমার আসনে এই প্রতীক নাই ।
আমাকে জোর করে বলা হচ্ছে তুমি অন্য প্রতীকে দাও । এভাবেও মেরুকরণ প্রক্রিয়া ভোটারদের ভোটাধিকার হরণ করছে। প্রত্যেক দল যদি আজ নিজ নিজ আদর্শ নিয়ে রাজনীতি করতো তাহলে ভারসাম্যমূলক রাজনৈতিক পরিরস্থিতি তৈরী হতো।
বাংলাদেশে যেহেতু এখন জোট প্রথা খুব শক্তভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। বামের সাথে ডান, ডানের সাথে বাম। সেকুলারের সাথে নন সেকুলার, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির সাথে স্বাধীনতা বিরোধী দল একাকার হয়ে একই প্রতীকে নির্বাচন করছে তাই সাধারণ জনগণের ভিন্ন চয়েজ কমে গেছে। জিতলে এই দুই জোট থেকেই জিতবে। তাই বাংলাদেশের ভাগ্য কিন্তু তখনই নির্ধারিত হয় যখন দুই জোট মনোনয়ন চুড়ান্ত করে ফেলে।
এবার দুই জোটের মনোনয়ন প্রক্রিয়া দেখে হতাশ হয়নি এমন মানুষ কম আছে। আজকে একজনকে দেয় আবার কালকে অন্যজনকে। এলাকার জনপ্রিয় মানুষটিকে ফেলে ভিন দেশ থেকে আগত পয়সাওয়ালা কাউকে দিয়ে দিচ্ছে। আমার কাছে মনে হয়েছে দুই জোটই কোন প্রতিষ্ঠিত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় মনোনয়ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেননি। আমার নিজস্ব ভাবনা থেকে আমি মনোনয়ন প্রক্রিয়াটা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য এবং ব্যাপক সংখ্যক মনোনয়ন প্রত্যাশীর সংখ্যা কমানোর জন্য কিছু প্রস্তাব পেশ করছি। যদিও রাজনৈতিক দল গুলি এসব জানে কিন্তু করবে না। তাদের নিজস্ব সুবিধার জন্য। বলতে গেলে খারাপ শুনায় তবুও বলি মনোনয়ন বাণিজ্যের জন্য। প্রস্তাব গুলি নিম্নরূপ :
১। রাজনৈকি দল গুলার কমিটি বিন্যাস হবে সংসদীয় আসন ভিত্তিক । ৩০০ আসনে ৩০০টি কমিটি।
বর্তমানে জেলা/উপজেলা ভিত্তিক কমিটি রয়েছে। বিভাগ ওয়ারী কমিটি বা অন্য তাদারকী কমিটি থাকতে পারে। সংসদীয় এলাকার সব ইউনিয়ন কমিটি মিলে একটা কমিটির কথা বলছি।
২। সেখান থেকে কাউন্সিলদের গোপন ভোটে সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হবেন এবং সভাপতিই চুড়ান্তভাবে এমপির জন্য নমিনেশন নিবেন। এখানে অধিকতর স্বচ্ছতার জন্য ঐ সংসদীয় এলাকার সব স্কুল /কলেজ এবং মসজিদের ইমামদের ভোটার হিসাবে রাখা যেতে পারে।
৩। তিনি কোন কারণে অযোগ্য হলে সাধারণ সম্পাদককে বিকল্প প্রার্থী করা যাবে।
এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হলে দল গুলাকে বাড়তি ঝামেলায় পড়তে হবে না। স্কুল কলেজ মাদ্রাসা এবং মসজিদের ইমামদেরকে অথিতি ভোটার হিসাবে ভোট বা মতামত নেয়া হলে তারাও গনতন্ত্রে অবদান রাখবে এবং যিনি এমপি পদে মনোনয়ন নিবেন তাকেও এলাকার সব প্রতিষ্ঠানের সাথে সুসম্পর্ক রাখতে হবে এবং তারও দায়িত্ববোধ গড়ে উঠবে। এই ভাবে আমরা একটা সুষ্ঠু সমাক বিনির্মাণ করতে পারি।
এ,এস,এম এরশাদ
ব্লগার।
ফেইস বুক : asm.arshad
ইমেলই :[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:৪৯