২৫শে মার্চ কালরাতের পর ৪ই এপ্রিল গোলাম আজম টিক্কা খানের সাথে বৈঠক করে এবং পাকিস্তানকে সাহায্য করার প্রস্তাব দেয়। পরবর্তীতে ৬ই এপ্রিল আরেকটি বৈঠকের পর ৯ই এপ্রিল শান্তি কমিটি গঠন করা হয়।
আসেন, একটা কাহিনী বলি। সুনামগঞ্জ জেলার শ্রীরামসি গ্রামের কাহিনী।
১৯৭০ সালের ১৪ই আগস্ট গ্রামের স্কুল থেকে পাকিস্তানের পতাকা নামিয়ে পদদলিত করে সেই গ্রামের মানুষরা। যুদ্ধ শুরু হবার পর শান্তি কমিটির লোকজন গ্রামে এসে গ্রামবাসীকে শান্তি কমিটিতে যোগ দেয়ার আহ্বান জানায়। কিন্তু ফল হয় বিপরীত। উল্টো গণপিটুনি খেয়ে গ্রাম থেকে পালিয়ে যেতে হয় শান্তি কমিটির লোকজনদের।
এর নৃশংস প্রতিশোধ নেয় শান্তি কমিটির সদস্যরা। ৩১ আগস্ট তারা শ্রীরামসি গ্রাম এর স্কুলের সামনে সভার আয়োজন করে। লোকজন জড় হওয়ার পর শান্তি কমিটির নির্দেশে পাক বাহিনী সেখানে উপস্থিত হয় এবং শুরু করে নারকীয় গণহত্যা।
শ্রীরামসি গ্রামের সেই গণহত্যায় মোট ১০৪ জন মারা যায়। গ্রামের নারিদের পাক বাহিনীর হাতে তুলে দেয় এই শান্তি কমিটি। সপ্তাহ খানেক পর পালিয়ে যাওয়া গ্রামবাসী যখন গ্রামে ফিরে এসে দেখেছে লাশ নিয়ে শিয়াল, কুকুর, শকুনের মারামারি। বেঁচে যাওয়া গ্রামবাসীরা তখন সেসব অর্ধগলিত লাশই এক কবরে ৪-৫ করে মাটি চাপা দেয়।
আসেন, আরেকটা ছোট্ট কাহিনী বলি।
সাঈদীর নেতৃত্বে ১০-১২ জনের রাজাকার দলটা পারেরহাট বন্দরের গৌরাঙ্গ সাহার বাড়ি থেকে তার তিন বোন মহামায়া, অন্ন রানী ও কমলা রানীকে ধরে নিয়ে যায় পাকিস্তানি সেনা ক্যাম্পে।
ইসলামের শত্রুরা আজ পাকিস্তানকে বিভক্ত করতে চায়, তাই ইসলাম কায়েমে আর পাকিস্তান রক্ষায় আজ মালাউনদের ভেতর পাকিস্তানের ইসলামের বীজ বপন করে দিতে হবে।
টানা তিনদিন-তিনরাত অকল্পনীয় নির্যাতন চলে তিনজন নারীর উপর। পাকিস্তান রক্ষার খাতিরে একটু কষ্ট তো সহ্য করতেই হবে। মহামায়া, অন্ন রানী আর মহামায়াকে মেরে ফেলা হয়নি। অসহ্য অপমান আর গ্লানিমাখা যন্ত্রণা উপহার দিয়ে তাদের ছেড়ে দেয় ওই পিশাচ রাজাকারের দল।
এইসব কাহিনী একটা দুইটা না। ইতিহাস ঘাটলে হাজার হাজার এমনই কাহিনী খুঁজে পাওয়া যাবে।
যাই হোক, আমরা অকৃতজ্ঞ জাতি। ইতিহাসকে আমরা মনে রাখতে চাই না। আমাদের বিচারপতিরাই মনে রাখতে চান না। তারা বলে শান্তি কমিটিতে যোগ দেয়া দোষের কিছু না। আফসোস.....