যাই হোক, এই পোস্টটি দিচ্ছি অতি সম্প্রতি ও অল্পকিছু দিনের ব্যবধানে হারিয়ে যাওয়া বা হারিয়ে যেতে বসেছে এমন কিছু টেকনোলজি নিয়ে।
ফ্লিমের ক্যামেরা
একযুগ আগেও ফ্লিম ভরা ক্যামেরা পরিবারের একটি স্বপ্নের মধ্যে পরতো। ১০৮-১২০টাকায় একটি ফ্লিম কিনে মনে টান টান উত্তেজনা নিয়ে ছবি তোলা। ছবি তোলার জন্য বিশাল প্রস্তুতি। তারপর ডেভেলপ করানো। কয়েকদিন পর ছবিগুলো হাতে পাওয়া তারপর সবাই মিলে দেখা, অসাধারণ এক অনূভুতি। আজ সেই অনুভূতি কোথায়? আজ হাতে হাতে মোবাইল ফোনে স্টিল ও ভিডিও ক্যামেরা। সাথে সাথে কালার ডিসপ্লেতে দেখা যাচ্ছে। রিকশাওয়ালা, গার্মেন্টস কর্মি থেকে প্রেসিডেন্ট পর্যন্ত মোবাইর ফোনে ক্যামেরা। এতে বোঝা জাচ্ছে মানুষে মানুষে ব্যবধান কমে যাচ্ছে প্রযুক্তির কল্যানে। আসলে কি তাই?
অডিও ক্যাসেট
অডিও ক্যাসেট কেনার ধুম ছিলো। বাছাই করে টিডিকে বা সনি ফিতায় গান রেকর্ড করা ছিলো সৌখিনতা ও আভিজাত্যের প্রতিক। আর ওয়াকম্যান নামের সোনার হরিন সাথে থাকলে সেতু গ্রমের সবচেয়ে রূচিশীল মানুষ হিসেবে পরিলক্ষিত হতো। কি ভাব! ডেকসেটের টিউন করার জন্য অনেকের নাম ডাক ছিলো। অনেকে রিওয়ার্ড ফরওয়ার্ড করায় ওস্তাদ ছিলো। A ও B সাইট পাল্টিয়ে দিয়ে গান শোনার মজাই অন্যরকম ছিলো। অডিও ক্যাসেটকে প্রথম কষে এক থাপ্পর লাগালো সিডি তারপর লাথি দিলো কম্পিউটার আর একদম প্রাণে মারার মতো অবস্থা করলো মোবাইল।
বাইস্কোপ ও গ্রামোফোন
কুকুর মাথার বাইস্কোপ একদম ছোট বেলায় দেখেছি ও গান শুনেছি। আর বাইস্কোপ দেখার সৌভাগ্য একবার হয়েছিলো। ভাষা ভাষা মনে পড়ছে বলে উল্লেখ করলাম।
ভিউ কার্ড ও পোস্টার
আগে নায়ক নাইকাদের ছবির ভিউকার্ড সংগ্রহের শখ অনেকেরই ছিলো। আর সেলুনে গেলে দেখা যেতো পোষ্টারের ছড়াছড়ি। বোরাক, একটি মেয়ের মুখ সাথে একটি সাদা পায়রা ইত্যাদি ইত্যাদি। এখন ছবি দেখা খুব সহজ হাতের কাছে টিভি, মোবাইল, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ট্যাবলয়েড তো ভিউ কার্ড হারিয়ে গেছে।
ভিসিআর ও ভিসিপি
খুব অল্প ফ্যামিলির সমর্থ ছিলো ভিসিআর ও ভিসিপি কেনার। তবে ভাড়া চলতো বেশ। যিনি ভিসিআর ও ভিসিপি এর অপারেটর থাকতেন তাকেও মুরগী জবাই দিয়ে খাওয়ানো হতো। ছবির মধ্য থেকে কালো কালো রেখা চলে যেতো, ঝির ঝির করতো, অনেক সময় সাউন্ড ঠিক মতো আসতো না তারপরও কি সিমাহীন আগ্রহ ও আনন্দ বলে বুঝাবার নয়।
হাতে আঁকা সিনেমার ট্রাইল পিকচার ও পোষ্টার
পাড়ায় মহল্লায় একটি কাঠের ফ্রেমের উপর এক সপ্তাহ একটি সিনেমার পোষ্টার সাটানো থাকতো। মানুষ চকচক করা চোখে তাকিয়ে দেখতো। কবে সিনেমা হলে গিয়ে ছবি দেখতে পারবে সেই চিন্তায় মাথার ঘিলু টগবগ করতো। সিনেমা হলের সামনে সিমেন্ট দিয়ে তৈরি অনেকটা ব্লাকবোর্ডের মতো বিশাল সাইজের একটি ছবি আকার ক্যাম্পাস থাকতো। নতুন সিনেমা আসার আগের রাতে হাত দিয়ে সুন্দর করে নায়ক নাইকাদের ছবি সাথে সিনেমার নাম লেখা হতো।
কলাগাছের গেট ও ঝ্যালট
বিয়ে বড়ীতে পরম যত্নে কলাগাছ, বাঁশ ও রঙ্গীন কাগজ দিয়ে চমৎকার গেট সাজানো হতো। অসাধারণ আগ্রহ ও কৌশল। রঙ্গীন কাজগ কেটে চমৎকার ঝ্যালট ও বিভিন্ন প্রকার ফুল তৈরি করা হতো। স্কুলের স্পোর্টসে বিশাল এক বাঁশের মাথার সাথে দড়ি বাধা হতো। দড়ির সাথে থাকতো রঙ্গীন কাগজের নিষান। তখন হয়তো মানুষের হাতে এত টাকা ছিলো না কিন্তু ভালোবাসা, আবেগ, সহমর্মিতা, দরদ ছিলো।
টেলিভিশন রাখার বক্স ও বাই সাইকেলের লুকিং গ্লাস
প্রায় ঘরের টিভির জন্য একটি বক্স বানানো হতো। বক্সের পিছন থেকে টিভি ঢুকানো হতো সামনে সাটার দেয়া। তালা মারার ব্যবস্থা ছিলো। কারণ তখন টিভি অনেক দামি জিনিস। এতো মটরগাড়ী ও মটরবাইকের ছড়াছড়ি ছিলো না। বাই সাইকেল অনেকের কাছে ছিলো অনন্য সম্পদ। বিশেষ করে ফিনিক্স সাইকেল। সাইকেলে দু’টো সুন্দর গোল লুকিং গ্লাস লাগানো হতো।
বিলুপ্ত কিংবা বিলুপ্তপ্রায় জিনিসের লিস্ট করলে অনেক বড় হবে। আমার থেকে আপনারা ভালো জানেন। ইলেকট্রনিক্স ও কম্পিউটার লাইনের স্মৃতি হয়ে থাকা কিছু জিনিসের লিস্ট দিলাম।
১. পেজার
২. টেলেক্স
৩. প্লুটার
৪. ফ্লপি ডিস্ক ড্রাইভ ও ফ্লপি ডিস্ক
৫. ইনকন্ডিসেন্ট বাল্ব
৬. টেলিগ্রাফ (সরকারি হিসেবে বাংলাদেশে বর্তমানে একজন টেলিগ্রাফ অপারেটর আছেন, যার কোনো কাজ নেই, অফিস হলো সংসদ ভবনে)
৭. লোটাস
৮. ওয়ার্ড পারফেক্ট
৯. কোবাল
১০. ফরটার্ন
ইত্যাদি।
করি যে ভাবনা, সেদিন আর পাবো না।
ছিলো বাসনা সুখি হইতাম।।
দিন হতে দিন, আসে যে কঠিন।
করিম দিনহীন কোন পথে যাইতাম।।
(বাউল আব্দুল করিম)
আসুন আমরা আমাদের স্মৃতির পাতায় ঐ স্বর্ণালী দিনগুলোকে গেঁথে রাখি।