বাবা আর একটা ছেলের গল্প । বাবা বংশী দাস এবং ছেলে নিমুয়া । অভাবের সংসার , কিন্তু বাবা ছেলের মধ্যে ভালবাসার বিন্দু মাত্র অভাব নেই ।
বংশী দাস পেশায় জোকার , জন্মদিন - বিয়ে বাড়িতে " চ্যাপলিন " এর মতন নানা ভঙ্গিমায় লোক হাসায় । ছোট বেলায় দেখা চার্লি চ্যাপলিন এর ভক্ত বংশী – তার নেশা কে পেশা হিসেবে গ্রহণ করে । নিজেকে " আর্টিস্ট " বলতে দ্বিধা করে না , হোক না সে সামান্ন্য লোক হাসানোর মানুষ । দৈনিক খাবার না জুটলে ও তাঁর সম্মান বোধ প্রচণ্ড । আর্টিস্ট হিসেবে স্বীকৃতি পেতে জীবনের পদে পদে চ্যাপলিন গিরি করে চলে যায় , হাসি দিয়ে উড়িয়ে দেয় - অভাব নামের নিত্য সঙ্গীকে । কিন্তু এই শিল্পের স্বীকৃতি তো মিলেই না , পদে পদে জুটতে থাকে লাঞ্চনা , বঞ্চনা । নিজের প্রাপ্য টাকা চাইতে গেলে জুটে মহাজনের গলা ধাক্কা , উপরি পাওনা হিসেবে পুলিশি ঝামেলা তো থাকছেই , তবুও এগিয়ে যায় বংশী - জাফরের মতন লোকেরা । স্বপ্ন - একদিন বড় আর্টিস্ট হবে , লাইন ধরে তার অটোগ্রাফ নিবে , শহরের বড় সিনেমা হল তাকে দেখবার জন্য ভরে উঠবে ।
অন্যের জন্মদিন দেখে দেখে ছেলে নিমুয়া এর শখ জাগে - তাঁর জন্মদিন ও জাকজমক ভাবে পালন করা হবে , মস্ত বড় কেক , অসংখ্য বাতির মাঝে বাবা ছেলে কেক ভাগাভাগি করে খাবে , উপর থেকে পড়বে কাগজের ফুলঝুরি , বাবা তার শেখা সকল খেলা ছেলে কে দেখাবে । কিন্তু অভাবের সংসার , মা হারা ছেলে বাবা কে তার শখের কথা বলতে পারে না , সে না বুঝলে তার "উস্তাদের " কথা কে বুঝবে ??
বাবার মতন ই অভাব কে দূরে সরাতে চায় । বাতাস না আসার - দোহাই দিয়ে কখন ও নতুন জামার লোভ এড়ায় , কক্ষন ও " পানি ভিজানো রুটি " কে " মাংস - রুটি " এর সাথে তুলনা করে মেতে উঠে উল্লাসে । কিন্তু বাবা কে এড়াতে পারে না , বাবা ঠিক ই বুঝে যায় তার জন্মদিনের শখের কথা । কিন্তু এতো টাকা পাবে কোথায় ?? মাজিক বাক্য ' সুম সুম , বটু বটু , চিনো মুখরা " - বলে যেন সব দুঃখ মাজিক করে উধাও করে দেয় বাবা - ছেলে ।
ভাগ্য দেবতা যেন এই বার বংশীর দিকে মুখ ফেরালেন । হাসির রিয়ালিটি শো তে সুযোগ মেলে আমাদের এই " আর্টিস্ট " এর । নিজের চ্যাপলিন গিরি দেখিয়ে জয় করে নেয় বিচারকদের মন । কিন্তু হায় , ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস , যার জন্য বংশীর এতো আশা , আকাঙ্খা , জন্মদিন আয়োজনের এতো পরিকল্পনা - সেই নিমুয়ার ই দেখা দেয় " দুরারোগ্য ব্রেন টিউমার " , বেঁচে থাকবার আশা নেই বললেই চলে । তবু ও বংশী হার মানে না , আর্টিস্ট দের কখন ও হার মানতে হয় না ।
প্রতিযোগিতা এগিয়ে যেতে থাকে , পরিচালক এর সাথে সামান্য রেষারেষি তার জন্য জটিলতা এনে দেয় । অভিনয় করবার উপকরণ জায়গা মতন না পাওয়ায় ঘাবড়ে যায় বংশী , কিন্তু ছেলের কথা ভেবে এগিয়ে যায় নির্ভয়ে , জাত আর্টিস্ট কে দমিয়ে রাখবার সাধ্য কার ? জয় করে নেয় বিচারকদের পাশাপাশি পরিচালকের মন ও । প্রতিযোগিতার মধ্যমণি হয়ে উঠে বংশী , কিন্তু সেই দিকে তার কুনো ভ্রুক্ষেপ নেই , তার নিমুয়া কি তার জন্মদিন দেখে যেতে পারবে ?
২০ তারিখ পরবর্তী শো এর তারিখ পড়ে , কিন্তু ঐ তারিখ ই যে নিমুয়া এর জন্মদিন , কি করবে বংশী ? ভাবা ভাবির মধ্যে যায় না বংশী , নিজের বন্ধু - সুখ দুঃখের সাথী নিমুয়া কে নিয়ে ঘুরতে বেরিয়ে পড়ে , পকেটে পরিচালকের দেয়া হাজার পাঁচেক টাকা । খাবার সময় , ছবি তুলবার সময় , ঘুড়ি উড়াতে গিয়ে বার বার অন্যমনস্ক হয়ে পড়ে বংশী , নিমুয়া তার শখ পুরন করে যেতে পারবে তো ??
আর লিখবো না , বাকি টুকু ছবি টা দেখে নিজেরা ই দেখে বলবেন । চ্যাপলিন গিরি ( মিমিক আর্টিস্ট) করে লোক হাসাতে অনেক মানুষ কে দেখেছি , কিন্তু লোক কাদানো মানুষ ? - নাহ বস , দেখা হয় নি ।
রুদ্রনীল এর অভিনয় নিয়ে কোনো কথা হবে না , তার মিমিক - সাবলীল অভিনয় বংশী চরিত্র টিকে আলাদা মাত্রা এনে দিয়েছে , চাইল্ড আর্টিস্ট " সোহম " কে ও নিমুয়া চরিত্রে দারুন মানিয়েছে , " মিরাক্কেলের " মীর এর অভিনয় ও ভালো লেগেছে ।
ইয়ুটিউব থেকে নামিয়ে / দেখে নিন পুরো মুভি ।
Movie name - চ্যাপলিন
Director - Anindo Banerjee
Release year - 2011
IMDb rating - 7.8 / 10
video quality - Dvdrip
ভালো থাকুন , সুস্থ থাকুন ।