কিছুটা পুরনো হলেও প্রথমত দক্ষিণ সুদানের কথা -ই বলছি। এই দেশটির জন্মলাভের দিনটিই আমার জন্মদিন। এ জন্যেই হয়ত দেশটির প্রতি আমার আগ্রহের কারণ। যে জন্য কিছুনা কিছু খবরাখবর ও রাখা হয়। এদের গৃহযুদ্ধটা আসলে কোন রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব নয়। সূত্রপাত " নুয়ের " গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত ভাইস প্রেসিডেন্ট রিক ম্যাচারের বহিস্কার নিয়ে, প্রেসিডেন্ট সালভা কির যিনি " দিনকা " জনগোষ্ঠীর। ইস্যুটা চলে যায় জাতিগত দ্বন্দ্বের দিকে। এ পর্যন্ত প্রায় হাজার দেড়েকের মত বেসামরিক লোককে হয় পাখির মত গুলি করে নয়ত পিছমোড়া করে হাত বেধেঁ গরুর মতো করে জবাই করেছে নিরাপত্তা বাহিনী । " নুয়ের " গোষ্ঠীর নাম নিলেই হচ্ছে শুটিং প্রাকটিস নয়তো কসাই চর্চা। ছাত্রদের ধরে নিয়ে হাত বেধেঁ জাবাই করছে গোষ্ঠীর নামে, অনুমিত অভ্যুত্থানের ভয়ে। বিদ্রোহীদের হাতে হাতে এখন 47/57, স্বয়ংক্রিয় আধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র। সাধারণ মানুষ ও পিছিয়ে নেই, পকেটে রাখা ছুরির বাটে হাত রেখে বাইরে চলাফেরা করছে। UNHCR (জাতিসংঘ শরনার্থী শিবির) এ আছে প্রায় হাজার ষাটেক মানুষ! অথচ এই দেশটিকেই তাঁদের স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন প্রায় পচিঁশ থেকে তিরিশ লাখ লোককে বলি হতে হয়েছিল।
বাংলাদেশের সাথে দক্ষিণ সুদানের প্রথমত মিল এটাই। দ্বিতীয়ত, আমরাও কি গোত্রীয় দ্বন্দ্বের বাইরে? দুটি গোত্রের অনুগত হয়ে নেই? বেশ ভালো ভাবেই আছি। আর এর প্রাধানতম অনুঘটক হয়ে কাজ করছে আরেকটি বিতাড়িত অথচ আশ্রিত গোষ্ঠী। যারা এখনো বিশুদ্ধ জাতি ধর্মায়নের ভুতকে ঘাড়ে করে বয়ে বেড়ায়। যারা প্রধান দুই গোত্রের ভাগাভাগির অবকাশে ডেমোগ্রাফিক পিউরিফিকেশানে বিশ্বাস করে। এগুলো একধরণের গোল, অনতিদূর অতীত পরিসংখ্যানের পর্যায়, প্রক্রিয়া। আর কিছু "হুজুগে বাঙালি "যারা রাজনৈতিক ফায়দাবঞ্চিত, তারাও এই সাম্প্রদায়িক জিকিরকে স্বার্থান্বেষণের ব্যার্থতার ব্যাথা উপশমে জোরদার কাজে লাগাচ্ছে। ওপরে ঢোলের বাড়িতো আছেই। দেশ বিভাগ, পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার আঁচ, স্বাধীনতা, স্বাধীনতা পরবর্তী অধর্ম - অত্যাচারেও এদেশের ভিটেমাটি র মায়া ত্যাগ করে কিংবা আর্থিক অনাটনের কারণে, নিজের স্বাধীন ভূমিতে ভয় - শংকাহীন বাঁচবে বলে দেশান্তরী হয়নি, তারাই আজ সংখ্যালঘু! সংখ্যা লঘু বলতে যে বিষয়টা বুঝেছি দ্বন্দ্বরত যে গ্রুপটি সংখ্যায় কম তাদেরকেই। এদেশের অল্প সংখ্যার জাতিগোষ্ঠিই এখন সংখ্যালঘু। এই সংখ্যালঘু গোষ্ঠীকেই স্বাধীনতা প্রাক্কালে সবচেয়ে বেশি মাশুল দিতে হয়েছিল। প্রধান গোত্রদ্বয়ের খামখেয়ালিপনার সুযোগে এই সংখ্যালঘু শব্দটির জোরেই হচ্ছে তাঁদের ওপর নির্যাতন, বাস্তুভিটা - উপাসানালয় পুড়িয়ে দেয়া,প্রতিমা ভাংচুর। ও ই শব্দটিই সংখ্যাগুরুদের মনে করিয়ে দিচ্ছে লঘুরাe সেকেন্ড ক্লাস নাগরিক! তারা নির্যাতিত হবেই।পাল্টা আঘাত দেয়ার ক্ষমতা তাদের অন্তত নেই, যেহেতু নেই শক্তিশালী প্রাশাসন কাঠামোও, আইন।
এ দেশটা কারও বাপ দাদার নয়। শতভাগ বাঙালি সত্তার। শত শত বছর ধরে নিজ নিজ ধর্ম পালন করেও সম্প্রদায় ভুলে একই দহলিজে এক অন্য কালচার /সংস্কৃতির ঐক্যবদ্ধ সত্তা তৈরি করেছি কিংবা খুব সাবলীলভাবে গড়ে উঠেছে। সেটা হিন্দু বা মুসলমান সত্তা নয়। বাঙালি জাতিসত্তা। সেই ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জায়গাটি ক্রমান্বয়ে হারিয়ে ফেলছি আমরা।
খুব, খুব লজ্জা হয়। পরিচয় পত্রটি ওয়ালেটের গোপন কম্পার্টমেন্টেই ঢুকিয়ে ফেলি দীর্ঘশ্বাসের সাথে।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ১২:০৭