ওর বড় দুলাভাইয়ের নাকের গলনাঙ্ক প্রাকৃতিকভাবেই খানিক কম! তাকে নিয়ে বড়ই যন্ত্রণা; যে কোন ঘটনা সামান্য উষ্ণতা পেলেই তার নাক গলন শুরু হয়ে যায়। মনের পুরো খায়েশ মিটিয়ে নিজের মতামত পেশ না করা পর্যন্ত যেন তার জানটা ডিগবাজি খেতে থাকে। ‘এ সবই হল আন্তর্জাতিক চক্রান্ত! দেশকে যানজটে রেখে বাইরের অপশক্তি এর ফায়দা লুটতে চায়। প্রাইভেট কারগুলোর দাম কমিয়ে তারা এই দেশটাকে গাড়িতে গাড়িতে ভরিয়ে দিচ্ছে; অথচ একটা দোতলা বাসে একশ প্রাইভেট কারের প্যাসেঞ্জার বসতে পারে!’
মেজো দুলাভাই কখনোই বড় দুলাভাইয়ের মতামত সাপোর্ট করেন না। ‘ভাই, আপনার কথা আমি একদম ডাস্টবিনে ফেলে দিচ্ছি না; তবে মেনেও নিতে পারছি না। আমি মনে করি, যানজট দেশের জন্য অভিশাপ নয়; বরং আশীর্বাদ। ইদানীং ড্রাইভার ভাইয়েরা যে স্টাইলে গাড়ি চালায় তাতে ট্রাফিক জ্যাম না থাকলে গাড়ি-ঘোড়া যখন-তখন আমার-আপনার ঘাড়ে উঠে পড়ত তাতে সন্দেহ নেই। বরং আমাদের উচিত জ্যামের সময়টাকে ইউটিলাইজ করা। আপনাদের দোয়ায় কিছুটা প্রতিভা পেয়েছি বলে যানজটের অবসর মুহূর্তে আমি রবীন্দ্র সংগীত রচনা করি।’ চলতে থাকে এই তর্কমহাযুদ্ধ!
অন্যদিকে মামার এই সমস্যা সমাধানের জন্য ভগ্নে-ভাগ্নীরা জরুরী ভিত্তিতে মিটিং কল করল। তাদের মধ্যে রনি খানিক আঁতেল টাইপের; চোখ বন্ধ করে কল্পনা করতে করতে বলল, ‘ইস্, মামা যদি মানুষ না হয়ে অ্যাভাটার হত তাহলে কত্ত মজা হত! এসব রাস্তাঘাট দিয়ে আর চলাফেরা করতে হত না। গাছের ডালপালায় ঝুলতে ঝুলতে অফিসে চলে যেত।’ জনি আবার আগাগোড়াই ফাজিল প্রকৃতির বালক। সে অত্যন্ত সিরিয়াসলি প্রশ্ন করে বসল, ‘কিন্তু ঢাকা শহরে ঝুলার জন্য অত ডালপালা কোথায়?’ এমন সময় রবিন মামা রুমে ঢুকতে ঢুকতে বলল, ‘কিরে, ডালপালায় ঝুলাঝুলির গন্ধ পেলাম, তোরা কোথাকার বানর নিয়ে আলোচনা করছিস?’ আলোচনার বিষয়বস্তু শুনে রবিনের তো চোয়ালই ঝুলে যাওয়ার দশা!
ঢাকায় একে তো যানজট, তার উপর রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি। জরুরী ভিত্তিতে সমাধান প্রয়োজন। ‘মামা, একটা কাজ করতে পার। রেডিও-তে প্রতিদিন ‘ঢাকার চাকা’ অনুষ্ঠান শুনবে; তারপর যে রোডে জ্যাম সে রোড দিয়ে যাবে না।’ পলির কথা শুনে মুখখানা বাংলা ক্ষ-এর মত করে পেঁচিয়ে রবিন বলল, ‘কিন্তু জ্যাম তো সবখানে। ঢাকায় ফাঁকা রাস্তার খোঁজ-দ্যা সার্চ করে লাভ নেই।’
কিছুদিন পর একদিনের ঘটনা। ট্রাফিক জ্যামে বসে চিন্তা করতে করতেই রবিনের মাথায় এল আইডিয়াটি! এখন রবিন আকাশ দেখতে দেখতে, বাতাস খেতে খেতে অফিসে যায়। পাড়ার সবাই তার নাম দিয়েছে ‘দুই চাক্কার মামু’। হ্যাঁ, রবিন এখন সাইকেল ব্যবহার করে। রাস্তায় জ্যাম থাকলেও নো প্রবলেম; ফুটপাথ আছে না? আবার লাইনে দাঁড়িয়ে তেল-গ্যাস নেয়ারও কোন ঝামেলা নেই। ভাবছি পরের মাসের বেতন পেলে আমিও একটা সাইকেল কিনে নিব। আপনিও আইডিয়াটা ভেবে দেখতে পারেন।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জানুয়ারি, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:২১