-আপনার স্বামীর কি অ্যালকোহলে আসক্তি কিংবা অন্য কোন বিপজ্জনক আসক্তি আছে?
-না, নেই।
-কোন ভারবাল আবিউজ, মানসিক যন্ত্রণা কিংবা শারীরিক নির্যাতন করে?
-মানসিক যন্ত্রণা দেয়। শারীরিক ভাবে নির্যাতিত হইনি কখনো।
-মানসিক নির্যাতনটা কেমন?
-কোন কিছুতেই মতের মিল হয় না, আমি যা বলি তার উল্টোটা করে।
-কোন এডাল্ট্রি আছে আপনার হাসবেন্ডের?
-জানিনা?
-দীর্ঘ সময়ের দূরত্ব, কিংবা দীর্ঘ সময়ের শারীরিক সম্পর্কের বিরতি অর্থাৎ যৌন অতৃপ্তি আছে কি?
নাতাশার মা বোন উদগ্রিব হয়ে অপেক্ষা করছিল একটি পজেটিভ উত্তরের। কারণ নাতাশার বড় বোন নিশাতের প্রথম হাসবেন্ডকে ইম্পটেন্ট প্রমাণ করেই নিশাতের ডিভোর্স শান্তিপূর্ণ ভাবে সম্পন্ন হয়েছিল।
নাতাশা এবার ওর মা আর বোনের দিকে আড় চোখে তাকিয়ে গলার স্বর নামিয়ে মা বোনকে হতাশ করে বলল,
-না, নেই।
দীর্ঘ প্রশ্ন উত্তরের পরে নাতাশার আইনজীবী আরও কিছু প্রামাণিক তথ্য এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র চেয়ে আরেকটি ডেট দিলো।
নাতাশার বড় বোন নিশাত ভীষণ রেগে আছে নাতাশার উপর। কারণ অনেক কায়দা করে রায়হানের এডাল্ট্রি প্রমাণের কিছু তথ্য জোগাড় করিয়েছিল নাতাশাকে দিয়ে। যাতে সেগুলো ডিভোর্সের জন্য কাজে লাগাতে পারে । কিন্তু নাতাশা সেগুলো বলল না পর্যন্ত লইয়ারের কাছে। তাও ভালো যে বলেছে, “জানি না”। পরবর্তী ভিজিটের সময় সেগুলো বলা যাবে। এই ভেবে নিশাত নিজেকে সান্ত্বনা দিচ্ছে।
নাতাশা রায়হানকে ভালোবেসেই বিয়ে করেছিলো। কিন্তু রায়হানের অতি মাতৃভক্তিই ওদের সম্পর্কের শেকড়কে বাড়তে দিচ্ছে না। তবে রায়হানের মাতৃভক্তিতে নাতাশার চেয়েও ওর মা বোনেরই বেশী আপত্তি। আর সেই আপত্তিই সামান্য তপ্ত হওয়া সম্পর্কে জ্বালানি দ্রব্য হিসেবে কাজ করছিলো।
নাতাশাকে ওর মা বলে,
-বিয়ের ছয় মাসের মধ্যে স্বামীকে বশে না আনাতে পারলে সে স্বামী দিয়ে আর কিচ্ছু হবে না। আমার গুন গুলো একটাও পেলি না তোরা।
নাতাশার মায়ের বড় বেশী অহংকার। নিজের রূপ গুনে সে নিজেই ভীষণ মুগ্ধ। এমন কি মেয়েদেরকেও ছাড়ে না সেই অহংকারের দম্ভ দেখাতে। ওদিকে নাতাশার বাবা ওর মায়ের হ্যাঁ এর সাথে হ্যাঁ এবং না এর সাথে না মিলিয়েই দিব্যি আছে। কোন রা নেই মুখে। সবাই বলে সুন্দরী নারীর রূপে অন্ধ ওর বাবা। নাতাশার মায়ের আবার পরের মুখ থেকে নিজের রূপের গুণগান শুনলে দারুণ আনন্দ হয়।
নাতাশার বড় বোন নিশাত ওর অপছন্দের স্বামীর সাথে ডিভোর্স নিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করে মায়ের বাড়িতেই উঠেছে। শ্বশুর বাড়ির ঝামেলা নেই। নিশাতের হাসবেন্ডও একেবারেই গো বেচারা। বউ ভক্তিতে গদ গদ। নিশাত যেভাবে বলে সেভাবেই চলে। কিন্তু রায়হানটাই কেন যেন নাতাশার কথা শুনতে চায় না। নাতাশা এতো করে বলেছে ওর মায়ের এতো বড় বাড়ি সেখানে এসে থাকবে ওরা। অথবা অন্য কোন আলাদা জায়গায়, যেখানে শ্বশুর শাশুড়ির ঝুট ঝামেলা থাকবে না। কিন্তু কে শোনে কার কথা! রায়হানের এক কথা ওর বাবা-মাকে ছেড়ে ও অন্য কোথাও থাকবে না।
ছয় মাস আগের কথা, বড় বোন নিশাতের পরামর্শে নাতাশা রায়হানকে একটি এডাল্ট অনলাইন ডেটিং এ প্রায় জোড় করেই যুক্ত করায়। রায়হান একেবারেই চাচ্ছিল না। কিন্তু নাতাশা বলে,
-জাস্ট ফর ফান রায়হান। আমারা দুজনেই একটু মজা করবো আর হাসবো।
কিন্তু নাতাশাকে তখন বিশ্বাস করাটাই ভুল হয়েছিলো রায়হানের। নাতাশা সেই কনভারসেশন বোনের পরামর্শে চতুরতার সাথে রায়হানের মোবাইল থেকে স্ক্রিনশট নেয়, তারপর প্রিন্ট করে সেগুলো দিয়ে কেইস ফাইল করবে ভেবেছিলো। যাতে কেইস সহজ হয় এবং আত্মীয় স্বজনেরাও রায়হানকেই দোষ দেয়।কিন্তু আজ যখন লইয়ারের চেম্বারে আসে তখন নাতাশা কিছুতেই রায়হানের বিরুদ্ধে আগে থেকে সাজিয়ে রাখা মিথ্যাটি বলতে পারেনি।
রাতের খাবার না খেয়েই নাতাশা মন খারাপ করে রুমে শুয়ে আছে। ওর মা বোন দুজনেই ওর উপর ভীষণ খেপে আছে বোকার মত এতো প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও সেগুলো ব্যবহার করেনি বলে। কেউ ওর সাথে কথা বলছে না। হঠাৎ নাতাশার বাবা ওর রুমে প্রবেশ করলো। বাবাকে দেখে নাতাশার খুব মায়া হয়। তিনি এই বাড়ির ক্ষমতাহীন একজন মানুষ, যার কথার কোন মূল্য নেই। সব সিদ্ধান্ত নাতাশার মা নেয়। তবে বাবার সাথে গল্প করলে নাতাশার মন ভালো হয়ে যায়। বাবা ম্যজিক জানে। বাবা গল্পে গল্পে বলল,
-তোর শ্বশুর শাশুড়ি কি তোকে কোন কষ্ট দেয়?
নাতাশা বলে,
-মাথা খারাপ, ওনারা খুবই শান্তশিষ্ট। শুধু ও বাড়িতে প্রাইভেসি নেই।
বাবা তারপর আবার জিজ্ঞেস করে,
-রায়হান কি আলাদা বাসা না নেয়া ছাড়া অন্য কোন কষ্ট দেয়?
বাবার এই প্রশ্নের কোন সন্তোষজনক উত্তর খুঁজে পেলো না নাতাশা ।
বাবা তখন বলল,
সামান্য কিছু ত্রুটি থাকলে সেটির সাথে এডজাস্ট যদি করে নিতে পারিস মা, দেখবি জীবন অনেক সুন্দর হবে।
নাতাশার সারা রাত ঘুম নেই। ভাবছে আসলেই তো রায়হানদের বাড়িতে মেজর কোন সমস্যা নেই। শুধুমাত্র নাতাশা যখন একটু খোলা মেলা কাপড় পরে বাইরে যায় তখন ওর শাশুড়ি আড় চোখে তাকায়, যেটা নাতাশার পছন্দ নয়। হয়তো কৌতূহল বসতই তাকায়। তবে কোন কমপ্লেইন করেনি কোনদিন। এইটুকু সমস্যার সাথে তো এডজাস্ট করাই যায়।
নাতাশা সকাল হতে না হতেই ব্যাগ নিয়ে রওনা হলো নিজের সংসারের উদ্দেশ্যে। ওর মা বোন তো পারলে ওকে টেনে ঘরে উঠায়। কিন্তু নাতাশা বলল,
-মা, আমাকে আমার মত থাকতে দাও। আমি ডিভোর্স চাই না।
এই বলে সোজা বেরিয়ে পড়লো। ওর মা আর বোন হা হয়ে তাকিয়ে রইল নাতাশার পায়ে চলা পথের দিকে।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জানুয়ারি, ২০২২ রাত ১০:৩০