এই সপ্তাহে বলাকা হলে গিয়ে দেখে আসা “জটিল প্রেম” মুভিটি নিয়ে কিছু লেখার ইচ্ছা হল । চলচিত্র সমালোচক হবার যোগ্যতা আমার নেই , একজন দর্শকের দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই এই লেখা । লেখার কোন ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
শাহিন - সুমনের পরিচালনায় RED ক্যামেরায় ধারণকৃত তৃতীয় ডিজিটাল মুভি "জটিল প্রেম" । এই মুভির ভেতর দিয়ে “ভালোবাসার রং” খ্যাত নায়ক বাপ্পির সাথে জুটি বাধলেন আরেক নবাগতা আঁচল । দুর্দান্ত একটা রোম্যান্টিক - কমেডি মুভি । তবে যারা এক্সট্রা ভাব নেয় মানে বাংলা কমার্শিয়াল মুভির নাম শুনলেই নাক সিটকান বা বাংলা কোন মুভি দেখলেও নিজেকে জাহির করতে চান আর্ট ফিল্ম এর দর্শক তাদের এই মুভি না দেখাই ভালো । যারা বানিজ্যিক মুভি বোঝেন , ভালোবাসেন এবং হলে গিয়ে শিশ দিবেন , মজা করবেন বলে আশা করেন , তাদের এই মুভি মিস করা উচিত হবেনা ।
কাহিনিতে কিছুটা নতুনত্ব বা চমক এর সাথে সংলাপ গুলোও বেশ ভালো ছিল । যারা যারা অভিনয় করেছেন , সবাই নিজের দিক থেকে ভালো করেছেন বলা যায় । বিশেষ করে হিরো বাপ্পি আগের চেয়ে পরিনত হয়েছেন বলা যায় আর আঁচল সত্যি মুগ্ধ করেছেন । বড় পরিসরে নবাগতা নায়িকা হিসেবে অভিনয়ে অনেক সাবলীল এবং জড়তাহীন ছিলেন বলা যায় । প্রপার গাইড পেলে এবং তাকে আরও ভালভাবে উপস্থাপন করা গেলে অনেক দূর এগিয়ে যাবেন আশা করা যায় । একঘেয়েমি থেকে বের হয়ে ভালো কিছু করার প্রানান্তকর চেষ্টা করেছেন মিশা সওদাগর যা দর্শকদের আনন্দ দিয়েছে এবং কাবিলা যথারীতি অনবদ্য ছিলেন । ভিলেন কাবিলা থেকে কমেডিয়ান “কাবিলা মামা” হিসেবে বনে যাওয়া কাবিলা কমেডি অভিনয়ে বেশ ভালো করছেন । কাজী হায়াত তাঁর একঘেয়ে ডায়ালগ থ্রু করার চেয়ে নতুন কিছু দর্শকদের উপহার দিতে না পারলেও চরিত্র অনুযায়ী মোটামুটি করেছেন ।
আর সবচেয়ে বড় চমক ছিল দীর্ঘদিন পরে ইলিয়াস কাঞ্চন – চম্পা জুটির এই ছবিতে অভিনয় , যা দর্শকদের ভালো লেগেছে । এ জন্য পরিচালককে ধন্যবাদ দিতেই হবে । আর শিশু শিল্পী নির্বাচন ছিল খুব ই ভালো । আরেকটা ব্যাপার ছিল যা না বললেই নয় , বাইরের দেশের মত আমাদের এখানেও পরিচালক কিছু পন্যের মার্কেটিং করেছেন । ব্যাপারটা ভালোই লাগলো । সম্ভবত এই মুভির স্পন্সর ওয়ালটন বাইক আর এনার্জি ড্রিঙ্ক স্টীং এর বিজ্ঞাপনের কাজটা মুভির মাধ্যমে ভালোই সেরেছেন । আবার কিছু ঘটনার প্রেক্ষিতে আমাদের দেশের রাজনৈতিক ব্যাপার সেপার নিয়েও সাটায়ারের মাধ্যমে সুক্ষভাবে কিছু বক্তব্য তুলে এনেছেন , যা ভালো ছিল । কাহিনি অনুযায়ী লোকেশন নির্বাচনও ছিল পারফেক্ট ।
অনেক কিছু ভালো ব্যাপারের মাঝে কিছু দুর্বলতা বা অসঙ্গতি দর্শকদের চোখ এরায়নি । যেমন ক্যামেরার কিছু কাজ দর্শকদের বিরক্ত করেছে বা চোখ জ্বালা করেছে বলা যায় । সম্ভবত এটা সম্পাদনার কোন ভুল বা দুর্বলতা । শাহিন সুমনের আগের ডিজিটাল মুভি গুলোর তুলনায় এই মুভিতে অ্যাকশন কিছুটা দুর্বল বলা যায় । মাঝে মাঝে আবার সেই পুরানো ঢীশুম – ঢুশুম শব্দগুলো ফিরে এসেছিল যা কানে লেগেছে । তবে একপ্রেশন আর ডায়ালগের জোরে সেই সব সিনগুলো মোটামুটি উতরে গেছে বলা যায় । শেষ দৃশ্যে সেই সম্পত্তির দলিল সই কর নইলে তোর মেয়ে কে মেরে ফেলব কিংবা সব কাজ সম্পন্ন হবার পরেও পুলিশের আগমন আমাদের মনে করিয়ে দেয় একটা গণ্ডি থেকে বের হতে আমাদের এখনো কিছু সময় লাগবে । এসব দৃশ্য পরিচালক বাদ দিলেও পারতেন ।
আবার ২ – ১ টা অসঙ্গতি যেমন মাস্তানদের ধাওয়া খেয়ে খালি পায়ে বাসায় ফিরছে দেখানো হলেও আবার সেই জুতা পরেই ঘরে ঢুকে নাচা দেখানো হল যা হলে উপস্থিত কারো নজর এরায়নি । নায়িকার মেকাপ গেটাপ মোটামুটি ভালো হলেও কিছু জায়গায় আরও যত্ন নেয়া যেত । নায়ক বাপ্পির হেয়ার কাটে ২-১ বার চেঞ্জ দেখা যায় , যা ধারাবাহিকতা একটু ক্ষুণ্ণ করেছে । সম্ভবত তিনি অন্য কোন মুভির শুটিং এ ব্যস্ত ছিলেন বিধায় বিষয়টায় খেয়াল করেননি । সে যাই হোক এসব ক্ষুদ্র কিছু বিষয়ের কারনে মোটেই মুভিটাকে সেই আর দশটা সাধারন মুভির মতই দেখার অবকাশ নেই ।
অনেক নতুন কিছু বিষয়ের সংযোজন করেছেন কাহিনীকার এবং পরিচালক , যা দর্শকরা মুভিটি দেখলেই বুঝবেন । ৫ টা গানের মধ্যে সবগুলই ভালো এবং চিত্রনাট্যের সাথে যায় , এর মাঝে ৩ টা গান খুব ই ভালো । সর্বোপরি নাচে গানে , ডায়ালগে, কমেডিতে ভরপুর ১০০% বিনোদনমূলক একটা দারুন বানিজ্যিক মুভি । “জটিল প্রেম”র অনেক সাফল্য কামনা করছি । কারন বানিজ্যিক মুভিগুলো ভালো বিজনেস করলেই আমরা আশা করতে পারি আরও বিগ বাজেটের ভালো কিছু মুভির । সেই সাথে “জটিল প্রেম”র টিম কে অনেক ধন্যবাদ একটা সুন্দর নির্ভেজাল বিনোদনমুলক মুভি আমাদের উপহার দেবার জন্য ।
একনজরে “জটিল প্রেম” মুভির প্রোফাইল ঃ
পরিচালক ঃ শাহিন-সুমন
গল্প , সংলাপ ঃ আব্দুল্লাহ জহির বাবু
মিউজিক , ব্যাক গ্রাউন্ড স্কোর ঃ আহমেদ হুমায়ুন
প্রোডিউসার ঃ মিজানুর রহমান
ব্যানার ঃ পুতুল কথা চিত্র
গানে কণ্ঠ দিয়েছেন ঃ কুমার বিশ্বজিত , ন্যান্সি , কনা , মিমি , রমা , শাহেদ , রাশেদ , আহমেদ হুমায়ুন
রিলিজ ঃ ১৭ মে ২০১২ , ঢাকার বলাকা , অভিসার , সনি , শাহিন , এশিয়া সহ সারাদেশের প্রায় ৮০ টি সিনেমা হলে ।