সেদিন রাত্রে গেছিলাম স্বর্গ-নরক লিংকরোডে। মোড়ের টঙে যাইয়া দেখি সেই আড্ডা। মাঝখানে দেখি বইসা আছে আমাদের রবিদা (রবীন্দ্রনাথ)। রবিদা নাকি এখন স্বর্গে থাকে, ২২শে শ্রাবণ ভিলায়। চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে বলল ভালই আছে নাকি। রোজ সন্ধ্যায় ছন্দ-সুরের আসর বসে, যন্ত্র সংগীতের আসরে থাকেন ওস্তাদরা।
পাশের টুলে দেখি জীবনানন্দ চুপচাপ চা খায়, জিজ্ঞাস করার পরে কইলো হেও নাকি স্বর্গে আছে, ট্রান্সফর হইয়া নরকে যাইব। অবাক হইয়া কারন জিগাইলে কইলো, চুপ থাক।
রুদ্রদা (রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ) এক কোনায় বইসা বইসা বিড়ি টানে। হে থাকে নরকে, ছোট্ট একটা খুপরিতে। তাও দেখি হাসিখুশি, দেইখাই রাগ উইঠা গেলো। কইলাম, ওই মিয়া, নরকে পঁচতে ভাল্লাগে আপনের?
হ্যায় বিড়ি টানতে টানতে কয়, শোন আমি ইচ্ছা কইরাই স্বর্গে যাই নাই।
আমি জিগাইলাম কিসের লাইগা?
কইল, হুন-
১. স্বর্গে অপ্সরা আছে ঠিকই, কিন্তু অতন্দ্রিলা নাই।
২. স্বর্গ হইলো স্মোকফ্রি জোন, বিড়ি খাওয়া যায় নাহ।
৩. স্বর্গে মদ আছে কিন্তু নেশা হয় নাহ।
৪. স্বর্গে কোনও দুঃখ নাই, কাজেই সুখও নাই।
৫. নরকে কলঙ্ক আছে ঠিকই কিন্তু আগুনে সেই কলঙ্ক পুইড়া শুদ্ধ হইয়া যায়।
৬. নরকে যন্ত্রসংগীত হয় নাহ, কিন্তু তীব্র চিৎকার শোনা যায়।
আরও কইলো, নরকে নাকি খুব ভীড়, সহজে সিট পাওয়া যায় নাহ। আজকে মরলেই নাকি সে বইলা একটা সিট ম্যানেজ কইরা দিবে।
মরতে খুব ইচ্ছা হইছিলো, হঠাৎ মনে হইলো রোদেলা আমায় ভালবাসে কিনা এখনও জানা হয় নাই, ওর কোলে মাথা রাইখা একদিনও ঘুমানো হয় নাই। কইলাম, রুদ্রদা, স্বর্গ-নরক প্যাঁচাল বন্ধ করেন। আগে কয়দিন বাঁইচা নি। আপনেরা আপনাগো স্বর্গ নরক পকেটে নিয়া ঘুরেন, আর আমি সোডিয়াম লাইটের হলুদ আলোয় রাস্তায় হাঁটতে থাকি।
ফিরা আইছিলাম যমদুয়ারা এক্সপ্রেসে, শালারা হাফ ভাড়া নেয় নাই।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:০৫