সংবাদ১: খালে-বিলে অকারণ কালভার্ট:
‘পানিচক্র’ বা ‘নাইট্রোজেন চক্রের’ মত আমাদের আশেপাশে চলছে ‘কালভার্ট চক্র’। জীবন্ত খালের মাঝে পিচ্চি কালভার্ট নির্মাণ করে শেষমেষ জলাশয়ের জীবনচক্রই থামিয়ে দেয়া হচ্ছে। কিছু কালভার্টের আশেপাশে জনবসতিও নেই! আশা করি, শ্যাওড়া গাছের পেত্নী ও খালের মেছোপেত্নীরা সেগুলো ব্যবহার করে জনগণের টাকার সম্মান রাখছেন। আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ের উচিত আমাদের এ কাজে অনুপ্রাণিত হয়ে জনমানবহীন মরুভূমি ও মেরু অঞ্চলে কালভার্ট নির্মাণ করা। হয়তো অদূর ভবিষ্যতে পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য হিসেবে দেখা যাবে সাহারা মরুভূমির বুকে হেলানো কালভার্ট! সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের পকেট গরম হবার বিষয়টি মনে করিয়ে আপনাদের লজ্জা দিব না। তাদের আমি উদারই বলব; কারণ তারা তো চাইলে নিজেদের বাসভবনেই কালভার্ট নির্মাণ করে টাকাগুলো নিতে পারতেন। কে আর এসবের খোঁজ নিতে যেত!
সংবাদ২: অসহায় প্রশাসন বিচার চায়:
সংবাদের শিরোনামে এসেছে: অসহায় প্রশাসন বিচার চায়। এটা খুবই আশার কথা যে এক্ষেত্রে বিচার চাওয়ার সুযোগটুকু পাওয়া গেছে। যে গতিবেগ ও ত্বরণে আমাদের অঘটনঘটনপটিয়সী ভাইয়েরা অফিসারদের ধাওয়া করেছিল, তাতে কর্মকর্তাদের মুক্তিবেগ অর্জন করে অভিকর্ষের মায়া ত্যাগ করার কথা। পুলিশ নাকি কিছু বুঝে ওঠার আগেই সন্ত্রাসীরা ঘটনা ঘটিয়ে চলে গেছে! সেখানে পুলিশ না রেখে কাকতাড়–য়া মোতায়েন করলেও মনে হয় হামলাকারীদের গতি কিছুটা রোধ হত। ম্যাগনিফাইং গ্লাস দিয়েও যখন আসামীদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না, তখন তারা নিজেরাই ধরা দিয়েছে। এমন উদারতা নজিরবিহীন! আমরা ক’জনই বা উত্তপ্ত থেকে অনুতপ্ত হই? ধাওয়াকারীদের হাওয়া পরিবর্তনের জন্য জেলে যাওয়াকে স্বাগত জানাই।
সংবাদ৩: অস্ত্র আসে চীনের সমরাস্ত্র কারখানা থেকে:
বেঁচে আছি এইতো জরুরি খবর! ট্রাক ট্রাক অস্ত্র আসে জনসংখ্যা কমানোর জন্য। এগুলোর মধ্যে আছে ভূমি থেকে মানুষে নিক্ষেপনযোগ্য ক্ষেপনাস্ত্র। আরো আছে মানুষ থেকে মানুষে বিনিময়যোগ্য গুলি। ভেবেছিলাম, এ কাজ মায়ে-তাড়ানো বাপে-খেদানো পোলাপালানের। সবাক হতে গিয়ে হলাম অবাক! এর পেছনে আছেন কতিপয় রুই-কাতলা। তারা যেহেতু কাজটা করেছেন, সেহেতু নিশ্চয় জাতির মঙ্গলের জন্যই করেছেন। তবে তাদের ধরা পড়াটা উচিত হয় নি। সীমান্তে বা পোর্টে ধরা খাওয়ার চান্স বেশি। তারা যদি ‘ধোলাইখাল ইঞ্জিনিয়ারিং’ বা ‘জিনজিরা মেকানিজম’ ব্যবহার করে অস্ত্রগুলো দেশেই তৈরি করতেন, তাহলে এ ঝামেলায় পড়তেন না। চৈনিক মালামাল আনতে গিয়েই এ দুদর্শা। যা হবার তা তো হয়েই গেছে। তাছাড়া ধরা পড়ার মধ্যে ‘ভাইটামিন’ আছে!
সংবাদ৪: প্রতি কেজি ঘি-মাখনের দাম তিন পয়সা:
একটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীদের পথ্য সরবরাহের দরপত্রে এই দর ধরে কাজ পেয়েছে একটি প্রতিষ্ঠান! শুনেছি শেরশাহ সাহেবের আমলে টাকায় ৮ মণ চাল পাওয়া যেত। আমার বিশ্বাস, ঘি-মাখনের এই দাম শুনলে তিনিও আনন্দে গেয়ে উঠতেন, ‘আমি জ্ঞান হারাবো মরেই যাবো ... ...’। যাহোক, মূল্যের এমন অধ:পতনে আমরা হয়তো অচিরেই হব ‘ভাতে-ঘিয়ে বাঙালি’ বা ‘মাছে-মাখনে বাঙালি’। এমন ঘি-মাখন প্রস্তুতকারক শিল্পীদের পুরস্কার হিসেবে অস্কার ট্রফির একটি জেপিইজি ফরম্যাটের ইমেজ দেয়া যেতে পারে। তবে একটি কথা বলে রাখি, গুগল-এ সার্চ করেও আমি ৩ পয়সার কোন ঘি-এর সন্ধান পাই নি। প্রতিষ্ঠানটি এই ঘি কী দিয়ে বানায় তা আন্তর্জাতিক বিবেকের কাছে একটি বড় প্রশ্ন!
লেখাটি জনপ্রিয় রম্য ম্যাগাজিন রস+আলোর ১৩৪তম সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল।