তার মৃত দেহটি যখন পাওয়া যায় তা ছিলো শত্রুর বেয়োনেটে ক্ষত বিক্ষত। চোখ দু’টি কোটর থেকে উপড়ে ফেলে সেই পাকি নরপিশাচেরা।
তিনি বীরশ্রেষ্ঠ ল্যান্স নায়ক নূর মোহাম্মদ।
দিনটি ছিলো আজকের দিন।
৭ই সেপ্টেম্বর ১৯৭১
নূর মোহাম্মদ যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গোয়ালহাটি গ্রামে ৪ সঙ্গীসহ একটি টহলের নেতৃত্ব দিচ্ছেলেন। তাদের দ্বায়িত্ব ছিলো পার্শ্ববর্তী ছুটিপুর পাক হানাদার বাহিনীর ঘাঁটির ওপর নজর রাখা।
হঠাৎ পাকবাহিনী টের পেয়ে যায়। টহলরত মুক্তিযোদ্ধাদের ফাঁদে ফেলার পরিকল্পনা করে তারা। চতুর নূর মোহাম্মদ পাক বাহীনির পরিকল্পনা বুঝতে পারেন। সাথে সাথে তিনি সঙ্গীদের নিয়ে হানাদার বাহিনীর ঘাঁটি আক্রমণ করেন। শুরু হয় সম্মুখ যুদ্ধ। এরই এক পর্যায়ে মারাত্মক আহত হন সঙ্গী নান্নু
মিয়া।
তাকে বাঁচানোর জন্য নূর মোহাম্মদ তাকে নিজ কাঁধে তুলে নেন। ওই অবস্থাতেও তিনি পিছু হটেন নি। হঠাৎ হানাদারদের একটি
মর্টার শেল আঘাত করে তার কাঁধে। মারাত্মকভাবে জখম হন তিনি।
চাইলে পিছিয়ে গিয়ে নিজের প্রাণ বাঁচাতে পারতেন তিনি। কিন্তু আহত চুন্নু মিয়াকে বাঁচানোর জন্য বেকুল হয়ে পড়েন তিনি।
সিপাহী মোস্তফা কামালের হাতে নেতৃত্ব তুলে দিয়ে আহত নান্নু
মিয়াকে নিয়ে সবাইকে নিরাপদ
স্থানে চলে যাবার নির্দেশ দেন তিনি।
অন্য সদস্যরা একটি এসএলআর রেখে যান আহত কমান্ডারের কাছে।
এসএলআর নিয়ে তিনি ঝাঁপিয়ে পড়েন হানাদারদের ওপর। হানাদারদের দৃষ্টি তার দিকে কেন্দ্র করে রাখেন যেন বাকি সঙ্গীরা সেখান থেকে নিরাপদে পালাতে পারে। সেখানেই তিনি শহীদ
হন। মৃত্যু হয় এক বীরের।
আজকের ইয়োইয়ো প্রজন্ম হানি সিং চেনে লিংকিন পার্ক শুনে ঘুমায় আর খেলার মাঠে পাকিস্তান জিন্দাবাদ পোস্টার নিয়ে যায়।
আফসোস, প্রজন্ম জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের চিনলো না, রক্তক্ষয়ী ইতিহাস জানতে চায় না। বললেই বলে ওল্ড। আমি ওল্ড নিয়েই বাঁচতে চাই। এই ওল্ডই আমার বেঁচে থাকার প্রেরণা।