somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সিউল অলিম্পিক পার্কে আধাবেলা

১৪ ই আগস্ট, ২০০৮ দুপুর ২:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বেশ কিছুদিন আগে ঘুরতে গিয়েছিলাম সিউল অলিম্পিক পার্কে। ১৯৮৮ সালের সিউল অলিম্পিককে স্মরনীয় করে রাখতে প্রায় ১.৫ মিলিয়ন বর্গমিটার এলাকা জুড়ে অবস্হিত এই পার্ক। দীর্ঘসময় সাবওয়েতে কাটিয়ে যখন স্টেশন ফুঁড়ে বের হলাম তখন মাথার উপর সূর্যটা বেশ গরম হতে শুরু করেছে। সাইনবোর্ড ধরে একটু এগুতেই দেখি বেশ কিছু ছেলে মেয়ে বুড়ো একটা ফোয়ারা টাইপ কিছুর কাছে পানিতে ভেজার জন্য ওয়েট করছে। ওদের দেখে খুব আফসোস হলো, ইস কি আরাম করেই না ভিজছে ওরা। আর গরমে আমাদের অবস্হা বেশ কাহিল হওয়ার পথে। তবুও কপাল ভালো বের হওয়ার সময় ছোট ছাতাটা মনে করে এনেছিলাম।


পার্কে ঢোকার মুখের বিশাল চত্তর


এটা অলিম্পিক গেট

আরেকটু সামনে দেখি একপাশে বিভিন্ন রকম ভাস্কর্য করে রেখেছে, ওগুলো দেখতে দেখতে সামনে পেলাম বিশাল চত্বর, ওখানে একটা বড় রকমের পারফর্মিং স্টেজও আছে। ঠিক ডানে একটা জিমনেসিয়াম। রোদে আর দাঁড়িয়ে থাকা দায় তাই ডানে মোড় নিয়ে গাছপালার তলা দিয়ে হাটা শুরু করলাম। জিমনেসিয়ামের ঠিক পিছনেই সুইমিংপুল, তার ঠিক পিছনেই লেকের মতো, লেকের মাঝখানে বসানো আছে কিছু উইন্ডমিল আর বিশালাকৃতির ফোয়ারা। ফোয়ারাটাকে কেন্দ্র করে লেকের পাড়ে হাটতে লাগলাম। একপর্যায়ে বাতাসের সাথে আসা ফোয়ারার ঝিরঝিরে পানির ছিটা যেন নতুন জীবন দান করলো।


সুইমিং পুল


সুইমিং পুলের ঠিক পিছনে এই ঝর্না


ঝরণার আরেক কোনা থেকে তোলা

ফোয়ারাটা পিছনে ফেলে আরেকটু সামনের দিকে হাটা শুরু করলাম, বুঝতে পারলাম রাস্তাটা পার্ককে ঘিরে বানানো, বেশ অনেক খানি পথ, একপাশে লেকটা সংগ দিচ্ছে, আর আরেকপাশে বড় বড় ঢালের দেখা মিললো। কোথাও একটা মিউজিকাল ফোয়ারা আছে শুনেছি, মিউজিকের সাথে সাথে নাচে, মানে নাচানো হয় আরকি। বেশ অনেকক্ষন হাটার পর খুজে পেলাম সেটা, কিন্তু ফোয়ারা তো চুপ করে বসে আছে, ঘটনা কি? দেখলাম লেকের পাড়ের বেন্চি টে অনেক মানুষ ছিপ ফেলার মতো করে বসে আছে। তারমানে যেকোন সময় ফোয়রার নাচানাচি শুরু হবে। ঠিক তাই প্রায় ১০ মিনিট পর শুরু হলো মিউজিকাল ফোয়ারা। ফোয়ারাটার ওপারেই অলিম্পিক গেট আর নানান দেশের পতাকা।


ঢালগুলোর একটা আলাদা সৌন্দর্য আছে

ফোয়ারা দেখা শেষ করে হেটে ওঠা শুরু করলাম বাম পাশের ঢালগুলোতে। যত উঠছি ততোই দেখা যাচ্ছে একটু একটু করে চারপাশের দৃশ্য। ঢাল থেকে দেখলাম খোলা মাঠে অনেক মানুষ, বাচ্চারা সব খেলাধুলা করছে। তিনটা বড় স্টেডিয়ামের ভিতরটাও দেখা যাচ্ছে। স্টেডিয়ামগুলোর পিছনে পার্কের বাইরে সারি সারি মাল্টিস্টোরিড বিল্ডিং। তারও পিছনে পাহাড়ের সারি। ঢাল বেয়ে নেমে দেখি গলার অবস্হা কাহিল, গরমে শুকিয়ে কাঠ, একটা আইসক্রিম কিনে খেতে খেতে এসে বসলাম মূল পিকনিক স্পটের কাছে, যেটা উপর থেকে দেখা যাচ্ছিলো। সবাই পরিবার নিয়ে মজা করছে। এক দম্পতি দেখি ফুটবল খেলছে, মা মেয়ে একদলে, বাবা ছেলে একদলে। একবার মা এসে এমন ট্যাকল দিলো বাবা বেচারা পুরো ধরাশায়ী হয়ে ধুলোতে। একটু হালকা নাস্তা আর জুস খেয়ে হাটা শুরু করলাম পার্কের বাকি অর্ধেক দেখার জন্য।


চারিদিকে খালি সবুজ আর সবুজ


ঢালের উপর থেকে তোলা স্টেডিয়াম

ওদিকে যেয়ে দেখি একটু পর পর একেকটা ভাস্কর্য, নানান রকম। একটা মাঝারি সাইজের গোলাপ বাগান ও পেলাম। লোকজন কি আরামে মাদুর পেতে বাসার মতো করে ঘুমাচ্ছে। কোন টোকাইর উৎপাত নেই, নেই কোন ছিচকে চোরের চিন্তা, নেই কোন পাতি মাস্তানও। এর মাঝে দেখি এক মহিলার নাদুস নুদুস এক কুকুর হাত থেকে ছুটে গেছে, ওমা সে তো দেখি আমার দিকেই আসছে। আমি আবার এই প্রানীটাকে খুবই সম্মান (!!!) করি, একদম স্ট্যাচু হয়ে যাই তখন। আমাকে অবাক করে দিয়ে আমার কাছে না থেমে কুকুরটা দৌড়াতেই থাকলো। আসল ঘটনা হলো কুকুরটা অনেকক্ষন ধরেই একটু পালাবো পালাবো করছিলো কিন্তু মনে হয় মহিলা শক্ত করে ধরে রেখেছিলো। ছোটার চান্স পেয়েই বেচারা দৌড় শুরু করেছে। মহিলা অনকক্ষন কুকুরটার পিছনে দৌড়ে হাপিয়ে উঠলেন, কুকুরটাও হাপিয়ে গেলো মনে হলো। তারপর নীরব আত্মসমর্পন।






ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বেশ কিছু ভাস্কর্য


বের হওয়ার পথে দূরের পাহাড়

হাটতে হাটতে আমরাও ভীষন টায়ার্ড, একপর্যায়ে বের হয়ে আসলাম সিউল পার্ক থেকে দূরের পাহাড় গুলোকে আরও দূরে রেখে।



সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই আগস্ট, ২০০৮ বিকাল ৩:১৮
১৮টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×