ফিতরা কী?
===
যাকাতুল ফিতর বলা হয় ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গরীব দুঃস্থদের মাঝে রোজাদারদের বিতরণ করা দানকে। রোজা পালনের পর সন্ধ্যায় ইফতার বা সকালের খাদ্য গ্রহণ করা হয়। সেজন্য রমজান মাস শেষে এই দানকে যাকাতুল ফিতর বা সকালের আহারের যাকাত বলা হয়। নারী-পুরুষ, স্বাধীন-পরাধীন, শিশু-বৃদ্ধ, ছোট-বড় সকল মুসলিমের জন্য ফিতরা প্রদান করা ওয়াজিব।
কারা দিবেন?
=====
ফিতরা দেয়ার সামর্থ্য আছে (একদিন ও এক রাতের খাদ্যের অতিরিক্ত পরিমাণ সম্পদ থাকলে) এরকম প্রত্যেক ব্যক্তিকে নিজের ও পরিবারের সমস্ত সদস্যদের পক্ষ থেকে ফিতরা প্রদান করা ফরজ যাদের লালন-পালনের দায়িত্ব শরীয়ত কর্তৃক তার উপরে অর্পিত হয়েছে।
কে ফিতরা পাবে?
======
গরীব, দুঃস্থ, অসহায়, অভাবগ্রস্থ ব্যক্তিকে ব্যক্তিকে ফিতরা প্রদান করা যাবে।
কখন আদায় করতে হবে?
=======
ফিতরার খাদ্য ঈদের নামাযের আগেই বন্টন করা ওয়াজিব। ঈদের নামাযের পর পর্যন্ত দেরি করা জায়েয নয়। বরঞ্চ ঈদের এক বা দুই দিন আগে আদায় করে দিলে কোন অসুবিধা নেই। এই আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে জানা গেল যে, আলেমদের বিশুদ্ধ মতানুযায়ী ফিতরা আদায় করার সময় শুরু হয় ২৮ শে রমজান। কারণ রমজান মাস ২৯ দিনও হতে পারে। আবার ৩০ দিনও হতে পারে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহাবীগণ ফিতরা ঈদের একদিন বা দুই দিন আগে আদায় করতেন।
ফিতরা প্রদান করার খাত হচ্ছে- ফকির ও মিসকীন। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে, তিনি বলেন: “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনর্থক কাজ ও অশ্লীলতা হতে পবিত্রকরণ এবং মিসকীনদের জন্য খাদ্যের উৎস হিসেবে রোযা পালনকারীর উপর ফিতরা ফরজ করেছেন। যে ব্যক্তি ঈদের সালাতের আগে তা আদায় করবে তা কবুলযোগ্য ফিতরা হিসেবে গণ্য হবে। আর যে ব্যক্তি ঈদের নামাযের পর আদায় করবে সেটা সাধারণ সদকা হিসেবে গণ্য হবে।”[সুনানে আবু দাউদ (১৬০৯) এবং আলবানী এ হাদিসটিকে সহীহ আবু দাউদ গ্রন্থে ‘হাসান’ বলে আখ্যায়িত করেছেন]
যা দিয়ে ফিতরা দেয়া যাবে?
==============
আবু সাঈদ খুদরী (রাযিঃ) বলেন: “আমরা-নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগে যাকাতুল ফিতর বের করতাম এক সা খাদ্য দ্রব্য কিংবা এক সা যব কিংবা এক সা খেজুর কিংবা এক সা পনীর কিংবা এক সা কিশমিশ।[৭][৮] এই হাদীসে খেজুর ও যব ছাড়া আরও যে কয়েকটি বস্তুর নাম পাওয়া গেল তা হল: কিশমিশ, পনীর এবং খাদ্য দ্রব্য। উল্লেখ থাকে যে, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বিগত হওয়ার পরে মুআবীয়া (রাযিঃ)-এর খেলাফতে অনেকে গম দ্বারাও ফিতরা দিতেন। মুআবীয়া (রাযিঃ)- এর গম বিষয়ে দ্বিমত থাকা সত্বেও এবং গমের বাজার মুল্য বর্তমানে দেশে অনেক কম হওয়া সত্বেও বাংলাদেশে এটা নিয়ে ফিতরা নির্ধারণ নিয়ে কমেন্টে কয়েকটি আলোচনা আছে। পড়তে পারেন।
কী পরিমাণ ফিতরা দিবেন?
========
নবীজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর যুগে যে সব দ্রব্যাদি দ্বারা ফিতরা দেওয়া হয়েছিল তা হল, খেজুর, যব, কিশমিশ, পনীর এবং খাদ্য দ্রব্য। এবং এটাও প্রমাণিত হল যে ফিতরার পরিমাণ ছিল এক সা। যদি নবীজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খাদ্য দ্রব্য শব্দটি না বলতেন তো আমাদের প্রতি খেজুর, যব, কিশমিশ এবং পনীর দ্বারাই ফিতরা দেওয়া নির্ধারিত হত। কিন্তু আমাদের প্রতি আল্লাহর রহমত দেখুন এবং ইসলামের বিশ্বজনীনতা লক্ষ্য করুন যে খাদ্য দ্রব্য শব্দটি উল্লেখ হয়েছে বলেই উপরোল্লিখিত দ্রব্যাদি যাদের খাবার নয় তারাও নিজ খাবার দ্বারা ফিতরা আদায় করতে পারবেন। ধান নয় চাল দিয়েই দেয়াই শরীয়ত সম্মত। (শষ্যের শেষ রূপ)। তবে প্রয়োজনে টাকা দিয়েও ফিতরা আদায় করা বৈধ। বাংলাদেশের মুসলিমগণ টাকা দিয়ে ফিতরা আদায় করতে চাইলে ২.৪০ (দুই কেজি চল্লিশ গ্রাম) মধ্য মানের চাউলের মূল্য পরিশোধ করতে হবে। অবশ্য বাংলাদেশ যাকাত বোর্ড প্রতিবছর শহর ও গ্রাম এলাকার জন্য ফিতরার মূল্য নির্ধারণ করে দেন। তবে সম্ভব হলে ধান বা খাদ্যবস্তু দিয়ে ফিতরা প্রদান করা উচিত।
টাকা দিয়ে আদায় করা যাবে কিনা?
=============
আলেমদের মধ্যে দ্বিমত আছে। খাদ্য শষ্য দিয়ে বিশেষত বাংলাদেশে চাল দিয়ে দেয়ার কথা উঠে এসেছে নানা আলেমদের মতে। টাকা দেয়া নেয়ার সুবিধার কথা বিবেচনায় এবং গ্রহণকারীর ইচ্ছার প্রতিফলন দেখিয়ে শষ্যের বাজার মুল্য দিয়ে দিলে ফিতরা আদায় হবে বলেও অনেকে মত দিয়েছেন।
এক ‘সা’ মানে কী? এ সম্পর্কে দুটি কথা:
=========
ফিতরার সম্বন্ধে আলোচনা হলেই একটি শব্দ উঠে আসে আর তা হল, সা। সা হচ্ছে ওজন করার বা মাপার একটি পাত্র। যেমন গ্রামাঞ্চলে কাঠা দ্বারা ধান মাপা হয়। আধুনিক যুগে কিলো গ্রামের প্রচলন হওয়ায় সেই সা’র ওজন আরবেও বিলুপ্ত প্রায়। তবুও মক্কা মদীনায় ঈদের প্রাক্কালে ফিতরার চাল বিক্রয়কারীদের কাছে এই সা’ দেখা যায়। এই রকম এক সা’ র পাত্র আমি ২০০০ ইং সনে নিজে ক্রয় করে তাতে মদীনার শুষ্ক খেজুর ভরে ওজন করলে আড়াই কিলো থেকে সামান্য বেশী হয়। আর তাতে চাল ভরে ওজন করলে প্রায় তিন কিলো হয়। দ্রব্য যত ভারী হবে সা’ তে তার ওজনও ভিন্ন হবে। যেমন এক কাঠাতে চাল দিলে তার ওজন একরকম হবে আর ধান বা সরিষা দিলে আর এক রকম হবে। মোট কথা সা’ র পরিমাণকে সূক্ষ্ম কিলোগ্রামের এক ওজনে নির্ধারণ করা অসম্ভব। কারণ এটি একটি পরিমাপ পাত্র, কোন ওজনের নাম নয়। এই সা’র ব্যাখ্যায় বিদ্বানগণের বিভিন্ন মতের পর একটি সুন্দর, সহজ ও নির্ভরযোগ্য ওজন প্রমাণিত হয় যা, সর্বকাল ও সর্বক্ষেত্রে প্রযোজ্য। তা হল: একজন সাধারণ শারীরিক গঠনের মানুষ অর্থাৎ অধিক লম্বা নয় এবং বেঁটেও নয়, এই রকম মানুষ তার দুই হাত একত্রে করলে যে অঞ্জলি গঠিত হয়, ঐরকম পূর্ণ চার অঞ্জলি সমান হচ্ছে এক সা। [ফাতাওয়া মাসায়েল/ ১৭২-১৭৩, সউদী ফাতাওয়া ও গবেষণা বিষয়ক স্থায়ী কমিটি, ফতোয়া নং ৫৭৩৩ খণ্ড ৯য় পৃ: ৩৬৫ ]
পোস্টটি ইন্টারনেট থেকে সংকলিত। যে সব লেখা থেকে পোস্টে তথ্য যোগ করা হয়েছে তা কমেন্টে দেয়া হয়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জুন, ২০১৮ সকাল ১১:৪৯