জীবনের মধ্য থেকে জীবন দেখতে হয়।
আমি দেখেছিলাম তাকে অনেক আধারের মাঝে মিটি মিটি করে জ্বলে উঠতে। কি এক চেতনা। কি এক আবির্ভাবের সকরুন মায়াভরা কান্না মাখানো সুন্দর!
দেখুন মানুষ বেঁচে থাকে কেনো জানেন?
দুঃখ আর সুখ আছে বলেই। যারা দুঃখ অনুভবে অক্ষম তারাই মুলত অশিক্ষিত। সেই শয়তানই রাবন আর কংস। দেখুন পশ্চিমারা কি পায় তাদের জীবনে? মদ, শোষনের মিথ্যে অহঙ্কার, নিজেকে একাকি বোধ কে অসুন্দরের কাছে সপে দেয়া ছাড়া!
পশ্চিমারা যদি কৃমিনালী না করে নিজেদের স্বপ্নের রাজ্যকে রাঙাতে পারতেন বরং সেটাই হতো ভালো ও সুন্দরের উপনিবাস বলে গণ্য করা যেতো। এতো কষ্ট করে তারা যখন এলেনই, আমাদের শাসন ও শোষনের কৃমিনালী পলিটিক্সের জালে বাঁধতে গিয়ে, আজ তারা সভ্যতার সংকটে ভুগছে।
“কাঁদায়েছো শ্যাম তুমি,
কাঁদিবে তেমনি,
কাদিবোনা আমি
কঠিনো পাষানো হিয়া”
এই গানের মধ্যেই মহাকাল তার উত্তর রেখে যায়। শুধু খঁজতে যতটা সময়। আমাদের মায়াকে তারা আমাদের দূর্বলতা ভেবেছিলো। আমাদের অভিমানকে তারা বোকামী ভেবেছিলো। আমাদের প্রেমকে তারা দাস ভেবেছিলো।
তাদের ২৬ অক্ষরের রসহিন ভাষা দিয়ে যে, অনুভব করা যায় না। দেখুন স্রষ্ঠা সবাইকে সব দেয় না। আমাদের প্রতিটা বাঙালীর মনের ভিতর এতো এতো রাজ্য তা ঐ অবুঝ ইংরেজরা কিভাবে দখল করবে বলুন? সম্ভব না।
আমাদের ভাষা থেকে যে সব শব্দ ছেড়ে ছুটে গেছে। সেই সব শব্দ গুলি ফুল মনে করে যদি মালা গাঁথে ইংরেজদের গলায় পরিয়ে দেয়া যেতো তাহলে ওরা যে কি সব কান্ড করতো কে জানে?
একসময় সেক্সপিয়র বানান লেখাহত “সেক্ষপিয়র” হিসাবে। সৈয়দ মজতুবা আলী সেক্ষপিয়র বাদ দিয়ে সেক্সপিয়র বানিয়ে ফেলেন। তাতে করে তাকে তখনকার সময় অনেক সমালোচনা সইতে হয়েছিলো। কত-কি-লেখা।
বৃটিশরা আমাদের সরলতা সুযোগ নিয়ে খেলার চেষ্টা করেছে। সরলতা কোনো খেলার জিনিস না। সরলতা মধ্যথেকেই তরুলতা বেড় হয়ে এক মহাসুন্দর প্রকৃতির জন্মহয়।
জানেন বন্ধু? মানুষ সবচেয়ে বেশী সরল আচরণ করে কখন?
যখন নিজের মনের আশা ও স্বপ্নের টানে নিজের আপন চাওয়াকে প্রেম জ্ঞানে সম্প্রসারণ করে সত্য উপলব্ধির জয়গান গায়। কিংবা খুব কাছের মানুষের সাথে যখন ঝগড়া-ঝাটি হয়। এই ঝগড়া-ঝাটি গালাগালি আসলে কোনো দোষ না- এ হলো সরলতার প্রকাশ। ঝগড়ার সময় সেই অবুঝ আত্না খানিক্ষণের জন্য জেগে ওঠে তাই সব সরলের প্রবাহে তা বেগবান হয়ে যাচাই ও সকল কুটিলতার ঊর্ধে উঠে যায়।
আমি যেমন করে আপনার দিকে তাকাতে পারি। আমি যেমন করে আপনাকে দেখতে পাই। আমি যেমন করে আপনার মনের মধ্যে নদীর মতো আপনার মনে প্রবেশ করতে পারি কিংবা আপনার স্বপন পাড়ার কোনো এক দুরের কল্পনায় নিজেকে ফুটিয়ে তুলতে পারি এই সম্ভব কে যিনি এনে দিয়েছেন তিনিই যে মায়ের আদরের টান দিয়ে হৃদয় মাঝারে গেথে দেয়া বাংলা ভাষা।
আমাদের পরিবেশটাই হলো যেনো পরমাত্মার হৃদয়। এই বাংলার বুকে সব ধারণ করা সম্ভব বলেই পশ্চিমারা অবাক হয়ে আমাদের লুট করতে চায়। পশ্চিমাদের আনকালচারড ও মমতাহীন ভাবে বেড়ে ওঠার মাঝেই ইমোশন এর মাঝে আবেগ-অভিমান-প্রেম-মন ভাঙার কষ্ট বা বেদনা পায় না। এ হলো ওদের মনের নৈরাজ্য! মনের দাড়িদ্র! এরাই সেই দিনের দূর্গা মা কে আঘাত করতে যাওয়া অসুর বলে কল্পনা করা যায়।
আমাদের বাংলায় অনেক সুখ। একটি মধ্যবিত্ত পরিবারে ৭-৮ জন করে বাস করেও মান, অভিমান, রাগ করতে জানে। অভাবের মাঝে কখনও বাসি খাবারও হজম করা যায় শুধু পারিবারিক ও হৃদয়ের বাংলা সাংস্কৃতির বলয়ে থেকে। ঠিক তেমনি করেই আমাদের এই পুরো বাংলাকে যদি কল্পনা করতে শিখি যে আমরা এক মায়ের কোলে গাদাগাদি করে নয় বরং শিতের রাতে আলতো আগুনের স্পর্শ পেয়ে পাশাপাশি বসে আছি। সবাই সবার সাথে ভাব আলিঙ্গন করছি।
কেউ কাউকে কিছু বলছি না। আবার সবকিছুই শেয়ার করে ছলছি। এর নামই মহামায়া-ভৈরবি-তারা-কমলা-কালী। দেখুন হিন্দুদের একজন দেবীর মাঝে যদি এতোগুলো সুন্দর সুন্দর রূপের কল্পনা করা যায়। সেখানে ভেদাভেদ কি করে আসে?
আমরা আমাদেরি মাঝে বেচে থাকতে জানি কারন আমাদের মাঝে জ্ঞাণ শক্তি বিকাশিতো হবার সুযোগ আছে। ধরুন আমি লেখলাম জল-পানি। কি হলো এখানে?
আপনি কি কম্পিউটার কে জল আর পানির হাইফেন (-) মধ্য দিয়ে কেটে দিচ্ছি বলুন? না আমরা আমাদের সম্পদ নষ্ট করতে জানি না। তাই তো আমরা এতো বেশী শক্তিশালী। কিন্তু এইখানেই আমাদের নিয়মিত আঘাত দিতে দিতে নিজের আত্মবিশ্বাস কে ধ্বংস করতে চেয়েছিলো।
বৃটিশরা এতো কিছু করতে পারতো না। যদি না কিছু বাঙালী নষ্ট মনকে টাকার কাছে বিকিয়ে না দিতো। আর বিকিয়ে না দিয়েও বা করবে কি বলুন? ক্ষমতাকে যারা সিংহাসনের মধ্যে দেখতে পায় তারা তো লোভী। আপনি যদি আপনার লোভ, লালসা, ঈর্ষা, হিংসা এমন কি নিজের প্রেমকেও সেই পরম সুন্দর ভুবনেশ্বরীর বুকে নিজের সত্যের জোড়ে বল খাটিয়ে হলেও আলপিনের মতো গেঁথে দিতে জানেন। এবং সকল আমিত্বকে সপে দিয়ে রক্ত জবার মতো অপেক্ষা নামের চেষ্টা করতে থাকেন। দেখবে তিনি আপনাকে ঠকাবেন না।
বাংলার মতো এতো ঐশ্বর্জ আর কোথায় আছে বলুন?
ঐ চেয়ে দেখুন মা তার পুজোর থালা নিয়ে গনেশের সামনে ধুপের ধোয়া দিচ্ছেন। গনেশ ও রক্ত মাসেংর সিঁদুরের দিকে ছল ছল আঁখিতে চমকের সুরে তাকিয়ে আছেন। আবার একই সময় হঠাৎ করে আচমকা সধ্যা বেলায় মোয়াজ্জেম তার মুমিনদের জাগাতে – “আল্লাহু আকবর” বলে আজান দিচ্ছেন। ঠিক ঐ সময়ই কোনো এক প্রাইভেট শিক্ষক তার দুষ্টো ছাত্রটির কান মলে দিচ্ছেন। আবার একই সময় কোনো মা তার সদ্য কিশোরী মোবাইলের লাভ ম্যাসেজ খুঁজে পেয়ে “তুই এতোদিন ধরে এসব করছিস। ছিঃছিঃছিঃ”
দেখলেন জগদ্বীশ্বর যদি এই সব কথা একসাথে উপলব্ধি করতে জানেন তাহলে আমাদের মিলেমিশে থাকতে অসুবিধা কোথায়।
আমার যখন ৯ বছর বয়স তখন এক হিন্দুর ঘরে নিয়ে আমাকে লক্ষ্মী পূজোর খেতে দিয়েছিলেন। আমিও সেই নারিকেলে নারু ছোট জিহ্বার তিব্র স্বাদ দিয়ে উপোভোগ করেছিলাম। কৈ তখন তো মনে হয়নি এটা হিন্দুদের খাবার!
আমাদের বাসায় অনেক হিন্দুরা লক্ষ্মী মায়ের প্রসাদ পাঠিয়ে দিতো। একদম প্রথম পরিবারের কেউই খেতে চাইতেন না। আমি খেতাম।
এই খাওয়ার বিনিময়ে আমাকে কটুবাক্য শুনতে হতো কিন্তু কি করা বলুন?
কটুবাক্য যে আমি মিলাদের তবারক ভেবে কিংবা প্রসাদ ভেবে খেয়ে নিয়েছি।
আমরা দুজন অচেনা মানুষ পাশাপশি থাকলেও। একজন অন্যজনকে দেখে অনুমান করতে পারি। কিছু একটা মনেমনে ভাবতে পারি। এটাই আমাদের সম্পদ। বাচ্চাদের যদি বলেন “তোর দ্বারা কিচ্ছু হবে না”, “তোর মাথায় গোবর” , “তোর ব্রেন ভালো না” , “তুই গোল্লায় গেছিস”। তাহলে ঐ বাচ্চানামের হৃদয়ের দেবদূত তার প্রতিবাদ হয়তো করতে পারেন না তবে হয়তোবা বীনাপানী মায়ের অর্ডার মাফিক ঐ দেবদূতগুলো কাজ থেকে সাময়ীক অবসরে চলে যায় হয়তো।
দেখুন নেগেটিভের ভিতর থেকে যিনি পজেটিভকে তুলে নিয়ে আসতে জানেন তিনিই তো একজন জীবন নাটকের মেইন ক্যারেক্টার। কিন্তু উৎসাহ দ্বারা বাচ্চাদের উপকার ছাড়া ক্ষতি হয় না। বাচ্চাদের সামনে শুধু সুন্দরের প্রকাশ ঘটান দেখবেন সেই বাচ্চা হাজার বার খারাপ হয়ে যাক তাপরও আবারও কঠিন বাস্তবতার বেড়াজালের সিমাবদ্ধতার মাঝ থেকেও নিজেকে ঠিকই সময় মতো জানান দিয়ে পরিবারের বলয়ের মধ্যে চলে আসবেন।
ঘুসখোর বাবারা একটু রাগি হন বেশী। কারণ ঘুসখোর বাবার পকেটে মিথ্যে গরম থাকে। আর বেঁচে থাকার কাছে পরাজিত বাবা শুধু শুধু মা ও সন্তানের বকা খেয়ে যান।
এ কেমন অবিচার? এ দ্বায় থেকে মুক্তো সমাজ ব্যবস্থা নিয়ে আসার দায়িত্ব কার?
জীবনানন্দ দাস তার সময়ে অনেক বেশী লাঞ্চিত হয়েছিলেন। তিনি আমাদের বরিশালের বি.এম. কলেজের শিক্ষক ছিলেন। তিনি যখন “বনলতা সেন” কবিতার প্রকাশ ঘটান তখন খুব সম্ভবত তার সহধর্মিনীর লাবন্য সেন এর কথা ভেবেছিলেন। তাকে তার সমসাময়িক শিক্ষকবৃন্দ সহ্য করতে পারতেন না। সেই নিষ্ঠুর শিক্ষকরা জীবনানন্দ দাসকে খারাপ চেহারার একজন বিদঘুটে বেরসিক ও আনকালচারাল মানুষ ভেবে তুচ্ছ জ্ঞানে দেখতেন। তাই তো তিনি বে-খেয়ালের বসে ক্যালকাটায় বসে সামনে থেকে অজগরের মত ধীরে চলা ট্রামের সামনে পরে পর্দার আড়ালে চলে গিয়েছিলেন।
কিন্তু সাহিত্যরসকে যারা তার হৃদয়ের আঙিনায় ধারণ করতে জানেন তারা কখনও নিজেদের অসহায় ভাবেন না। ভাবতে পারেন না।
কারন জীবনানন্দ দাসের সাহোস ছিলো কিন্তু তৎকালীন সমাজ ব্যাবস্থার প্রায় প্রতিটি সেক্টর পঙ্গু ছিলো। এবং সাধারণ মানুষ একে তো রোদে পোড়া খালী পেট তার উপর আবার শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত। তাই তারা নিজেরা আগামীর কাছে নিজেকে দিয়ে গেছেন।
এই আগামী চিন্তাকে অগ্রগামীর প্রকাশের পিছনে বড় অবদান ছিলো হুমায়ূন আহমেদ ও আব্দুল মান্নান সৈয়দ। আব্দুল মান্নান সৈয়দ কে আমি সামনে থেকে কখনও দেখি নি কিন্তু দেখার ইচ্ছে ছিলো। তারা আসে আমাদের জাগাতে। আমাদের অচেতন মনকে সচেতন করতে।
১০০বছর সময় লেগেছে জীবনানন্দ প্রকাশ পেতে। তিনি যদি তার ছোট গল্প সমূহ লুকিয়ে না রাখতেন তাহলে ঐ ইংরেজরা আমাদের জীবনান্দকেও হয়তো কেড়ে নিতেন।
যাই হোক, আপনাদের এই মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে নিজের মধ্য থেকে উপলব্ধি করতে পেরে আমি ধন্য।
“নম নম নম
বাংলাদেশ মম”
(নজরুল ইসলাম)
আমরা বাঙ্গালী বলেই ভালোবাসার কাঙালী। প্রেম ছাড়া কোনো কিছুর কাছে আমরা কম্পোমাইজ করতে জানি না।
এই অজানা যদি দোষ হয় দোষ। সেই দোষকে ঘোষ বাড়ীর মিষ্টি রসগোল্লা ভেবে আজ জেগে উঠুন।
বলুন
বাংলাদেশ সবার, বাংলাদেশ স্রষ্টার হৃদয়। স্রষ্টার হৃদয়ের দিকে যারা চোক তুলে তাকায় তাকেও রাঙালী মুক্তি দেয় না। আজ যখন এক হয়েছি এখন জমবে, বিশ্ব দেখবে, বিশ্ব বুজবে বাঙালী পান কাকে বলে?
আপনাদের পেয়ারকা কাঙ্গলী বাঙ্গাল
মোঃ আসিফ-উদ-দৌলাহ্