পোস্টটিতে মুহাররমের আশুরাই করনীয় এবং কিছু প্রচলিত ভুল ধারনা যা আমরা করে থাকি তার ব্যাপারে নির্ভরযোগ্য হাদিস -
“ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মদীনায় এসে দেখলেন যে, ইহুদীরা আশুরার দিনে সওম পালন করছে। তিনি তাদের জিজ্ঞেস করলেন “এটা কোন দিন যে তোমরা সওম পালন করছ? তারা বললঃ এটা এমন এক মহান দিবস যেদিন আল্লাহ মুছা আ. ও তার স¤প্রদায়কে নাজাত দিয়েছিলেন এবং ফেরআউনকে তার দলবলসহ ডুবিয়ে মেরেছিলেন। মুছা আ. শুকরিয়া হিসেবে এ দিনে সওম পালন করেছেন। এ কারণে আমরাও সওম পালন করে থাকি। এ কথা শুনে রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ “তোমাদের চেয়ে আমরা মুছা আ. এর অধিকতর ঘনিষ্ট ও নিকটবর্তী।” অতঃপর রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সওম পালন করলেন ও অন্যদেরকে সওম পালনের নির্দেশ দিলেন।(সহিহ বুখারী ও মুসলিম)
গুরুত্বঃ
রাসূলুল্লাহ(সা) বলেনঃ রমজানের পরেই শ্রেষ্ঠ রোজা হল আল্লাহ্র মাস মুহাররামের রোজা। (সহীহ্ মুসলিম ১৯৮২)।
ইহুদিরাও আশুরার দিন(১০ মুহাররম) রোজা রাখে মুসা(আ) কে অনুসরণ করে তাহলে প্রশ্ন আমরা ১ টা রোজা রাখব নাকি ২ টা ?
উত্তরঃ ইবনে আব্বাস বর্ণনায় করেছেন ‘লোকেরা বলল, হে রাসূল! ইহুদি ও খ্রিষ্টানরা ১০ মহররমকে সম্মান করে। “ যদি আমি বেঁচে থাকি তাহলে অবশ্যই আগামী বছর মুহাররম মাসের নবম ও দশম তারিখে সওম পালন করব।হাদীস বর্ণনাকারী বলেন: আগামী বছর আসার পূর্বে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মারা যান। [মুসলিম, সিয়াম, হাদীস নং ২৬৬১]
১০ তারিখ তো রোজা রাখতেই হবে পাশাপাশি যাতে ইহুদিদের সাথে মিলে না যায় সেই কারনে রাসুল বলেছেন ১০ তারিখের আগে পরে আরও একটা রোজা রাখতে। তাই মহররমের ৯ ও ১০ তারিখ রোজা রাখা উত্তম।
নবীজী বলেন, তোমরা আশুরার দিন রোজা রাখো এবং ইহুদিদের বিপরীত করো। তোমরা আশুরার সাথে তার পূর্বে বা তার পরে এক দিন রোজা রাখবে।’ (বায়হাকি)।
প্রশ্নঃ হুসাইন(রা) এর মৃত্যুর জন্যই কি এই রোজা রাখা?
উত্তর : অনেককে এই দিনে রোযা রাখার কারন জিজ্ঞাসা করলে বলতে শুনা যায়ঃ এই দিনে হুসাইন (রাঃ) শহীদ হয়েছিলেন তাই আমরা রোজা আছি। এটি একটি বিরাট ভুল ধারনা। এটি শিয়াদের কনসেপ্ট।
যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পৌত্র হুসাইন (রাঃ ) এই দিনে ইরাকের কারবালা মাঠে মর্মান্তিকভাবে শহীদ হয়েছিলেন । তাই শিয়ারা এই দিনটিকে শোক দিবস হিসাবে বিভিন্ন কার্যকলাপের মাধ্যমে উদযাপন করে থাকে। দেশে তাদের প্রোগ্রামগুলি রেডিও ও টেলিভিশনের মাধ্যমে সরকারিভাবে প্রচার করা হয়। এমনকি এই দিনে সরকারি ছুটিও থাকে। তাই সাধারণ লোকদের নিকট এই দিনটির পরিচয় এবং মর্যাদার কারণ হচ্ছে, হুসাইন (রা: ) এর শাহাদত। আর এ কারণেই হয়ত: তারা বলে থাকে যে, হুসাইন (রা: ) শহীদ হয়েছিলেন তাই রোযা করছি।
আসুন এখন দেখি মুল কারন কি ? কেন আমরা আশুরা পালন করি ?
আমরা এই দিনে রোজা রাখি কারণ রাসূলুল্লাহ(সা) রেখেছেন এবং রাখতে বলেছেন। কারন হিসেবে হাদিস থেকে এই দিনে দুইটি ঐতিহাসিক ঘটনার প্রমাণ পাওয়া যায়ঃ
১ – এই দিনে মুসা(আ) আল্লাহর সাহায্যে বনি-ইসরায়েল জাতিকে নিয়ে লোহিত সাগরে (red sea) তার লাঠি দিয়ে আঘাত করেন আর আল্লাহর হুকুমে সাগরের মাঝখানে রাস্তা তৈরি হয়, ইহুদী বনী ইসরায়েল জাতি সেই রাস্তা দিয়ে পার হয়ে যায়, আর অভিশপ্ত ফেরাউনের তার সৈন্য নিয়ে সাগরে ডুবে মরে। তাই আল্লাহ্র কাছে শুকরিয়া জ্ঞাপন স্বরূপ মুসা(আঃ) এই দিনে রোজা রেখেছিলেন। (সহীহ্ বুখারী ১৮৬৫)
২ – নূহ্ (আ)এর জাহাজ প্লাবন শেষে আশুরার দিন জুদী পর্বতে থেমেছিল। আল্লাহ্র প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বরূপ নূহ(আ) এইদিন রোজা রেখেছিলেন। (আহমাদ)
এ মাসে বা এই দিনকে ঘিরে কিছু প্রচলিত কুসংস্কার :
১. এ মাসকে শোক, মাতম, দুশ্চিন্তা ও দুঃখের মাস বলা হয়
২. এ মাসে জন্মগ্রহণকারী সন্তানকে দুর্ভাগা মনে করা হয় কিংবা কোন শুভ কাজ না করা।
৩. এ মাসের প্রথম দিন থেকে বাড়ি পরিষ্কার করা হয়
৪. কারবালার হজরত হুসাইন(র) ঘটনার কারণে আশুরাকে মর্যাদাবান মনে করা।
৫. হজরত হুসাইন(র) নামে ভুয়া কবর বানিয়ে তাজিয়া বা শোকমিছিল বের করা
ঢাকায় শিয়াদের তাজিয়া
৬. ওই কবরে হুসাইনের রূহ আসে বলে বিশ্বাস করা, সেখানে মাথা নত করা, সিজদা করা এবং তাঁর কাছে কিছু চাওয়া
ছবিতে ইমাম হুসাইনের স্মরণে তাজিয়া বহন করছে তারা
৭. মিথ্যা শোক প্রদর্শন করে বুক চাপড়ানো, হায় হোসেন! হায় হোসেন! বলে মাতম(বুকে ব্লেড মেরে রক্ত বের করা) বা রক্তের নামে লাল রঙ ছিটানো
হায় হুসাইন...হায় হুসাইন যে মাতম করে নিজেদের শরীর আঘাত করে রক্তাত্ত করা হয়
৮. লাঠি-তীর-বল্লম নিয়ে যুদ্ধের মহড়া দেয়া
১০. হুসাইনের নামে কেক বানিয়ে বরকতের কেক বলে চালানো
১১. হুসাইনের নামে মোরগ ছেড়ে দিয়ে বরকতের মোরগ বলে চালানো
১১. কালো ব্যাজ ধারণ করা
১২. এ দিনে পানি পান ও শিশুদের দুধ পান অন্যায় মনে করা
১৩. ইমামবাড়ায় হজরত আয়েশা(রাঃ) নামে বকরি বেঁধে লাঠিপেটা করে আনন্দ করা আয়েশাসহ আরো বড় বড় সাহাবিদের গালি দেয়া।