এবারের ঈদটা বড্ড বাজে গেল আমার

বছরের এই দুইটি দিন, অর্থাৎ দুই ঈদে আমাদের পুরো পরিবার আমার দাদাবাড়িতে একত্রিত হই। এবং বংশের সর্ব কনিষ্ঠ ছেলে হিসেবে সব থেকে বেশি কাজ করা লাগে আমাকে। সেই কাজে তিল পরিমান ভুলও যদি ধরা পড়ে অথবা কাজ যদি চাচাদের মনমতো না হয়, তবে এই বয়সে এসেও “অপদার্থ” “অথর্ব” “হাবলা” এ জাতীয় শব্দের ফুলঝুড়ি ফুটতে থাকে তাদের মুখে


ব্লগার জাকি ফারহান এই বংশের প্রথম নাতি। বিকেলবেলা যখন সব কাজ প্রায় শেষ হয়ে এসেছে, তখন জাকি আমাকে এসে বললো “মামা, চলো ছোট নানার ল্যাপটপটা নিয়ে একটু বসি। যা কাজ বাকি আছে ওরাই করুক, আমি আর পারছি না!

ড্রইংরুম ছিল একদম ফাঁকা, আমরা চুপিচুপি ছোটচাচার ল্যাপটপটা নিয়ে বসলাম। ব্লগে খানিকক্ষন ঘাটাঘাটি করে পেলাম হাসান মাহবুবের মহীনের ঘোড়াগুলির "তাতিন"। চমৎকার গানটা ডাউনলোড করলাম ল্যাপটপে। জাকি শুনেই পাগলা হয়ে গেল। লাফাতে লাফাতে বলল, “মামা, আমার মোবাইলে এক্ষুনি নিব গানটা।


কোন কথা আমলেই নিল না!!!

আমি কথা শেষ করার আগেই দেখি তার মেমোরি কার্ড ঢুকানো সারা। ল্যাপটপ থেকে গানটা ট্রান্সফার করতে গিয়ে দেখি, কার্সরের পাশে বিজি চিহ্ন দেখাচ্ছে।
ছোট্ট একটা গান ট্রান্সফার হতে সময় লাগলো প্রায় মিনিট পাঁচেক!!!

এতক্ষনে জাকি বললো, “ওহহো নানুর ল্যাপটপে NOD32 সেটআপ দেয়া নাই!!! আমার মেমোরি কার্ডে তো ভাইরাস ছিলো!!” :#>
একথা শুনে ল্যাপিতে একটু এদিক সেদিক করতেই বুঝলাম “ভাইরাস বাসা বান্ধিয়াছে তার বুকে।”

হঠাৎ অন্দর মহল থেকে ছোট চাচার চিৎকার শুনতে পেলাম, “কাজের সময় এই বাঁদর দুইটা গেল কোথায়?”


জাকিকে তাড়া লাগালাম, “শীগগির বের করো!!”

আমার দুশ্চিন্তা শুরু হয়ে গেল কারণ চাচা তার SONY-vaio ল্যাপটপের এই অবস্থা দেখলে, তিনিও আর মনে রাখবেননা যে আমি এম.বি.এ পাশ করা এক যুবক, সোজা ঘাড়ের উপর রদ্দা বসিয়ে দিবেন



আমার তাড়া খেয়ে জাকি সেই মেমোরি কার্ড বের করছে আর দেখি তার চেহারার রঙ দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। মেমোরী কার্ড ধরে টানাটানি করছে দেখে আমি জিজ্ঞেস করলাম, “কি হলো?? এত দেরী করো কেন?? তাড়াতাড়ি!!”
এবার জাকি করূণ বদনে আমার দিকে তাকিয়ে বললো, “বের হচ্ছেনা, মামা”


“বের হচ্ছেনা মানে???” খেকিয়ে উঠলাম আমি।

এপর্যায়ে আমিও হাত লাগালাম। দেখলাম অবস্থা কেরোসীন, মেমোরী কার্ডের যেন শিকড় গজিয়ে গেছে ল্যাপীর মধ্যে









সাথেসাথে কী-প্যাডের উপর চোখ পরতেই মাথাটা বনবন করে ঘুরতে শুরু করলো, সেই সাথে পেটের মধ্যেও কেমন যেন পাঁক দিয়ে উঠলো।




দুই-তিন মিনিট কেউ কোন কথা বলতে পারলাম না। নিস্তব্দতা কাটিয়ে জাকি প্রথমে বলে উঠলো “মামা, আমার কিন্তু কোন দোষ নাই” :!>
ওর গা বাঁচানোর প্রচেষ্টা দেখে রাগে গা তিড়বিড়িয়ে উঠলো





সেই মূহুর্তে “সামু ব্লগ জাকি ফারহান হাসান মাহবুব তাতিন স্তালিন
আস্তিক নাস্তিক কোরবানি, ঈদ” সব কিছুর মনে মনে মুন্ডপাত করছিলাম।




বাটনটা হাতের তালুতে নিয়ে বিস্ফোরিতো চোখে তাকিয়ে থেকে এবার ওটাকে টিপে বসানোর চেষ্টা করলাম, যদি কোনভাবে আটকায়। আটকালো না, আটকানোর কথাও ছিল না। আমি রাগে, বিস্ময়ে, ক্ষোভে, ভয়ে, দুঃখে দ্বিতীয়বারের মতো ভাষা হারিয়ে ফেললাম।







আইডিয়াটা মন্দ লাগলো না :#> । আমি বললাম “সুপারগ্লুতো নাই, আইকা দিয়ে কি কাজ চলবে!!!???”
জাকি তার হারানো উৎসাহ ফিরে পেয়ে আইকা আনতে দৌড়ালো।
আইকা নিয়ে এসে আমার দিকে দিচ্ছে দেখে আমি বললাম, “জাকি, তুমিই লাগাও”।
সে এবার খুব পাকা ভঙ্গিতে ল্যাপটপটাকে কোলের উপরে নিয়ে বাটনের পিছনে খানিকটা আইকা লাগিয়ে সেটাকে জায়গা মত বসানোর চেষ্টা করলো।
মোটামুটি হয়েই গেছিলো, তবে আমার Perfectionist ভাইগ্না


জাকি ওটা তুলতেই দেখি এক খাবলা আইকা লেগে আছে স্ক্রীনের উপর।


এবার আমার মুখ দিয়ে অজান্তেই বেরিয়ে আসলো “জাকি, আমার কিন্তু কোন দোষ নাই। :!> :!> ” বলেই ফিক করে হেসে ফেললাম। এ অবস্থায় হাসি আসছে দেখে আমি নিজেই অবাক!
জাকি আমার দিকে একটা বিষদৃষ্টি হেনে পাশে রাখা একটা গেঞ্জি দিয়ে (পরে খেয়াল করে দেখেছিলাম, ওটা আমার আব্বার!!




দুজনে শেষ বারের মত শলা পরামরশ করে ঠিক করলাম যে আর না, অনেক আকাম হয়েছে, এখন যেভাবে আছে সেভাবেই ব্যাগে ভরে রেখে দেই। শেষ পর্যন্ত এই একটা কাজ ঠিক মতো করতে পারলাম।


এরপর রাতের বেলা চাচাজান যখন ঐ পদার্থটি( ঐ আয়কায় মাখামাখি হয়ে থাকা কি-বিহীন জিনিসটাকে ল্যাপটপ বলা যায় কিনা জানিনা) বের করলো তখন এই দুই নিস্পাপ(!!), নিরপরাধ(!!) মামা ভাইগ্নার কি হাল হয়েছিল সেটা লিখতে গেলে এটা নির্ঘাৎ একটা উপন্যাস হয়ে যাবে।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ডিসেম্বর, ২০০৯ রাত ১০:৪৫