somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

আশরাফ আল দীন
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে ৩০ বছর চাকরি করেছি; অবসর নিয়েছি কর্নেল পদবীতে ২০০৬ সালে। এরপর এযাবৎ প্রিন্সিপাল হিসেবে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে; এখন অর্কিড ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ঢাকা-তে। ‘স্কুল সাইকোলোজি’ নিয়েও কাজ করছি।

হাদিসের অপব্যবহার ও অবমূল্যায়ন

১৩ ই মে, ২০২০ রাত ১:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সুরাইয়া তারকার হাদিস।
আজ ১২ই মে। আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে কিছুদিন আগে একজন প্রখ্যাত সুন্নি #আলেম, যিনি 'ইমাম আজম' নামে প্রসিদ্ধ বলে প্রচার করা হয়, বর্তমানে বসবাস করেন পাশ্চাত্যের একটি দেশে, জন্মসূত্রে পাকিস্তানি, তিনি একটি ভিডিও প্রচার করেছিলেন। তাতে এক #হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছিল যে, ১২ই মে তারিখে "সুরাইয়া" নামের তারকাটির উদয় হবে এবং এই #সুরাইয়া তারকা উদয়ের সাথে সাথে, #হাদিস অনুযায়ী, পৃথিবীব্যাপী সকল #মহামারি ধ্বংস হয়ে যাবে। এক ধরনের নিশ্চয়তা দিয়েই ভিডিওতে তিনি এই কথাগুলো বলেছিলেন এবং তা প্রচার করেছিলেন।

আমি জানি না কোন ভরসায় তিনি বা অন্য আলেমরা এই ধরনের কথাবার্তা বলেন! কারণ, তিনিও জানেন এবং আমরাও জানি যে, হাদিস কোন বিজ্ঞানের গ্রন্থ নয়। তাছাড়া আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গায়েব জানতেন না। তিনি শুধুমাত্র সেই সব বিষয়, জীবিত থাকাকালে, জানিয়ে দিতেন যেটা তাঁকে আল্লাহর তরফ থেকে জানানো হতো। তাই, এ ধরনের বক্তব্য যদি হাদিসে থাকেও আমাদের উচিত এ ব্যাপারে চুপ করে থাকা। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া একটি #মহামারী যা নিয়ে সকলেই আতঙ্কের মধ্যে আছে এবং এখনও বৈজ্ঞানিকভাবে এর কোন ঔষধ বের করা সম্ভব হয়নি অথবা প্রতিকার বের করা সম্ভব হয়নি, সকলেই জীবন নিয়ে শঙ্কিত কারণ প্রতিদিন এর সংক্রমণ এবং মৃত্যু হার বৃদ্ধি পাচ্ছে! এ অবস্থায় এই ধরনের অনিশ্চিত বক্তব্য দেওয়ার কোন মানে হয় না। এতে বরং হাদীসের অবমূল্যায়ন করা হচ্ছে।

আজ ১২ই মে। #সুরাইয়া নামের কোন তারকা বা নক্ষত্রের উদয় হয়েছে কিনা আমি জানিনা। কিন্তু যখন দেখা যাবে আজকের পরেও পৃথিবী থেকে মহামারী বন্ধ হয়ে যায়নি, তখন সাধারন মানুষ হাদিসের উপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলবে। অবিশ্বাসীরা এ নিয়ে হাসি-তামাশা করবে। নানা মহল থেকে হাদীস শাস্ত্র সম্পর্কে ভুল ধারনা এবং ভুল ব্যাখ্যা দেয়া হবে। মহামারী ও রোগ ইত্যাদি স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়! এ ব্যাপারে যারা স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ তারাই কথা বলুক! আপনারা ধর্মবেত্তারা এই নিয়ে সিদ্ধান্তমূলক কথাবার্তা বলতে যাবেন কেন? এর মাধ্যমে কি ইসলামের মাহাত্ম্য বৃদ্ধি পায়? আল্লাহর রাসূলের (দঃ) নির্দেশনা মোতাবেক সবাইকে সাবধান এবং সচেতন থাকার উপদেশ দিন। ব্যস, এর চেয়ে বেশি আর বলার প্রয়োজন নেই।

বাস্তবতা হচ্ছেঃ যে কোন হাদিসের ব্যাপারে সেটার সত্যতা যাচাইয়ের একটা বিষয় আছে। কারণ, সব হাদিস সঠিক বা শুদ্ধ নয়। অর্থাৎ #হাদিস শাস্ত্র নামে যে বিশাল ভান্ডার বর্তমানে মওজুদ আছে তার সবগুলো আল্লাহর রাসুল (দঃ)এর বক্তব্য নয়। সেগুলো মিথ্যা বানোয়াট বা ত্রুটিপূর্ণ। এর কারণ হলোঃ হাদিস সংরক্ষণ ও রচনা করেছে মানুষ। মানুষের সীমাবদ্ধতা আছে স্মরণশক্তির এবং লোভ ও রাজনীতির। ইতিহাস বলে যে, উমাইয়া আব্বাসীয় ও ফাতেমী আমলে রীতিমতো প্রতিযোগিতা দিয়ে জাল হাদিস রচনা করা হয়েছে রাজনৈতিক প্রয়োজনে। সেজন্যেই বহু বছর পূর্বে "সহি হাদিস" নাম দিয়ে পৃথক গ্রন্থ প্রণয়ন করা হয়েছে। এসব কাজ বড় বড় আলেম বিশেষজ্ঞ ও গবেষকরাই করেছেন! তাঁরা হাদিস গবেষণায় সমগ্র জীবন ব্যয় করে সহি হাদিসকে পৃথক করেছেন এবং সহি হাদিসকেও তাহকীক করেছেন। হাদিসের ভান্ডারে মওজুদ ১০ লক্ষেরও বেশি হাদিসের মধ্যে তাহকীক করা সহীহ হাদীসের সংখ্যা দশ হাজারেরও কম। একথা জানার পরেও আমরা হাদিসকে কেন সামনে নিয়ে আসব প্রতিযোগিতা করার জন্য বিজ্ঞানের সাথে গবেষণার সাথে অথবা বাস্তব পরিস্থিতির সাথে?

মহামারী তো পৃথিবীতে নতুন কিছু নয় এবং মহামারি সম্পর্কে আল্লাহ রাসুলের সুস্পষ্ট নির্দেশঃ মহামারী এলাকা থেকে কেউ যেন বাইরে না যায়, আর বাইরের লোকজন যেন মহামারী এলাকায় প্রবেশ না করে। এ বিষয়টা অত্যন্ত পরিষ্কার এবং বর্তমানেও বলা হচ্ছে "আইসোলেশন"-এর কথা। অর্থাৎ দেড় হাজার বছর আগেই আল্লাহর রাসূল শুদ্ধ নির্দেশনা দিয়ে গেছেন। কিন্তু আবার দেখা গেল, কয়েকজন আলেম কিছু হাদিসকে সামনে নিয়ে আসলেন যাতে বলা হচ্ছে যে, "ইসলামে ছোঁয়াচে বলে কোন কিছু নেই।" এই কথাটা কোন যুক্তির সাথে যায় না, এমনকি মহামারী এলাকা সম্পর্কে আল্লাহর রাসূলের অন্য হাদিসের সাথে বা মহামারি প্লেগ এর সময় আল্লাহর রাসূলের মহান সাহাবীদের কর্মকান্ডের সাথেও যায় না। সুতরাং আমরা চুপ করে থাকা উচিত, এই হাদীসের ব্যাপারে। খামাখা কেন বলতে যাবো যে, ইসলামে ছোঁয়াচে বলে কোনো জিনিস নেই! এতে কি ইসলামের মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে? এতে আমরা আসলে কি প্রমাণ করতে চাচ্ছি? খামাখা এই বিতর্ক কেন?

যদি কোন হাদীসে উল্লেখও থাকে, আমরা চুপ করে থাকাই ভালো হবে। কারণ, এই হাদিস আল্লাহর রাসূলের অন্য হাদিসের সাথে সরাসরি সাংঘর্ষিক। তাছাড়া, ছোঁয়াচে বা #সংক্রমণ বিষয়টা একটি বাস্তবতা। এটাকে অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। কেউ যদি অস্বীকার করে এবং তাকে যদি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলা হয় যে, যারা বলছেন "ইসলামে #ছোঁয়াচে বলে কিছু নেই" তাদেরকে আক্রান্ত রোগীদের মাঝখানে কোন রকম প্রটেকশন ছাড়া উপস্থিত থেকে ও কাজ করে দেখাতে হবে। বলুন এতে কেউ রাজি হবেন কি-না? তখন কেউ রাজি হবে না, আর যদি কেউ রাজি হয় সেটা হবে আত্মহত্যার শামিল! ইসলামে আত্মহত্যা হারাম। কারণ, বাস্তব ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে এই রোগে সংক্রমিত হয়ে বড় বড় আলেম ও বড় বড় দায়ীদের অনেকেই ইতোমধ্যে ইন্তেকাল করেছেন। কিছুদিন আগে তিউনিসিয়ার একজন প্রখ্যাত দায়ী #করোনা আক্রান্ত হয়ে ইন্তেকাল করেছেন বলে জানা গেছে। আমরা আমাদের দেশেই দেখতে পাচ্ছি অনেক বড় বড় আলেম করোনা আক্রান্ত হয়ে ইন্তেকাল করেছেন। একজনকে দিয়ে এই রোগ সংক্রমিত হচ্ছে পুরো পরিবারের মধ্যে, এমন কি ডাক্তার এবং স্বাস্থ্যকর্মীরাও এতে সংক্রমিত হচ্ছেন নানারকম প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার পরও।

এখন আমরা আমাদের দেশের ঐ সকল আলেমকে কি বলবো যারা বিশাল মাহফিলে অনেকের উপস্থিতিতে ঘোষণা দিয়েছেন, কেউ পাঁচ ওয়াক্ত অযু করে মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়লে #করোনা তার মধ্যে সংক্রমিত হবে না। অথচ দেখা গেল মসজিদে যারা গিয়েছেন তাদের মধ্যেই কিছু লোক সংক্রমিত হয়ে প্রথমে ইন্তেকাল করেছেন! সাধারণ মানুষ আমাদের দেশের আলেমদেরকে অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলে। সুতরাং তাঁদের উচিত মানুষকে সচেতন করা, এবং সুপথে পরিচালিত করা। আবেগী ব্যাখ্যা দিয়ে বাস্তবতা থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে মৃত্যুঝুঁকির দিকে ঠেলে দেওয়া নয়! আলেমদের কথা শুনে "আল্লাহ ভরসা" বলে সাধারণ মানুষ যদি সচেতন না হয়ে ইচ্ছামত চলতে থাকে এবং এতে সংক্রমণ বৃদ্ধি পায়, আর তাতে কিছু লোকের মৃত্যু হয় তাহলে এই মৃত্যুর জন্য কি ঐ সকল আলেম দায়ী হবেন না?

আমাদের উচিত হবে যেটা ধর্মের ক্ষেত্র নয় সেখানে ধর্মকে টেনে এনে বিতর্কিত না করা। আমাদের কাজ হবে মানুষকে সচেতন হওয়ার ও ভালো কাজে অভ্যস্থ হওয়ার উপদেশ দেওয়া এবং সবার জন্য দোয়া করা আল্লাহ যেন সবাইকে হেফাজত করেন, মানুষকে সক্ষমতা দেন #মহামারী ও রোগ-ব্যাধি থেকে বেঁচে থাকার।

সবরকম সতর্কতার পরও, এই ধরনের মহামারীর দুর্যোগ পৃথিবীতে নেমে আসে মানুষের খারাপ কাজের জন্য, আল্লাহর নির্ধারিত সীমা লংঘন করার জন্য। তাই মানুষকে সৎ কাজের দিকে আহবান করতে হবে, খারাপ কাজ সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে, আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে এবং জ্ঞান গবেষণাকে কল্যাণমূলক কাজে লাগাতে হবে।
আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক পথে পরিচালিত করুন।
মিরপুর ১২/৫/২০
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মে, ২০২০ রাত ১:০৯
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় দেশনায়ক তারেক রহমানকে সম্পৃক্ত করার নেপথ্যে  

লিখেছেন এম টি উল্লাহ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:০৮


আগেই বলেছি ওয়ান ইলেভেনের সরকার এবং আওয়ামীলীগের যবনায় জনাব তারেক রহমানের বিরুদ্ধে পৌনে একশ মামলা হলেও মূলত অভিযোগ দুইটি। প্রথমত, ওই সময়ে এই প্রজন্মের নিকট উপস্থাপন করা হয়েছিল দেশনায়ক তারেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পকে নিয়ে ব্লগারদের রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



**** এডমিন টিমের ব্লগারেরা আমাকে বরাবরের মতোই টার্গেট করে চলেছে, এভাবেই সামু চলবে। ****

ট্রাম্পের বিজয়ে ইউরোপের লোকজন আমেরিকানদের চেয়ে অনেক অনেক বেশী শংকিত; ট্রাম্প কিভাবে আচরণ করবে ইউরোপিয়ানরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পের বিজয়, বিশ্ব রাজনীতি এবং বাংলাদেশ প্রসংগ

লিখেছেন সরলপাঠ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২১

ট্রাম্পের বিজয়ে বাংলাদেশে বা দেশের বাহিরে যে সব বাংলাদশীরা উল্লাস করছেন বা কমলার হেরে যাওয়াতে যারা মিম বানাচ্ছেন, তারাই বিগত দিনের বাংলাদেশের ফ্যাসিস্টের সহযোগী। তারা আশায় আছেন ট্রাম্প তাদের ফ্যাসিস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঠেলার নাম বাবাজী !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩১

এক গ্রামীণ কৃষক জমিদার বাড়িতে খাজনা দিতে যাবে। লোকটি ছিলো ঠোটকাটা যখন তখন বেফাস কথা বা অপ্রিয় বাক্য উচ্চারণ করে ক্যাচাল বাধিয়ে ফেলতে সে ছিলো মহাউস্তাদ। এ জন্য তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×