প্লেয়িং ফর চেনজ এর ফাউনডার মার্ক জন্সন রাস্তায় ঘুরে ঘুরে গান গেয়ে ভিক্ষে ( দুঃখিত) করা রজার রিডলেকে জিজ্ঞেস করেছিল ‘ আচ্ছা রজার এত অসাধারণ বাতিক্রম কণ্ঠ নিয়ে তুই রাস্তায় ঘুরে গান করিস কেন?’ রজার উত্তরে বলেছিল ‘ আমি পাগলা মানুষ, এভাবে গান করে ফুর্তি পেট দুটোই চালাই’।
২০০২ সালে প্লেয়িং ফর চেনজ এর যাত্রা শুরু হয় সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার মার্ক জন্সন এর হাত ধরে। মিউজিক কি না পারে? মানুসের মনের দুঃখকে আরও বাড়াতে পারে, কমাতেও পারে, হাসাতে পারে কাঁদাতেও পারে। গানের কোনও ভাষা নেই, গান নিজেই একটি সার্বজনীন ভাষা। সেনেগালের বাবা মালের গানের একটা অর্থ না বুঝেও কেন একজন বাঙালি গভীর নির্জন রাতে বিমুঘধ হয়ে সে গান শুনে উদাস হয়। কেনইবা মুঘধ হয়ে নিজের মতো করে তার একটা অর্থও তৈরি করে নেয়। আর কেনইবা উর্দু খুবই যত সামান্য বুঝে বা কিছুই না বুঝে নুস্রাত ফতেহ আলির ‘এ যো হালকা হালকা সুরুর হ্যাঁয়’ কিংবা ‘ চাপ তিলাক’ দিনের পর দিন শুনে শুনে পুরো গানটা মনে গেঁথে ফেলে কেউ। এ বড়ই অদ্ভুত আচরণ। এ আচরনের কোনই কি ব্যাখ্যা নেই? এর কি কোনই মানে নেই? আমার তো মনে হয় সেটাই যুতসই ব্যাখ্যা ‘ মিউজিক প্রচলিত ভাষার বেড়াজালে বন্দি থাকেনা’। যে মিউজিকের এতো শক্তি, এতো মানুষকে প্রতিদিন নাড়া দিয়ে যাচ্ছে, যা কোনও ভাষার গণ্ডিতে আবদ্ধ নয় সে জিনিস দিয়ে সারা পৃথিবীর মানুষকে এক সুতায় বাঁধা যাবেনা? কেন সম্ভব নয়? শুধু মাত্র মিউজিকই পারে সকল রাজনৈতিক, জাতিগত, বাক্তিগত, ধর্মীও বাঁধা মুক্ত হয়ে পুরো পৃথিবীর মানুষকে এক আকাশের নিচে দাঁড় করিয়ে এক নতুন ভালবাসার অনুভুতি জাগিয়ে দিতে। বিষয়টা হয়ত এক কথায় বলে ফেললাম। আসলে সেটা অনেক কঠিন একটা কাজ। মিউজিক দিয়ে সবাইকে এক কাতারে আনতে চাইলেই এতো সহজে সেটা হয়ে যাবে মনে করাটা হয়তো বোকামি। সব পরিবর্তনই ভীষণ ঝামেলাপূর্ণ, কঠিন এবং ঝুঁকিপূর্ণ বটে। তবে এতো ঝামেলাকে মাথায় নেওয়ার জন্যও কিছু পাগল মুখিয়ে থাকে যুগে যুগে। এরা সেই মহান পাগল যারা যুগে যুগে জন্ম নেয়। যীশু, মুহম্মদ, গৌতম, চৈতন্য এরা পাগল বই কিবা ছিল।পাগলও নাকি নিজের ভালো বুঝে কিন্তু এরা নিজেদের সর্বস্ব বিলিয়ে দিয়েছেন; সুখ, শান্তি এমনকি নিজের জীবন পর্যন্ত শুধু মাত্র একটা পরিবর্তনের জন্য। এমন সুন্দর পাগল আর পাগলামোই পৃথিবীকে এখনো বাঁচিয়ে রেখেছে।তাইত বলে ‘পাগলের সঙ্গে যাবি পাগল হবি বুঝবি শেষে’।
প্লেয়িং ফর চেনজ মুভমেন্ট শুরু হয়েছে হয়তো কিছু পাগলের হাত ধরেই। বিশাল সব প্রোজেক্ট নিয়ে রাতদিন সারা পৃথিবী জুড়ে কাজ করে যাচ্ছে এই গ্রুপটি। পুরনো আলোচিত গান গুলো পৃথিবীর নানা অংশের শিল্পিদের দিয়ে নতুন করে গাইয়ে ভিডিও করছে। নানা দেশের নানা বিচিত্রের ইন্সট্রুমেনট ব্যাবহার করে অসাধারন ফিউশন তৈরি হচ্ছে। ‘স্ট্যান্ড বাই মি’ গানটার একটা অংশ যখন ঘানার কোন শিল্পী গাচ্ছে আর একটা অংশ হয়ত গাচ্ছে মাক্সিকোর কোনও এক শিল্পী আবার হয়ত অন্য আর এক অংশ গাচ্ছে আমেরিকার রাস্তায় গান গেয়ে বেড়ানো কোনও এক শিল্পী। সারা পৃথিবী জুড়ে একটি গান ঘুরে বেরাচ্ছে। গানের আবেদন একই আছে কিন্তু প্রকাশ ভঙ্গি হচ্ছে ভিন্ন। চেহারায় অমিল, উচ্চরনে অমিল, ধর্মে অমিল, জাতে অমিল তারপরও আবেগে কি অদ্ভুত মিল। কি অসাধারণ আবেগ দিয়ে সবাই গানটা গাচ্ছে। এই মিলটাই তো পৃথিবীর এই মুহূর্তে ভীষণ জরুরী। এরা নেপাল , ঘানা , সাউথ আফ্রিকাতে মিউজিক স্কুল এবং পৃথিবীর বেশ কিছু জায়গায় মিউজিক প্রোগ্রাম চালাচ্ছে। পিছিয়ে পড়া, দরিদ্র একটা শিশুর দলকে গানে গানে পৃথিবীর মানুষকে এক করার পরিবর্তনের মন্ত্র দিয়ে বড় করছে।
জন লেনন ‘ইমাজিন’ দিয়ে পৃথিবীর মানুষকে অনেক বড় একটা মেসেজ দিয়ে ছিল ।মানুষের চিন্তার জায়গাটাতে অন্তত কিছুটাতো উস্কিয়ে দিয়েছিল গানটা। আজ এই গানটি কতো শত বড় বড় প্রোগ্রামে কতো হাজার মেগাস্টার শিল্পী যে গাচ্ছে কিন্তু গানটার কোনও প্রভাব পৃথিবীতে সামান্যও পড়তে দেখা গেলনা।ইমাজিন নিয়ে একটা সামাজিক আন্দোলনও তো হতে পারত।এ কেই বলে ‘ প্রানে গান নেই মিছে তাই রবি ঠাকুর মূর্তি গড়া’ । আসলে ‘ইমাজিন’ নিয়ে মাতামাতি করেই মানুষ মজা বেশি পায়। আহা উহু করার মধ্যেও মনে হয় আত্মতুষ্টি আছে। প্লেয়িং ফর চেনজ হয়ত এ রকম দায় সারা আহা উহু করে পার পেতে চায়নি , তাই স্কুলে গানের মানুষ তৈরি করে মিউজিকের মাধ্যমে পৃথিবীর একটা পসিটিভ চেনজ করার প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। আমি নিজেও শিওর না , এ ভাবে আসলেই বড় কোনও পরিবর্তন সম্ভব কি না। তবে আশাবাদী হতে দোষতো নেই। কিছুতো একটা হবে। সেটা যতো সামান্যই হোক। অনেকেই জানে না বাংলাদেশেও তারা গত বছর অনাড়ম্বর ভাবে কার্যক্রম শুরু করেছে মিরপুরে একটা পরিক্ষামুলুক মিউজিক প্রোগ্রাম শুরু করার মাধ্যমে।শুভ কামনা ফর ‘প্লেয়িং ফর চেনজ’। গান গানে জয় হোক মানবতার।
‘জানিনা এ পৃথিবীর ঘাতকরা গান শোনে কিনা
জানিনা লালন শুনে ভাসে কেন বুকের আঙ্গিনা
জানিনা বিচার হলে কেন গান হয়না শুনানি
উত্তর আসবে না, তুমি আসবেই আমি জানি’
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১১:৩৭