আজকে আমার এক বন্ধুর ফেসবুক স্ট্যাটাস-
"সবার কাছে প্রশ্ন:
সাম্প্রতিক সময়ে মেয়ে/শিশু নির্যাতন , অত্যাচার যাই বলেন আশংকাজনকভাবে বেড়ে চলেছে। আমাদের দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সাধারণ মানুষ কি করলে এটা কমবে? আমি নিজেও চিন্তিত।"
যৌন সন্ত্রাস বা ধর্ষন রোধে আমরা অনেক কিছুই বলে থাকি- যেমন পুরুষেরা বলেন-নারীদের শালীনতা বজায় রেখে চলতে হবে আর নারীরা বলেন- পুরুষদের দৃষ্টি সংযত করতে। কিন্ত এই জঘন্য অপরাধ কমাতে আমরা কেউই প্রথমে বলি না আইনের যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে। এটা যেন আমাদের গা সওয়া ব্যাপার হয়ে গেছে যে অপরাধি অপরাধ করবেই কিন্ত আইন কিছুই বলবে না কারন আইনের ধ্বজাধারীরা উপরের নির্দেশে চোখে কালো কাপড় বেধে বলবে - বিচার অন্ধ, তাই আইনও অন্ধ। ধর্ষিত হয়েছে অথচ থানা মামলা নিবেনা, তার জন্য আদালতের নির্দেশ লাগে- এমন অমানবিকতা মনে হয় একমাত্র বাংলাদেশেই দেখা যায়(পাকিস্তানেও মনে হয় দেখা যায়)।(প্লিজ এর মধ্যে আম্লীগ-বিন্পি-জামাত টাইনা আইনেন না, সব শালা এক)
বাংলাদেশে আমার দেখামতে একমাত্র শাজনীন ধর্ষন এবং হত্যা মামলাতেই ধর্ষনকারীর ফাসি হয়েছে, তাও দীর্ঘ ৭-১০ বছর মামলা চলার পর এবং তাও সম্ভব হয়েছে মনে হয় বেচারী মারা যাওয়াতে এবং তার পিতা বিশিষ্ট শিল্পপতি হবার কারনেই। বিলিভ মি, আমরা যদি এইসব কুত্তার বাচ্চাদের ধরে জাতীয় স্টেডিয়ামে সবার সামনে ফাসী বা পাথর ছুড়ে হত্যা করতে পারতাম এবং সেই হত্যা দৃশ্যের প্রতিটা মুহুর্ত আবাল বৃদ্ধবনিতা সবাইকে দেখতে বাধ্য করাতে পারতাম, পুরো এক বছরেও একটা ধর্ষন বা যৌন সন্ত্রাস হতো কিনা সন্দেহ(সৌদী আরব/ইরানে যেমন হয়)। কারন ১০ বছরের যে শিশুটা এরকম একটা ভয়ংকর দৃশ্যের স্মৃতি নিয়ে বড় হবে এবং এর অর্ন্ত:নিহিত কারন জানবে, তখন সে বড় হয়ে(যতই চুলকানি থাকুক) এই একই অপরাধ করার আগে ১০বার চিন্তা করবে।
ওহ সরি, এখন তো আবার আপনার মানবতাবাদী হৃদয় মানবতা মানবিকতা বলে আর্তচিৎকার শুরু করবে এবং ধর্ষককে বাচাতে মানবাধিকার কর্মীরা জীবন কোরবান করবেন। এইসব মানবাধিকার কর্মীরে পাইলে কানসা বরাবর থাবড় দিবেন, যদি সত্যিই চান এই অনাচার বন্ধ করতে। বীভৎস মৃত্যু দৃশ্য যদি মা-বোনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে, তবে সেটা কি ভালো না ?
এখন আসি, এর অপপ্রয়োগ রোধে করনীয় কি? ব্রিটিশ মান্ধাতা আমলের ফরেনসিক ল্যাবরেটরী বাদ দিয়ে কিছু আধুনিক ল্যাব বসানো, যেখানে ৭ দিনের ভেতর semen analysis করে বলে দেয়া যাবে আসল অপরাধি কে এবং মামলা যদি মিথ্যা হয় তবে যে মিথ্যা মামলা করছে তাকে ধরে ঝুলায় দেয়া। সোজা বাংলা ভাষায়- SHOW NO MERCY to the real culprit irrespective of male/female.(প্লিজ এখানে আবার Gender Discrimination টাইনা আইনেন না)
(N.B- গনতান্ত্রিক সরকার ব্যাবস্থা দিয়ে এই পদ্ধতি অনুসরনের কথা চিন্তা করলে বলবো, ভুলে যান। কারন ?? I think you are not an idiot not to understand that)
আপনারা হয়তো বলবেন- পাশ্চাত্যে তো এরকম অমানবিক প্রথা অনুসরন করতে হয়না, ওখানেও তো গনতান্ত্রিক সরকার ব্যাবস্থা আছে। আমরা একটু সভ্য/দৃষ্টি সংযত করলেই তো কাজ হয়ে যায়, ব্লা ব্লা ব্লা.......। তাদের প্রতি- আপনারা কি জানেন পাশ্চাত্যেও এটা অহরহ-ই হয়(অপরাহ উইনফ্রে পর্যন্ত ধর্ষিত হয়েছিলেন বাল্যকালে) কিন্ত ওদের মিডিয়া, আমাদেরটা যেরকম মাইক লাগায়ে দুনিয়াকে জানান দেয়, ওদেরটা ঠিক সেভাবেই পরম যত্ন সহকারে লুকিয়ে রাখে। আরেকটা ব্যাপার হলো- ওসব দেশে আইনের যথাযথ প্রয়োগ আছে। কেস করলে ওদেশের পুলিশ বলবেনা-কিছু ছেলে দুষ্টামি করেছে বা অপরাধী খুজে পাওয়া যাচ্ছেনা। অপরাধীকে না পাওয়া পর্যন্ত (Dead or Alive) ক্ষ্যান্ত দেয়না ওরা। একারনেই আমাদের দেশে যেই পাবলিক মেয়ে দেখলেই কামোন্মত্ত হয়ে ঝাপিয়ে পড়ে, ওদেশে গিয়ে সেই পাবলিক-ই নিজের উদ্ধত পুরুষাঙ্গ সযতনে সামলে রাখে।(Fear Matters)
আরো একটা ব্যাপার হচ্ছে ওদের সমাজ ব্যবস্থা। আমাদের দেশে যৌনতাকে যেভাবে ধরা ছোয়ার বাইরে রেখে এটাকে অচিন্তনীয় এবং লোভনীয় ব্যাপার করে রাখা হয়, ওদেশে তো তেমন না। Sweet 16 কে ওরা আক্ষরিক অর্থেই sweet বানিয়েছে। যৌনতা ওসব দেশে খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার, সেকারনে এই স্বাভাবিক ব্যাপারকে অস্বাভাবিক করতে ওদের ধর্ষনের আশ্রয় নিতে হয়না।
কিন্ত আমাদের দেশের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। ধর্মভীরু মুসলিম হবার কারনে যৌনতা আমাদের কাছে শুধুমাত্র বিবাহ পরবর্তী জীবনের গল্প।কিন্ত শরীর তো বসে থাকবেনা বিবাহ পর্যন্ত।So, শারীরিক উত্তেজনা মেটানোর জন্য ধর্মভীরু আশ্রয় নেয় পর্ণোগ্রাফীর(কারন ১৬-২০ বছর বয়সের ছেলে যদি বিয়ের কথা বলে তাহলে, ঐ দিন/রাতে ঐ বাসায় কেয়ামত নাযিল হতে বাধ্য। যদিও ইসলামে পরিষ্কার ভাবে বলা আছে - ব্যাভিচারের সম্ভবনা থাকলে বালেগ ছেলে/মেয়েকে বিয়ে করিয়ে দাও অথবা রোযা রাখো। মাগার কে শোনে কার কথা, ইসলামকেও যে আমরা প্রয়োজন মতো EDIT করে নিয়েছি)।
পর্নোগ্রাফির জনরা স্কুল গার্ল, সেলস গার্ল, আর্মি থেকে আমলা কোনো নারী-ফেটিশই বাদ যায় নাই। আমজনতা প্রতিদিন স্রেফ এই জ্ঞানার্জন করে যে, রাস্তায় যেতে যেতে, অফিসে বসে বসে, বাড়িতে শুয়ে শুয়ে হঠাৎ করে অজানা অচেনা মানুষের সাথে যৌনতা শুরু করে দেওয়া যায়। এরচেয়েও ভয়াবহ হলো, নারী সে কর্পোরেট চাকুরে হোক, জজ হোক, ডাক্তার হোক বা আর যাই হোক না কেন, তার কতিপয় বিশেষ ভঙ্গিমাই তাকে বেশ্যায় রূপান্তর করতে যথেষ্ট। No matter what she wears, It is intention which is focused in each porn film। ওখানে বিকিনি আর আর্মির ইউনিফর্ম একাকার হয়ে যায়, একাকার হয়ে যায় মিনি স্কার্ট থেকে বোরকা। সমস্যাটা হয়ে যায় বাস্তবতায় ফেরার পর। কোনো মেয়ে স্কুলগার্ল, কি কর্পোরেট চাকুরে, কি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী - ব্যাপার না, কামোন্মত্ত মানুষের ক্ষুরধার কল্পনাশক্তি তাকে ন্যাংটো করবেই। তার পোশাকের স্ফিত অংশ হয়ে উঠবে মোহনীয় স্তন। এর হাত থেকে বোরকাও বাদ যায় না।কারণ, আমরা চুলের জেল থেকে গায়ের সেন্ট সব মেখেছি হট হওয়ার জন্য এবং হট করার জন্য। এরপর গাছের আম (স্লাইস জুস - আমসূত্র, ক্যাটরিনা) থেকে কুঁচকির চুল (ভিট-ক্যাটরিনা) পরিষ্কারকারী ক্রিম - সবখানেই লাগিয়েছি যৌনতা। ক্রমাগত "হটায়ন" প্রক্রিয়া আমাদের ঘরের মেয়ের চালচলনকে "হট দৃষ্টিতে দেখো" বলতে চেয়েছে।তথাকথিত উন্নত বিশ্ব নিজেরা পর্নোগ্রাফি ও পর্নোগ্রাফিক প্রোডাক্ট ছড়িয়ে দিচ্ছে সারাবিশ্বে। চাইল্ড পর্নোগ্রাফি নামক ভয়াবহ ব্যাপারটি ব্যাপকভাবে ছড়ানোর জন্য আপনি ধর্মকে দোষ দিবেন নাকি পশ্চিমাবিশ্বের পর্নোগ্রাফি মিডিয়াকে? অথচ, আজ এই বিশাল ইন্ডাস্ট্রির কথা আমরা যেন ভাবিই না। আমরা ভাবি কেবল ধর্ম আমাদের কি ক্ষতি করলো। ভেবে ভেবে ক্লান্ত হই এবং ক্লান্তি আনি। অথচ, চোখের সামনে সমস্যার গোড়া, দেখতে পাই না।
তাহলে আমাদের দেশের জন্য সমাধান কি ? আগেই উপায় বাতলে দিয়েছি- শালীনতা বজায় রাখা/ দৃষ্টি সংযত করে ২০% অপরাধ দমন করা গেলেও বাকি ৮০% এর জন্য দরকার দ্রুত এবং কঠিন আইনের যথাযথ প্রয়োগ।
লেখাটা শেষ করতে চাই Enemy at the Gates মুভির একটা দৃশ্যের কথা বলে।
Russian chief of staff, Nikita Khrushchev যখন তার political officer-দের কাছ থেকে জানতে চান যে জার্মানদের হাত থেকে Stalingrad-কে বাচানোর জন্য কি করা উচিত তখন Danilov নামের একজন political officer বলেন-"Here, the men's only choice is between German bullets and ours. But there's another way. The way of courage.We must make them believe in the victory. We must give them hope, pride, a desire to fight. Yes... we need to make examples. But examples to follow."
আমাদেরকেও example তৈরি করতে হবে , অপরাধ করলে তার জীবনদন্ড হবে এবং খুবই দ্রুত ও প্রকাশ্যে। এই সাহসী পদক্ষেপ নিতে পারলেই কেবল ধর্ম-বর্ণ-বয়স নির্বিশেষে মা-বোনেরা নিরাপদে রাস্তায় চলতে পারবেন।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মে, ২০১৫ রাত ১০:০২