এশিয়ান এক তরুণের বৃদ্ধের ছদ্মবেশে বিমানে উঠে পরে তরুণের বেশ নিয়ে কানাডায় প্রবেশের চেষ্টায় পাশ্চাত্য দেশগুলোয় তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়েছে। কানাডার সীমান্ত নিরাপত্তাসংক্রান্ত সংস্থা বিষয়টিকে ‘অবিশ্বাস্য এক ছদ্মবেশের ঘটনা’ বলে অভিহিত করেছে। ঘটনায় প্রকাশ, এশিয়ান ওই তরুণ সিলিকন মুখোশে নিজের চেহারা পাল্টে বৃদ্ধের বেশভূষায় হংকং থেকে এয়ার কানাডার বিমানে উঠতে সক্ষম হন এবং আটকের পর ভ্যাংকুভারে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় প্রার্থনা করেন। নাম প্রকাশ না হওয়া এই ছদ্মবেশী তরুণের কানাডায় পাড়ি দেওয়ার জন্য এই ‘ছদ্মবেশী অভিযানের’ কথা কানাডিয়ান বর্ডার সার্ভিস এজেন্সি (সিবিএসএ) ও সিএনএনের বদৌলতে সারা বিশ্বে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এর পরপরই সম্ভাব্য সন্ত্রাসী হামলার আশংকায় পাশ্চাত্য দেশগুলোর বিমানবন্দরগুলোয় বিশেষ সতর্কতা জারি করা হয়।
সিএনএনের সংবাদ ও ইন্টারনেটে প্রকাশ হওয়া তরুণটির ছদ্মবেশের আগে ও পরের পারম্পরিক চিত্রগুলো বিস্ময় জাগানিয়া, যেখানে বর্ণনা করা হয়েছে কীভাবে ওই তরুণ ২৯ অক্টোবর হংকং বিমানবন্দর থেকে এসি-১৮ বিমানে উঠতে সক্ষম হন। বিমানে ওঠার সময় একজন বৃদ্ধ ককেশানের বেশে তরুণটির চোখে চশমা, বাদামী রঙের কার্ডিগান, চামড়ার টুপি ও বৃদ্ধের রূপ নেওয়া লক্ষণীয় ধরণের সিলিকন মুখোশ পরিহিত ছিলেন। কিন্তু পরে তিনি বিমানের ওয়াশরুমে ঢুকে সেসব বদলে ফেলেন। পরে দেখা যায়, ২০ বছরের তরুণের বেশে একজন যাত্রী।
সিএনএন বলছে, বর্ডার সার্ভিস কর্মকর্তাদের বিশ্বাস, আটক ওই তরুণ প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের মধ্যে শুধু বিমান কার্ড ও বোর্ডিং পাস দেখিয়েই বিমানে উঠতে সক্ষম হয়েছিলেন। এসব কাগজপত্র তিনি যেকোনোভাবেই হোক ৫৫ বছর বয়সী এক মার্কিন যাত্রীর কাছ থেকে জোগাড় করেছিলেন। বিমান কার্ড ও বোর্ডিং পাসের কোথাও বয়সের উল্লেখ থাকে না, যে কারণে বৃদ্ধের বেশেই তিনি বিমানে উঠতে পেরেছিলেন। কানাডা কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত কিছু না জানিয়ে গত শুক্রবার শুধু নিশ্চিত করেছে, ভুয়া বেশভূষায় এক ব্যক্তি কানাডায় প্রবেশের চেষ্টা করছিলেন, যাঁকে আটক করা হয়েছে।
সিবিএসএ শুক্রবার বিকেলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, নিরাপত্তাজনিত কারণে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো সংবাদ ও ছবি প্রকাশ করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তারা কীভাবে ছদ্মবেশী ব্যক্তিটিকে শনাক্ত ও আটক করল, সে বিষয়েও কিছু জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, আটক ব্যক্তি তাদের নিরাপত্তা হেফাজতে আছেন এবং পরে তাঁকে অভিবাসন ও শরণার্থী বোর্ডের সামনে উপস্থাপন করা হবে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, কানাডার সীমান্ত সুরক্ষা ও নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই সিবিএসএ’র প্রধান লক্ষ্য।
নিরাপত্তাজনিত কারণ ও ইমিগ্রেশন অ্যান্ড রিফিউজি বোর্ডের (আইআরবি) এখতিয়ারভুক্ত বিষয় বলে বিস্তারিত জানাতে অপারগতা প্রকাশ করে কানাডার নাগরিক নিরাপত্তামন্ত্রী ভিক টোয়েসের মুখপাত্র ক্রিস ম্যাকক্ল্যাসকি শুধু বলেছেন, সিবিএসএ বিস্তারিত ঘটনা মন্ত্রীকে অবহিত করেছে। এয়ার কানাডা মুখপাত্র জন রিবের কানাডিয়ান গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন, এসি-১৮ বিমানের একজন যাত্রীকে সিবিএসএ কর্মকর্তারা আটক করেছেন এবং বিষয়টি এখন তদন্তাধীন আছে। তিনি জানান, হংকং থেকে কানাডাগামী সব যাত্রীকে বেশ কয়েকটি নিরাপত্তা তল্লাশীর পর বিমানে উঠতে দেওয়া হয়।
সিবিএসএ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, বিমান থেকে নামিয়ে আনার সময় ওই ব্যক্তি শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় প্রার্থনা করেন। এতে বলা হয়, আটক ব্যক্তি তাঁর সঙ্গে একটি ব্যাগ রয়েছে বলে উল্লেখ করেন। কিন্তু বিমান ক্রুরা আরও দুটি পরিত্যক্ত ব্যাগ পান, যা ওই ব্যক্তির বলে ধারণা করা হচ্ছে। ব্যাগ দুটির একটিতে সিলিকনে তৈরি মাথা ও ঘাড়ের মুখোশসহ ছদ্মবেশ ধারণের উপকরণ, চশমা, চামড়ার টুপি ও পাতলা একটি কার্ডিগান ছিল।
অবিশ্বাস্য এক ছদ্মবেশের ঘটনা শিরোনামে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আটককৃত ব্যক্তি স্বীকার করেছেন যে তিনি বৃদ্ধের বেশে বিমানে আরোহন করেন এবং বেশ কয়েক ঘণ্টা পর সব মুখোশ খুলে ফেলে তরুণের রূপ নেন।
সূত্রঃ বেঙ্গলি টাইমস