‘এমন দিনে তারে বলা যায়
এমন ঘনঘোর বরিষায়।‘
অন্যসময় হলে ঘরের ভিতরে বসে এই পঙক্তিগুলো আওড়াতে কতই না ভালো লাগতো। কিন্তু সাঝসকালে জানালার ফাঁক দিয়ে তাকাতেই মুখ দিয়ে বেড়িয়ে আসে-
এমন দিনে কেন আসে মন, এমন আঁধার মাখা বর্ষণ, এমন দিনে কি মন খোলা যায়?
এমন মেঘস্বরে বাদল ঝরঝরে
তপনহীন বিশ্রী তমশায়!
রবি ঠাকুরের কবিতাটির এহেন প্যারডি করতে পেরে আমি একদম খুশি নই। যেমন খুশি নই জানালার বাইরে ঝমাঝম বৃষ্টির ঝনঝনানিতেও। কিন্তু হায়, প্রকৃতির যাতনামাখা বর্ষণে মেঘভরা আকাশে মেঘগুলো যেন শকুন হয়ে ঘুরে ফিরছে। আমরা যখনি বের হবো তখনি হয়ত হামলে পড়বে আমাদের উপর। জলের ছোঁয়ায় ছিঁড়েখুঁড়ে খাবে আমাদের পরিকল্পনা। কি লেখা আছে কপালে কে জানে। সিলেটে আমাদের দ্বিতীয় দিনের শুরু এভাবেই।
হোটেলের রুমে বসে রিমোট চেপে টিভি চ্যানেলগুলো বদলাচ্ছি আর খানিক বাদে বাদে জানালা দিয়ে উঁকি। আকাশমুখি চোখ যেন বলতে চায়- এবার থামো। আরও খারাপ খবর হচ্ছে স্মিতা দিব্যি ঘুমিয়ে যাচ্ছে। ও হ্যাঁ, এমন দিনে নাক ডেকে ঘুমানোও খুব ভালো একটা কাজ। কিন্তু আমরা ঘুমাতে এসেছি না ঘুরতে এসেছি-এই প্রশ্নের উত্তর কে দিবে? উত্তর দিবে হয়ত ভবিতব্য- যা হবে বা হতে চলেছে তাকেই মেনে নিতে প্রস্তুত ছিলাম। আফসোসের ব্যাপার হচ্ছে যে ৮ টার দিকে আমাদের বেড়িয়ে পরার কথা ছিল। গন্তব্য বিছানাকান্দি। ওদিকে টিপু ফোন দিচ্ছে না। একটা অস্বস্তিকর সময় কাটাচ্ছিলাম যেন। ৮ টা পেরিয়ে ৮.৩০। ফোন দিতে চাচ্ছিলাম টিপুকে। যেই মনে হল ফোন দেই সেই ফোন বেজে উঠলো। স্বাভাবিকভাবেই ফোনের ওপ্রান্ত থেকে টিপুর নিরুত্তাপ কণ্ঠ। আমারও নিরুত্তাপ জবাব। প্রকৃতির ছেলেখেলা আমাদের স্বাদ আহ্লাদের চোদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করে ছাড়ছে। সময়ের কাছে নালিশ দিলাম। সময়েই যেন এর একটা বিহিত করে। কিন্তু এইদিন আমাদের কাহিনীর চিত্রনাট্যটা হয়ত একজন ব্যর্থ চিত্রনাট্যকার লিখছিলেন। তাইতো যখন সময় সায় দিলো তখন নিয়তি আর কর্মফল এসে বাঁধা দিবে কেন? ব্যাপারটা পরিস্কার করছি। গতরাতে ‘পাঁচভাই হোটেল’ এ খাওয়া হেব্বি ডিনারটা এমন রকম হেব্বি ছিল যে তার ঝোল পিচকারি হয়ে নোংরা করছে পাকস্থলী! ১০ টায় আকাশ অনেকটা পরিস্কার হয়েই গিয়েছিল। স্মিতাও তৈরি হয়ে নিচ্ছিল। আশার প্রদীপ জ্বলে ওঠতেই পাকস্থলীতে গুড়গুড় গুড়ুম গুডুম! লইট্টা মাছের শুঁটকীর ঝোল কোন জনমের শাস্তি দিচ্ছে কে জানে? টিপুকে আশাহত করে আজকের দিনের প্ল্যানটা আরও ঘণ্টাখানেক পেছালাম। বৃষ্টিও এই করুণ অবস্থা দেখে যেন মুচকি মুচকি হাসছিল। দুপুর ১২ টা। নিরাশ বদনে হোটেলে বসে বসে হিসাব মিলাচ্ছি। আজকের দিনটা কি তাহলে পুরোই মাটি? শরীরের অবস্থা কিছুটা ভালো মনে হওয়ায় স্মিতাকে নিয়ে ইস্কনে চলে গেলাম। সকালে কিছু খাইনি। পেটের অবস্থা খারাপ হলেও নাকমুখে কিছু তো দেওয়া লাগে। আর সেই সাথে টিপুর সাথে বসে কি করা যায় সেই নিয়ে আলোচনা? টিপুর মুখটা দেখার মতো ছিল না। আমরাও তাকাতে পারছিলাম না ওর দিকে। বেচারা গতরাত অনেক পরিকল্পনা করে ফেলেছিল। কোথায় নৌকা নিতে হবে, কতটুকু রাস্তা হেঁটে যাওয়া যাবে। বিছানাকান্দির পথে আরও ৩/৪ টি জায়গা রয়েছে। সেগুলোর খবরাখবর নেওয়া থেকে শুরু করে দলভারি করার জন্য বেশ কয়েকজনের সাথে কথাও বলে ফেলেছিল। টিপুর প্রতি পাঠকদের আরও একটু করুণা বাড়ানোর জন্য ওর আরও কিছু বৃত্তান্ত দেওয়া উচিত বৈকি। কিছুদিন আগেই ৮/৯ জনের একদল নিয়ে আমাদের টিপু কেওকারাডং পাহাড় জয় করে এসেছে। সামনে লক্ষ্য বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পাহাড়গুলোর সবগুলোতে তার পদচিহ্ন ছেড়ে আসা। সাথে সাথে তার এক গোপন অভিলাশের কথাও সে বলতে দ্বিধা করেনি। পাহাড় সবাই আরোহণ করে। কিন্তু তাতে ব্যতিক্রম কি? সেই ব্যতিক্রমি কিছুর জন্যই আমাদের টিপু তার শরীর থেকে নিঃসৃত ইউরিন ছেড়ে আসতে চায় ঐ পাহাড়গুলোতে। অভিলাশটা একই সাথে মজার এবং নিঃসন্দেহে ব্যতিক্রমি। যখনি টিপুর এই ইচ্ছের কথা মনে পড়ে আমি অদ্ভুত রকমের মজা পাই। খাবার টেবিলে টিপুর মুখখানা দেখে যদিও একদম ভালো লাগছিল না। ছেলেটা গত কয়েকদিন ধরে সর্দি জ্বরেও ভুগছে । দুঃসাহসী এক মাউন্টেইনার আমাদের এই দুই শৌখিন ভ্রমণকারীদের নিয়ে যেন পড়েছে এক বিপাকে। অর্ধেক প্রকৃতি আর আর অর্ধেক নিজেদের কাঁধে দোষ চাপিয়ে কথা বাড়াচ্ছিলাম। খাওয়া শেষ করার আগেই টিপু একটা প্রস্তাব রাখল। দুপুর ২ টা বাজতে তখনো বাকি। একটাদিন নষ্ট না করে বরং জাফলং-এ গেলে কেমন হয়? টিপুর কথা শুনে একটু ভড়কে গেলাম। যতদূর জানি জাফলং এ যাওয়ার প্ল্যান করলে পুরো একটা দিনের কথা চিন্তা করেই করতে হয়। যেতে ২ ঘণ্টা আসতে ২ ঘণ্টা। বাকিটা ঘুরোঘুরি। জিজ্ঞেস করলাম, সম্ভব? টিপু অভয় দিল। যেটা হবে সেটা হল শুধু জাফলং ঘুরে দেখে চলে আসা। সন্ধার আগেআগে আমরা রওনা দিয়ে দিবো। এই জাফলং যাওয়ার পথেই লালাখাল, শ্রীপুর উদ্যান, জৈন্তারাজার রাজবাড়ি, তামাবিল সীমান্ত এলাকা, খাসিয়াপল্লীসহ আরও কত জায়গা ছিল ঘোরার জন্য। আফসোস করারও সাহস হচ্ছিলো না কারন যেতেই যে পারছি তাইবা কম কি। আধার ঘন এই দিনে এই যাত্রা আমাদের জন্য আরও কি অপেক্ষা করে নিয়ে আছে তাই ছিল দেখার বাকি।
একটা বিষয় আমরা পরিস্কার ছিলাম যে দৌড়াদৌড়ি করে ঘুরে আসতে হবে। সাথে কপাল খারাপ থাকলে বৃষ্টির উপদ্রোপ তো থাকবেই। তাও আশার পালে নিভু নিভু শলতে জ্বালিয়ে দুপুরের খাওয়া শেষ করেই বেড়িয়ে পরলাম। আমাদের হোটেলটির খুব কাছ থেকেই জাফলং- এর উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া বাসগুলো ছাড়ে। দেখতে অনেকটা ঢাকার রাস্তায় চলা ৯ নম্বর বাসগুলোর মতো। বসার জায়গা এতই ছোট যে আমরা দুই বিশাল আকৃতির টোনাটুনি কোনরকমে চেপে আছি। সত্যি বলতে এইসব একদমই খারাপ লাগছিল না। অলস একটা দিন বসে না থেকে এত দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে এভাবে বেড়িয়ে পড়লাম ভেবে বেশ ভালোই লাগছিল। বেশ সুন্দর রাস্তা। বাসভ্রমণটাও খারাপ লাগছিল না। টিপু কানে হ্যাডফোন চেপে গান শুনছিল আর আমরা দুই কপোতকপোতী বাইরের দিকে তাকিয়ে ইতিউতি মারছিলাম আর প্রকৃতির বিস্ময় দেখছিলাম। ‘বিস্ময়’ জিনিসটা সম্ভবত মানুষকে তরুণ করে তোলে। আমরা যখন কোন কিছুতেই আর ‘বিস্মিত’ হইনা তখন বোধকরি আমরা বুড়িয়ে যাই। বিস্মিত হওয়ার রকমফের হতে পারে। আমি যেমন নুয়ে পরা একটা গাছ দেখে বিস্মিত হই, স্মিতা তা হয় না। তার বিস্ময় থাকে এই ঘনবর্ষায় জলাশয়ে ভেসে ওঠা ফুটন্ত শাপলায়। আমিও শাপলা দেখি, এর রঙ আমাকে টানে। কিন্তু বিস্মিত হই না। নুয়ে পরা একটা বিশাল গাছের একসময়ের প্রবল প্রতাপ ও আভিজাত্যের কথা ভেবে আমি বিস্মিত হই। এই গাছের নিচে হয়ত কত কালের, কত লোকের, কত ঘামের, কত ইতিহাসের বিস্মৃত স্মৃতি রয়েছে। গাছটিকে প্রশ্ন করতে ইচ্ছা করে। আবার গাছটির এই নুয়ে পরা দেখেও ব্যাথিত হই। বিমূর্তের লোভ বোধহয় আমার বেশিই। সেই বিমূর্ত ভাবনা ছেড়ে এবার একটি মূর্তমান আতংকের সামনে দাড়িয়ে আমরা! জাফলং এ যাবার পথ বেশ ভালো হলেও শেষদিকের ১৫-২০ মিনিটের পথটা জঘন্য। হা, এই ‘জঘন্য’ বিশেষণ যুক্ত হত না যদি কিনা গত কয়েকদিন বৃষ্টি না হত। বৃষ্টি আরও যেনতেন করে ছেড়েছে পথটিকে। তামাবিল সংলগ্ন রাস্তাটিতে চোখের অদূরে মেঘালয়ের পাহাড়। ঐ দূর সুন্দরে চোখ যায় আর অন্যদিকে আমাদের গাড়ি যেন গরুর গাড়ির মতো ঝাঁকি দেয়। ঝাঁকি খাবো না সুন্দর দেখবো ঠিক করতে পারছিলাম না। আর চারিদিকে মেঘময় এক অন্ধকার পরিবেশ। প্রকৃতি আমাদের কিছু দিতে চাচ্ছে না বুঝি, কিন্তু আমরাও যে জোর করে নেওয়ার ধান্দায় চলে এসেছি। খানাখন্দের এই রাস্তায় দারুন এক বিপত্তি বাঁধল যখন আমাদের বাসটি বড় একটি গর্তের নিচে রাখা পাথরে আটকে গেলো। জাফলং এ যাওয়া সবারই জানার কথা সেখানকার ক্রাশার কোম্পানিগুলোর কথা। বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করার জন্য ছোটবড় পাথর ভাঙ্গার এ যেন এক স্বর্গস্থান। দেশের সর্বত্র বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হওয়া পাথর এখান থেকেই ভাঙ্গা হয়। রাস্তার খানাখন্দগুলো আটকানোর জন্যও পাথর ফেলা হয়েছে কিছু কিছু জায়গায়। সেগুলোরই একটি আটকালো আমাদের বাসের নিচে। উপায়ান্তর না দেখে পুরুষ যাত্রীরা নিচে নেমে আসলাম। ২০ মিনিটের প্রচেষ্টা শেষে ঐ পাথর সরানো গেলো আর আমরাও হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। ২ ঘণ্টার জার্নি গিয়ে শেষ হল আড়াই ঘণ্টায়।
জাফলং-এ সেই ছোটবেলায় একবার এসেছিলাম পরিবারের সবার সাথে। ঝাপসা ঝাপসা স্মৃতি চোখে লেগে আছে। সেবার ছিল রৌদ্রোজ্জ্বল ও বেশ গরম আবহাওয়া। আর এবার পুরোই উল্টো। অভিজ্ঞতাটাও তাই। বিকেল সাড়ে ৪ টার মতো বাজে। এই অফ সিজনে আমরা যেন এক অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি। রোজার মাসে জাফলং এর বাজারে যে কয়টা দোকানপাট খোলা ছিল তাদের সবাই যেন আমাদের দেখে এলিয়েন দেখছে! অটো দিয়ে বাজার থেকে আরেকটু ভিতরে গিয়ে জিরো পয়েন্ট যাবার রাস্তা। মানে বাংলাদেশ-ভারত এর শেষ সীমানা। যেখানে বাংলাদেশের পিয়াইন নদী আর ভারতের ডাউকি শহরে এসে মিলেছে। সীমান্তের এই পাড়ে নদীর নাম এক আর ঐ পাড়ে আরেক। কি বিচিত্র রীতিনীতির মাঝে প্রকৃতির বিচ্ছেদ! প্রকৃতি কি আর তা বোঝে? সব বোঝা, সব জ্ঞান, সব শিক্ষা এই মর্ত্যমানবের। সে আপনমনে ভাগ করে নিয়েছে সম্পর্কের সংজ্ঞা আর লেনদেন। থই থই জলরাশি আর আশেপাশে পর্যটক বলতে আমরা। একটা নৌকা ঠিক করে নিলাম জিরো পয়েন্ট সংলগ্ন জায়গাটা ঘুরিয়ে নিয়ে আসবে। সাথে যতটুক কাছাকাছি যাওয়া যায়। আমাদের খরচ করতে হচ্ছে ১০০ টাকা। পানি না থাকলে এই জায়গাটা নাকি হেটেই চলে যাওয়া যেত। যাক তাও তো জাফলং এসে এর চারপাশটা ঘুরে যাচ্ছি। দূরেই পাহাড়ের উপর ছোটছোট বসতি। অচেনা ঐ বসতির লোকদের সাথে একদিন কাটিয়ে আসলে নিশ্চয় মন্দ হত না। জানা যেত তাদের জীবনপ্রবাহ, হালচাল, সংস্কৃতি ইত্যাদি। ডাউকি নদীর উপর দিয়ে বয়ে চলা ব্রিজটাতেও যদি যাওয়া যেত? স্মিতার অতৃপ্তি আর আফসোসের যেন শেষ নেই। ওদিন বিজিবির কর্মরত সেনারা ছুটিতে ছিলেন। তাই ঝুঁকি নিয়ে জিরো পয়েন্টের একদম কাছাকাছি যাওয়ার সুযোগ ছিল না। বালু আর পাথরের সমাবেশে উচু হয়ে থাকা একটি জায়গায় নামলাম আমরা। এখানেই অনেকটা দূরে দাড়িয়ে পাহাড়, নদী, মেঘ ও পাহাড়ের গায়ে ঝরে পরা ঝরনার সৌন্দর্য দেখতে থাকলাম। আমাদের ক্যামেরাতেও ক্লিক পড়লো বেশ কয়েকটা। স্মিতা বেশ উপভোগ করছিল সময়টা। আর টিপুর মাথা থেকে বের হয়ে আসা ইউনিক সব ছবি তোলার আইডিয়া দেখে আমিও মুগ্ধ। পাথরের মাঝে শুয়ে টিপুর তোলা ছবিটা এককথায় দারুণ। ক্যামেরাম্যান আমি, আইডিয়া টিপুর। ওদিকে সময়ের দিকেও চোখ ছিল। আমরা শহর থেকে আসা এই মানুষগুলো প্রকৃতিকে আর কতইবা সময় দিতে পারি।
এবার ফেরার পালা। একবুক আক্ষেপ আর আফসোস নিয়ে স্মিতার সে কি হাহুতাশ। ঐ দূরে মেঘালয়ের পাহাড়টায় কেন যেতে পারছে না সে? কেনইবা ঐ মেঘের আস্তরণ ছুঁতে পারছেনা? সব পাহাড় আর ঝর্ণা কেন ভারতে? আমি আর টিপু ওকে সমবেদনা জানাচ্ছিলাম। তবে বেচারির মনের ভিতর ঘোরাঘুরির পোকাটা ঢুকিয়ে দিতে পেরেছি এই আমার সার্থকতা। আশা করা যায় ওর উৎসাহে আগামী কয়েকবছর আমার পুরো বাংলাদেশ ঘোরা হয়ে যাবে। ফেরার বাস ছাড়ল ৬ টায়। বাস খানিক এগিয়ে ইফতারের জন্য বিরতি নিল ২০ মিনিট। আমরাও হালকা পাতলা কিছু খেয়ে নিলাম। আসার সময় ভয়টা ছিল আমাদের বাস আর তাতে উপচে পরা যাত্রী। সেই ১৫-২০ মিনিটের রোলার কোস্টার রাইড তো আছেই। যেন কোনরকমে বাস থেকে নামলেই বাঁচি। চরম ধৈর্য্য আর সহ্যক্ষমতার পরীক্ষা দিয়ে ২ ঘণ্টার জার্নি ৩ ঘণ্টা লাগিয়ে রাত ৯ টায় সিলেট শহরে ফিরে এলাম।৯ টা যখন বেজেই গেলো তখন আর হোটেলে ফিরছি না। টিপুর মুখে ‘উন্দাল’ রেস্টুরেন্টের বিরিয়ানির কথা শুনেছিলাম। পরিশ্রান্ত, ক্লান্তিময় ভ্রমণ শেষে তাই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ‘উন্দাল’ এ একটু আয়েশেই বসে ডিনারটা সেরে নেওয়ার ইচ্ছা। ছিমছাম গোছানো রেস্টুরেন্ট-এ বসে মিউজিক প্লেয়ারের মায়াভরা কণ্ঠে ঝিমানো ক্লান্ত শরীরে অন্নের চাহিদা। আমরা ৩ জন ঠিক করলাম হাইদ্রাবাদী বিরিয়ানিটা একটু চেখে দেখবো। খাদ্যের পরিবেশনা সুন্দর কিন্তু বিরিয়ানিটা আহামরি বিশেষ কিছু মনে হল না। ঠিক হল আগামীদিন যাচ্ছি মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত দেখতে। বৃষ্টির সাথে খেলে খেলে এখন যেন সিলেটের বৃষ্টি সয়ে গেছে আমাদের। কোন আশঙ্কা নেই। যাবো তো যাবোই। সারাদিনের ক্লান্তিমাখা চোখ বিছানায় যেতে সময়ক্ষেপন করলো না। আগামীদিন আমরা বেরচ্ছি ঠিক সকাল ৮ টায়। প্রত্যাশা, আকাঙ্খা আর বাস্তবতা যোগসূত্র হয়ে আশাকরি আমাদের আর নিরাশ করবে না। সেই মনোকামনায় সিলেটে আমাদের দ্বিতীয় দিনের সমাপ্তি।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৩:৩৩