somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দ্যা লস্ট গস্পেল (The Lost Gospel) -২

২৫ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১০:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এই পর্বটি পড়ার আগে দ্যা লস্ট গস্পেল (The Lost Gospel) -১ পড়ে নিন।

গত পর্বের পর থেকে, বারনাবাস অনুসারে হযরত ঈসা (আ) এর জীবনী-

যে জায়গায় হযরত ঈসার (আ) জন্ম হয়েছিল তার নাম ছিল হিব্রুতে বাইতে-লাহম এখন যাকে আমরা বেথেলহেম(Bethlehem) জেরুজালেমের পূর্বদিকে এর অবস্থান।



বেথেলহেমের মানচিত্র


নিচের ছবিতে দেখছেন প্রাচীন বাইতে-লাহাম (বেথলহেম) শহর


প্রাচীন বেথেলহেম শহর



ঈসার সাথে বারনাবাসের পরিচয় জেরুজালেমে। তাই পরিচিত হওয়ার আগ পর্যন্ত ঈসার জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো বারনাবাস নিশ্চয়ই লোকমুখেই শুনেছিলেন, তাই তাঁর নবুয়াত পাওয়ার আগ পর্যন্ত গস্পেলে বর্ণিত ঘটনাগুলো অনির্ভরযোগ্য বলে ধরে নিচ্ছি। নবুয়াত এর ঘটনা থেকে শুরু করছি।

কুরআনেই আছে হযরত দাউদ (আ) কে আল্লাহ্‌ এমন ক্ষমতা দিয়েছিলেন তিনি চাইলে লোহাকে মাটির মত যেমন খুশি আকৃতি দিতে পারতেন, তিনিই প্রথম লোহা দিয়ে বর্ম বানিয়েছিলেন পাশাপাশি তিনি বই লিখার কাজ করতেন।

" আমি দাউদের জন্য লোহাকে নরম করে দিয়েছি এবং তাকে বলেছি প্রশস্ত বর্ম তৈরী কর , কড়া সমূহ যথাযথভাবে সংযুক্ত কর । আর তোমরা নেক আমল করতে থাকো ...(সুরা সাবা-১০/১১)

আমাদের নবীও (স) মেষ চড়াতেন আর পরে ব্যবসা করতেন। মুসা (আ) মেষ চড়াতেন। হযরত ঈসা (আ) কী কাজ করতেন ? জন্মগতভাবে ইহুদি পরিবারে সন্তান হযরত ঈসা ছিলেন ইয়াহুদিয়া প্রদেশের নাসরাত গ্রামের একজন কাঠমিস্ত্রি।

একটা বিষয় অবশ্যই উল্লেখ্য, খ্রিস্টানরা জোসেফ নামের একজনকে মেরীর স্বামী আর যীশুর পালক বাবা বলে থাকে। তাদের মতে, যীশুর জন্মের সময় মরিয়মের (মেরী) জোসেফের সাথে বিয়ে ঠিক হয়ে ছিল। কিন্তু, কুরআনের কোথাও কোন সূত্রে জোসেফের নাম উল্লেখ নেই, কোথাও স্বীকারও করা হয়নি তাঁর সাথে মরিয়মের (মেরী) বিয়ের কথা। হত। তবে, তাফসিরে ইবনে-কাসিরে জোসেফের কথা বলা আছে!! মরিয়মের (মেরী) সাথে তাঁর কথা হত। তিনি ছিলেন খুবই নেক বান্দা। পরে কোন এক পর্বে জোসেফ আর মেরীর ঘটনা তাফসির থেকে বর্ণনা করব ইনশাল্লাহ।


আধুনিক বাইতে-লাহাম(বেথলহেম) শহর নিচের ছবিটা



আধুনিক বেথেলহেম শহর


আরেকটা ব্যাপার হল ঈসার জন্মের সময় মরিয়ম কুমারী থাকলেও তিনি আজীবন কুমারী তথা অবিবাহিত ছিলেন কিনা এই ব্যাপারেও কোথাও বলা হয়নি। তাই আমরা নিশ্চিত করে কিছুই বলতে পারছি না।
কুমারী ছিলেন না বিবাহিতা ছিলেন এইসব বলার মুল কারণ হল তৎকালীন সময়ে ইহুদি সমাজে অবিবাহিত থাকাকে খারাপ চোখে দেখা হত। কিন্তু, কুরআন এটা আমাদের নিশ্চিত করেছে যে, ঈসার জন্মের সময় মরিয়ম মোটেও বিবাহিতা ছিলেন না, খ্রিস্টানরাও তাই ভাবে। কিন্তু আপনারা জানেন ইহুদীরা ষড়যন্ত্রকারী সেই প্রাচীনকাল থেকেই, তাই মরিয়মকে তৎক্ষণাৎ অপবাদ দিতে তেমন কাউকে না পেয়ে শেষ পর্যন্ত তাঁর খালু হযরত জাকারিয়াকে (আ) দায়ী করে ঈসার জন্মের জন্য।

বর্তমান কালে ইহুদীরা বলে, “অসংখ্য ভণ্ড নবীদের মধ্যে ঈসা আর মুহাম্মাদ ছিল অন্যতম। ঈসা ছিল মরিয়মের জারজ সন্তান। রোমান সৈন্যরা ইয়াহুদা প্রদেশ রেইড করেছিল একবার, আর তখন রোমান বাহিনীর প্যানডোরা নামের এক সৈন্য মরিয়মকে ধর্ষণ করে আর তার ফসল ছিল ঈসা।” (নাউজুবিল্লাহ) এটা হল ইহুদিদের ধারনা।

ঈসার চারজন ভাইয়ের কথা অন্যান্য বাইবেলে পাওয়া যায়। বোনের কথাও। এর মানে কি মরিয়ম বিবাহ করেছিলেন? আমরা জানি না। খুব সম্ভবত, এ ভাই বোন বলতে ঈসার আত্মীয়র কথা বোঝানো হয়েছে, কোন বাইবেলেই ঈসার জন্মের পরে কিংবা ঈসা বড় হবার পরে একবারও মরিয়ম এর সম্পর্কে এমন কথা বলা হয়নি যে তিনি বিবাহিত, অথবা বিধবা !! আমার মনে হয় বিবাহিতা হলে কোথাও না কোথাও সেই তথ্য পাওয়া যেত। এত বড় একটা ঘটনা কুরআন বা বাইবেলে এড়িয়ে যাওয়া হবে মনে হয় না। এটা ইঙ্গিত করে যে তিনি বিবাহিত ছিলেন না। ইহুদি চক্রান্তকারীরাই এই অপবাদ দিয়েছে।
এছাড়া, বড় প্রমান মেরী অবিবাহিতা ছিলেন বলেইতো চার্চের নানরা মেরীকে অনুসরণ করেই অবিবাহিত থাকে। সিমিলারলি, ফাদাররাও অবিবাহিত কারণ যীশু ঈসা বিবাহিত ছিলেন না।

যাই হোক মাউন্ট অলিভের নাম হইত অনেকেই শুনে থাকবেন,যাদের জানা নেই তাদের জন্য বলছি- আরবিতে জাবালুজ জাইতুন (جبل الزيتون) আর হিব্রুতে হার হা-জাইতিম ( הר הזיתים )। অলিভ মানে জলপাই, আরবিতে জাইতুন হিব্রুতে জাইতিম ।

মনে করে দেখুন,সুরা তীন এর প্রথম আয়াত-

ওয়াত্তিনি ওয়াজ্জাইতুনি ওয়াতুরি সিনিনা ...
অর্থ- শপথ তীন (ডুমুর) ও জাইতুনের(জলপাই) । শপথ সিনাই ও তূর পর্বতের, এবং এই নিরাপদ নগরীর মক্কার ।”

কী ইঙ্গিত করা হয়েছে এখানে? এই তিনটি স্থান পবিত্র কেন ? কারণ, জাইতুন বা জলপাই এর নাম নিয়ে ইঙ্গিত করা হয়েছে জাইতুন পাহাড় বা মাউন্ট অলিভকে।
নিচের ছবিতে সেই মাউন্ট অলিভ দেখছেন যেখানে ঈসা(আ) এর উপর ইঞ্জিল তথা বাইবেল নাজিল হয়।


জইতুন পাহাড় বা mount অলিভে যেখানে ইঞ্জিল নাযিল হয়


সিনাই হল সেই পাহাড় যেখানে মুসা(আ) এর উপর তাওরাত নাজিল হয়। নিচের ছবিটি সিনাই পর্বতের



sinai পর্বত বা mount sinai যেখানে মুসা(আ) এর উপর তাওরাত নাযিল হয়



আর নিরাপদ মক্কা হল যেখানে সাওর পাহাড় যার হেরা গুহায় নাযিল হয় মহাগ্রন্থ আল-কুরআন

গত পর্বের পরে, নিচে continue করলাম...


অধ্যায় ১০
বারনাবাসের বলেন-
ঈসা আমাকে বলেছিলেন, যখন তাঁর বয়স ৩০ বছর, তখন একদিন তিনি তাঁর মায়ের সাথে Mount Olives-এ গেলেন জলপাই কুড়াতে। সেখানে দুপুরবেলা যখন তিনি নামাজ আদায় করছিলেন, (তখন নামাজের অন্য নিয়ম ছিল) তখন তাঁর কানে এলো “হে প্রভু, তুমি করুণাময়...”; তাঁর চারপাশে তখন উজ্জ্বল আলো আর আলো, এবং অসংখ্য ফেরেশতা যারা বলছে, “আলহামদুলিল্লাহ!!” তখন ফেরেশতা জিব্রাইল(gabriel) তাঁর চোখের সামনে একটি উজ্জ্বল আয়নার মতো বই তুলে ধরলেন। ঈসা সেটার দিকে তাকাতেই যেন তাঁর হৃদয় জ্ঞানে ভরে গেল, আল্লাহ যা করেছেন আর বলেছেন এবং যা চান সব যেন তাঁর হৃদয়ে গেঁথে গেল; পরে ঈসা আমাকে একবার বলেছিলেন, “বিশ্বাস করো, বারনাবাস, আমি আমার পূর্ববর্তী সব নবীর সব কিতাবের আয়াত জানি। এত বেশি জানি যে, আমার মনে হয় আমি যখন কথা বলছি তখন কথাগুলো অবিকল যেন সেই কিতাব(ইঞ্জিল) থেকেই আসে ”

নবুয়াত পাবার পরে ঈসা বুঝলেন যে তিনি বনী ইসরায়েল জাতির কাছে প্রেরিত এক নবী। তিনি তাঁর মা মরিয়মকে বললেন যে, তিনি নবী হয়েছেন। তাই তিনি আর আগের মতো মায়ের সেবা করতে পারবেন না, কারণ তাঁকে আল্লাহর বাণী প্রচারের কাজে নামতে হবে। একথা শুনে মরিয়ম উত্তর দিলেন, “বাবা, তোমার জন্মের পূর্বেই আমাকে বলা হয়েছিল তুমি আল্লাহ্‌র পয়গাম্বর হবে; যাই হোক, আলহামদুলিল্লাহ।” সেদিন থেকে নবী ঈসা মা’কে রেখে তার বানী প্রচারের কাজ শুরু করলেন।

অধ্যায় ১১

ঈসা মার থেকে বিদায় নিয়ে এলেন ইয়ার-উস সালামে আমরা যে শহরকে জেরুজালেম নামে চিনি। হিব্রুতে ইয়ার-উস-সালাম মানে শান্তির শহর; সেখানে তাঁর সাথে দেখা হল এক কুষ্ঠরোগীর, যাকে ঐশী উপায়ে জানানো হয়েছিল যে তিনি (ঈসা) নবী। তাই সে কেঁদে কেঁদে তাঁকে বলল, “ঈসা, দাউদের বংশধর, আমার প্রতি রহম করুন।” ঈসা বললেন, “ভাই, তুমি আমার কাছে কী চাও ?”

কুষ্ঠরোগী বলল, “প্রভু ,আমাকে ভাল করে দিন।”

ঈসা তাঁকে ধমক দিয়ে বললেন, “বোকা কোথাকার, যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন সেই আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করো, একমাত্র তিনিই তোমাকে ভাল করতে পারেন। আমি প্রভু নয় তোমার মতই সামান্য মানুষ।”

কুষ্ঠরোগী বলল, “জানি, কিন্তু আপনি আল্লাহর এক প্রিয় বান্দা, তাই আপনি তাঁর কাছে আমার জন্য দোয়া করুন যাতে আমার কুষ্ঠ ভাল হয়।”

দীর্ঘশ্বাস ফেলে ঈসা তখন বললেন, “হে সর্বশক্তিমান আল্লাহ! এ অসুস্থ রোগীকে ভাল করে দিন।” এই বলে তিনি রোগীটিকে হাত দিয়ে ছুঁয়ে বললেন, “ভাই, তুমি ভাল হয়ে যাও!” এ কথা বলার সাথে সাথেই কুষ্ঠরোগী ভাল হয়ে গেল, তাঁর চামড়া এত সুন্দর হয়ে গেল যেন সদ্যজাত শিশুর চামড়া। এ কাজ দেখে লোকটি উচ্চস্বরে চিৎকার করল, “হে ইসরায়েলবাসী !! এদিকে এস, আল্লাহর নতুন নবীকে এসেছেন,তাকে গ্রহণ করো!!” ঈসা বললেন, “ভাই চুপ কর, কিছু বোলো না।” কিন্তু সে বলেই চলল, “দেখে যাও নবীকে!! দেখে যাও আল্লাহর পবিত্র বান্দাকে !!” এ চিৎকার শুনে জেরুজালেম থেকে বেরিয়ে যাওয়া অনেকেই শহরে ফিরে এলো, কারণ কুষ্ঠরোগীর ঘটনা সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে ততক্ষণে।

অধ্যায় ১২

সারা শহরের লোক ঈসাকে দেখতে ছুটে এলো বাইতুল মুকাদ্দাসে, যেখানে ঈসা ছিলেন। নিচের ছবিতে দেখছেন বাইতুল মুকাদ্দাস, যেটি সোলাইমান(আ) জীনদের মাধ্যমে তৈরি করেছিলেন, মুসলিম, ইহুদি, খ্রিস্টান তিন জাতির জন্য পবিত্র স্থান। এখন তা ইসরায়েলি ইহুদিরা জোর করে দখল করে রেখেছে


বাইতুল মুকাদ্দাস। সামনের উঁচু দেওয়াল ইহুদিদের উপাসনার স্থান বা western wall


মসজিদের সামনে বড় যে খালি মাঠ দেখছেন যেখানে মানুষ হাটা হাটি করছে সেই স্থানটির নাম western wall,এইটাই মূলত ইহুদিদের প্রার্থনা করার স্থান। নিচের ছবিতে দেখুন এক ইহুদি রাব্বি Western Wall এর সামনে প্রার্থনা করছে।


ইহুদি রাব্বি প্রার্থনারত


ইহুদিরাও কিন্তু দাড়ি -টুপি পরে আমাদের মত দেখে ভুল করবেন না।



নিচে western wall এ প্রার্থনারত তাদের আরও কিছু ছবি। আমরা যেমন কাবা’ই যাই, তারা western wall এ আসে।





ইহুদিদের western wall এ প্রার্থনার দৃশ্য




কুষ্ঠ রোগীর কথা হচ্ছিল,
যখন কুষ্ঠ রোগী সবাইকে ডাকতে লাগল নবীকে দেখার জন্য,
তখন ইহুদি ইমামেরা ঈসাকে বলল, “এ লোকেরা আপনার কথা শুনতে চায়, আল্লাহর কসম, এদের কিছু শোনান।”

তখন ঈসা কথা বলার বেদীতে উঠে বসলেন। তিনি হাত উঁচু করলেন সবাইকে চুপ করতে, তারপর বলতে শুরু করলেন, “সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তায়ালার, যিনি দয়া করে তাঁর বান্দাদের সৃষ্টি করেছেন, যেন তারা তাঁর সত্ত্বাকে জানতে পারে আর তাঁর প্রশংসা করতে পারে। সমস্ত প্রশংসা সেই আল্লাহর, যিনি তাঁর পবিত্র বান্দা ও নবীদের রূহ সৃষ্টি করেছেন, যেন তাঁর বান্দারা রক্ষা পায়, যেমন তিনি তাঁর বান্দা দাউদকে বলেছিলেন, ‘ইবলিসের হাত থেকে বাঁচাতে আমি তোমাদের পাঠিয়েছি।’ সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, যিনি তাঁকে সেবা করার জন্য ফেরেস্তাদের সৃষ্টি করেছেন। আর সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, যিনি শয়তানকে তার অবাধ্যতার শাস্তি দিয়েছিলেন, কারণ আল্লাহ যাকে সিজদা করতে বলেছিলেন সে তাঁকে সিজদা করেনি। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, যিনি মানুষকে কাদা মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন আর দুনিয়াদারীতে পাঠিয়েছেন। সমস্ত প্রশংসা সেই আল্লাহর, যিনি পবিত্র আদেশ অমান্যের অপরাধে বেহেশত থেকে নির্বাসিত করেন মানুষকে। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, যিনি মানবজাতির আদি পিতামাতা আদম-হাওয়ার ক্রন্দনে ক্ষমাসুলভ আচরণ করেন। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, যিনি ধ্বংস করে দেন তিনটি দুষ্ট নগরীকে (সডম Sodom, গমোরা Gomorrah (লুত এর কওম) আর আ’দ জাতির নগরী); সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, যিনি মিসরকে শাস্তি দেন, ফিরাউনকে ডুবিয়ে মারেন লোহিত সাগরে (Red Sea), বিশৃঙ্খল করেন শত্রুদের, কাফিরদের ইমানদার বানান আর বিরোধীদের ধ্বংস করেন। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, যিনি তাঁর বান্দাদের সৎ পথে ডাকতে পাঠান তাঁর পবিত্র নবীদের... সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, যিনি তাঁর বান্দা মুসাকে তাওরাত দিয়েছেন যেখানে তিনি বলেছেন শয়তান আমাদের ধোঁকা দেবে... সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, তিনি বনী ইসরাইলকে সকল জাতির উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন!
“কিন্তু, ভাইয়েরা, আজ আমরা আল্লাহর এত করুনার পরেও যে গুনাহের কাজ করছি এর জন্য কি আমাদের শাস্তি পেতে হবে না ?”

তখন ঈসা জনতাকে কড়া কথা শোনাতে লাগলেন কারণ তারা ভুলে গেছে আল্লাহকে, ভুলে গেছে তাঁর করুণাকে আর ডুবে আছে দুনিয়াদারীতে। তিনি ইহুদি রাব্বিদের( ইমামদের ইহুদিরা রাব্বি বলে) বিরুদ্ধে কড়া কথা বললেন কারণ তারা আল্লাহর কিতাবে রদ-বদল করত তাতে যা হারাম থাকত সেইসব নিজেদের স্বার্থে হালাল করত। আর ঈসা এমনভাবে বক্তৃতা দিলেন, তাঁর কণ্ঠে এত আবেগ ছিল যে উপস্থিত জনতা কাঁদতে লাগল, তাঁকে অনুরোধ করল আল্লাহর কাছে তাদের জন্য দুয়া করতে। কিন্তু কুচক্রী ভণ্ড ইহুদি ইমাম আর রাব্বিরা ঈসার উপর ক্ষুব্ধ হতে শুরু করল কারণ, রাব্বিরা জনগনের দানের টাকা আত্মসাৎ করে, এমন সব গোপন কথা ফাঁশ করে দিচ্ছিলেন ,তারা বুঝতে পারল ঈসা থাকলে তাদের ক্ষমতা বেশীদিন টিকবে না , কিন্তু তারা কিছুই বলতে পারল না, কারণ লোকেরা ঈসাকে নবী হিসেবে মেনে নিয়েছে ততক্ষণে।

ঈসা হাত উঠিয়ে মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করলেন আর জনতা কাঁদতে কাঁদতে বলল, “আমেন, হে আল্লাহ, আমেন!!” ( আমেন হিব্রু শব্দ, মানে, কবুল করুন )।
দোয়া শেষ হলে তিনি বাইতুল মুকাদ্দাস থেকে বেরিয়ে গেলেন। সেদিন থেকে জেরুজালেমে সবাই তাঁর কথা বলত, অনেকেই তাঁর অনুসরণ শুরু করল। কিন্তু ইহুদি ইমামেরা নিজেদের মধ্যে ঈসাকে নিয়ে ষড়যন্ত্র বীজ বপন করতে শুরু করল ...

ইহুদি রাব্বি বা আলেমদের প্রতারক কেন বলা হয় তা হয়ত অনেকেই জানেন না, এর কারন আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে নাজিলকৃত কিতাবসমূহের ব্যাপারে তারা বেশ ভালই জানে, তারা যে শুধু মুসার উপরে অবতীর্ণ কিতাব তাওরাত এর উপর ভাল জ্ঞান রাখে তা নয়, ইসার উপর ইঞ্জিল(বাইবেল) এবং মুহাম্মদ(সঃ) এর উপর নাজিল হওয়া কুরআনেও তাদের জ্ঞান অসামান্য।
নিচে যার ছবি দেখছেন তার নাম উবাইদ- ইয়ুসেফ । ১৯৭৩ সাল থেকে তিনি ইসরায়েলের চিফ রাব্বির ভুমিকাই আছেন টিক যেমন ইরানে সর্বচ্চ ধর্মীও নেতা আয়াতুল্লাহ-খোমেনী। গত কালই (7th octobor) উবাইদ- ইয়ুসেফ মারা যান। আল্লাহ্‌ তাদের জন্য জাহান্নামের কঠিন আজাব তৈরি করে রেখেছেন ,এখনই সে তা ভোগ করা শুরু করবে ইনশাআল্লাহ্‌।



উপরে গোল চিহ্নিত ব্যক্তি বামে ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট ডানে প্রধানমন্ত্রী। নিচের ( মানচিত্র হাতে ছবি) গোল চিহ্নিত এরিএল শেরন।



ছবিতে দেখুন তার এক পাশে ইসরায়েলের সন্ত্রাসী প্রধানমন্ত্রী বেন-ইয়ামিন নেতানিতাহু অন্য পাশে ইসরায়েলের সন্ত্রাসী প্রেসিডেন্ট সিমন-পেরেয, অন্য ছবিতে দেখুন মানচিত্র হাতে তিনি ইসরায়েলের প্রাক্তন সন্ত্রাসী প্রধানমন্ত্রী এরিএল-শেরন এর সাথে। হয়ত মধ্যপ্রাচ্যে মুসলিমদের ভূমি দখল করার অংক কষছেন তারা ,আপনারা প্রশ্ন করতে পারেন আমি কেন একটা দেশের প্রধানমন্ত্রী-প্রেসিডেন্টের মত মানুষদের সন্ত্রাসী বলে যাচ্ছি !! এর কারন জেনে আপনারা অবাক হবেন যে ইসরায়েলের যত প্রধানমন্ত্রী বা প্রেসিডেন্ট হয়েছে তারা সবাই ,ইরগুন,হাগানা, স্ট্যার্ন গ্যাংয়ের মতো কট্টর ইহুদীবাদী সন্ত্রাসী সংগঠনসমুহর লিডার ছিলেন। এই সন্ত্রাসী সংগঠনসমুহ তৈরি করেছিল মোসাদ, এই সংগঠনসমুহর কাজ ছিল নিরীহ ফিলিস্তিনি মুসলিমদের নির্যাতন ,হত্যা ও ভয় দেখানো। কিন্তু কখনো কি শুনেছেন কোন মিডিয়াই এই সন্ত্রাসীদের ব্যাপারে আমাদের কিছু জানিয়েছে ?? এই মিডিয়ার থেকে কিভাবে আমরা সত্য এবং মুসলিমদের পক্ষের সঠিক সংবাদ আশা করি ?? তারা শোনাবে না, নিজ দায়িত্বে জানতে হবে কি ঘটছে আমাদের সাথে !! আমি আপনাদের জানালাম বিস্তারিত গবেষণা করে নিজেদের শত্রুকে চিহ্নিত করা আপনাদের নিজেদের দায়িত্ব।

অধ্যায় ১৩

কিছু দিন পরে, ঈসা মাউন্ট অলিভ এ গেলেন নামায পড়তে, এরপর তিনি একনিষ্ঠভাবে দোয়া করলেন, “হে আল্লাহ, ইহুদি ইমাম আর রাব্বিরা তোমার এই বান্দাকে মারতে চায়... আমাকে রক্ষা করো তাদের জিঘাংসা থেকে। হে আল্লাহ, তুমি তো জানই, আমি কেবল তোমারই মুখাপেক্ষী, কারণ তুমিই আমার নাজাতদাতা। ”
সাথে সাথেই জিবরাঈল এলেন আর বললেন, “ভয় পেয়ো না, ঈসা। কারণ, হাজার হাজার ফেরেশতা তোমার পাহাড়ায় আছে, তোমার মৃত্যু হবে অনেক অনেক পরে, কিয়ামতের অনেক কাছাকাছি সময়ে তোমার মৃত্যু হবে।
অনেকগুলো ভবিষ্যৎবাণী পূরণ হবার পরে।”

ঈসা সিজদায় পড়ে গেলেন, আর বললেন, “হে আল্লাহ তুমি অশেষ মেহেরবান!!! আমি কীভাবে কৃতজ্ঞতা দেখাব?...”

জিবরাঈল বললেন, “উঠ, ঈসা, আর স্মরণ করো, ইব্রাহিমের কথা। তিনি তাঁর পুত্র ইসমাইলকে কুরবানি করতে গিয়েছিলেন, কিন্তু আল্লাহ সেটা হতে দেননি ; তাঁর জায়গায় কুরবানি হল এক দুম্বা। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে তুমিও কুরবানি করো, ঈসা।”

“নিশ্চয়ই, কিন্তু, ভেড়া পাব কোথায়? আমার তো টাকা নেই। আর চুরি করা তো পাপ।”

তখন জিবরাঈল তাঁকে একটি ভেড়া দেখালেন। সেটা কুরবানি করলেন ঈসা, আর প্রশংসা করলেন আল্লাহ তায়ালার, যিনি চির-মহান।

এর পরের পর্বে ঈসার ৪০ দিনের রোজা, ১২ সাহাবী নির্বাচন, তাদের নাম-পরিচয়, তাঁর বাণীপ্রচার ...

To be contined.........

দ্যা লস্ট গস্পেল (The Lost Gospel) -৩

রেফারেন্স : গসপেল অফ বারনাবাস
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১:৫৩
১৪টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×